শিরোনাম
হঠাৎ খলিল (পর্ব- ১২)
প্রকাশ : ০৯ জানুয়ারি ২০১৭, ১৯:৪৫
হঠাৎ খলিল  (পর্ব- ১২)
পলাশ মাহবুব
প্রিন্ট অ-অ+

নুপূর সিরিয়াল দেখছে। তার কানে হেডফোন। খলিলের টিভি কার্ডের বুদ্ধিটা কাজে লেগেছে। টিভি বাদ। নিজের কম্পিউটারেই সিরিয়াল দেখছে নুপূর। হেডফোন থাকায় আশপাশের কেউ শব্দ টের পাচ্ছে না। মোটামুটি ঝামেলাবিহীন। তবে ঝুঁকিটা হাই।

 

অফিসের টিভিতে সিরিয়াল দেখাটা ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখলেও কার্ড লাগিয়ে কম্পিউটারে টিভি দেখা সে আওতায় পড়বে না।ধরা পড়লে কি হবে কে জানে?

 

নুপূর কম্পিটারে সিরিয়াল দেখার বিষয়টি ভেবেছে, পরেরটুকু এখনো ভাবেনি। তবে হাতে রিমোট রাখছে সবসময়, যাতে দ্রুততার সাথে ব্যবস্থা নেয়া যায়।

 

আজকের সিরিয়ালটা নতুন। এটায় কোনও শাশুড়ি দেখা যাচ্ছে না। কিছুক্ষণ পরপর দুই তরুণীর গরম চোখ ভেসে আসছে পর্দায়। আর মাঝে মাঝে এক তরুণের মাথানিচু করা চেহারা। মনে হয় ত্রিভুজ প্রেম। প্রেমিক তরুণ হাতেনাতে ধরা খাইছে। এখন পড়ছে দুই মেয়ের মাঝখানে। তার শ্যাম রাখি না কুল রাখি অবস্থা।

 

উত্তেজনায় নুপূর দাঁত দিয়ে নখ কাটে। তার পেছনে এসে দাঁড়ায় খলিল। নুপুর ভাবে, বস এসেছে। সাথে সাথে রিমোটে চাপ। টিভি হয়ে যায় কম্পিউটার।

তাকিয়ে দেখে পেছনে ভাঙা চেহারায় খলিল দাঁড়িয়ে।

 

হাঁফ ছেড়ে বাঁচে নুপূর, ওহ আপনি! আমি ভাবলাম . . .

 

আপনি ভাবছেন, ম্যানেজার স্যার আসছে। চোরের মন সবসময় পুলিশ পুলিশ। যাই হোক, ভয়ের কিছু নাই, নিশ্চিন্তে দেখেন। আমি আইসা পড়ছি। এখন আপনার হয়ে আমিই পাহারা দেবো।

 

খলিল কাঁশি দেবে। সাথে হাঁচিও।

 

আপনার তো করুণ অবস্থা। চোখ-মুখও শুকিয়ে গেছে। এই অবস্থা নিয়ে আপনাকে অফিসে আসতে বলেছে কে?

খলিল নুপূরের দিকে তাকায়, কে বলছে জানেন না? এক কথা কয়বার বলবো।

 

আরে বাবা, এমডি স্যার কি আপনাকে আধমরা হয়ে অফিসে আসতে বলছে? আগে তো জীবন, নাকি?

 

জীবন-মরণের কথা এমডি স্যার বলেন নাই। উনি বলছেন এরপর থিকা একদিনও অফিস কামাই দিলে চাকরি থাকবে না।

 

এখন আপনিই বলেন কোন ভরসায় আমি অফিস কামাই দেই? পাল্টা জানতে চায় খলিল।

 

তাহলে ছুটি নেন।

 

ছুটি তো শ্যাষ হইয়া গেছে।

 

বছর শেষ না হতেই ছুটি শেষ! ভালো তো।

 

খলিল হাসে।

 

আচ্ছা, নিজের চিন্তা না হয় আপনি করেন না, বুঝলাম। কিন্তু এই ভাইরাস নিয়ে অফিস এলে যে আমাদের সবার মধ্যে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়বে তার কি হবে?

 

প্রশ্নটা ভালো করছেন আপনি। কিন্তু এই জবাবটাও আমার কাছে নাই। জবাব পাইবেন এমডি স্যারের কাছে। আমি শুধু জানি ঝড়-জলোচ্ছ্বাস যা-ই হোক, আমারে অফিসে আসতে হবে। আর আপনার যদি এতই ভাইরাসের ভয় তাইলে আপনি এডভান্স দুইটা নাপা খাইয়া ফালান। আমার কাছে আছে, দেবো?

 

জ্বি না। থ্যাংক ইউ। ওইটা আপনার বেশি দরকার। ডাবল ডাবল খান। আপনি তো আবার সব অসুখেই নাপা খান। জ্বর হলেও নাপা, ডায়রিয়া হলেও।

 

সাথে কাশিটাও যোগ করেন। হাঁচিটা নতুন যোগ হইছে।

 

হাসবেন না তো খলিল ভাই। ভাল্লাগে না।

 

আপনার কি ভাল্লাগে কন। সেইটা করি।

 

কতবার বলেছি ডাক্তার দেখান। তা তো দেখাবেন না। নিজের জন্য না হোক অন্তত আমার জন্য তো দেখাতে পারেন।

 

নুপূরের কথা খলিলের মাঝে চাঞ্চল্য তৈরি করবে।কি বোঝাতে চাইছে নুপূর? তার জন্য হলেও ডাক্তার দেখাতে বলছে। এর মানে কি!

 

ডাক্তার দেখাইছি তো।

 

তাই? কি বললো ডাক্তার?

 

এখনো কিছু বলে নাই। টেস্টের রিপোর্ট পাইলে বলবে।

 

হুমম।

 

ডাক্তার দেখিয়ে লাভ হইছে কি জানেন? জ্বর-কাশির সাথে হাঁচিটা যোগ হইছে।

বড় করে একটা হাঁচি দেয় খলিল।

আলহামদুলিল্লাহ! হাসপাতালে যাওয়া মানে হইলো অনেক রোগের সাথে সাক্ষাত। দুই-একটা রোগ সাথে কইরা না নিয়া আসলে হাসপাতালের ইজ্জত থাকে না।

 

সব বিষয়ে ফান করবেন না তো খলিল ভাই। এখন থেকে ডাক্তার যেভাবে বলে যেভাবে চলবেন।

 

আচ্ছা ফান বাদ। আমি সিরিয়াস। এখন বলেন তো আপনার জন্য ডাক্তার দেখানোর কথা ক্যান কইলেন?

 

ওহ। বোঝেননি বিষয়টা?

 

খুইলা না বললে বুঝি কেমনে?

 

তাও অবশ্য কথা। শোনেন, আমাকে কার পাশে বসতে হয়? আপনার পাশে। তো পাশে বসে সারাক্ষণ খুক খুক কাশির এই অত্যাচার ভালো লাগে বলেন? মনে হয় হাসপাতালে ডিউটি করছি।

 

নুপূরের কথা শুনে খলিলের মুখ কালো হয়ে যায়। সে ভেবেছিলো কি, আর এই মেয়ে বললো কি।

 

দয়া করে আমার কানকে একটু শান্তি দেন খলিল ভাই। আর যদি তা না করেন তাহলে কোনও আওয়াজ করতে পারবেন না। আওয়াজ করলে একদম মিউট করে দেবো।

 

হাতের রিমোটটা খলিলের মুখের কাছে নিয়ে চাপ দেয় নুপূর।

 

খলিলের কাশি আসে। অনেক কষ্টে কাশি আটকায় সে। (চলবে)


বিবার্তা/মৌসুমী/হুমায়ুন

 

>>হঠাৎ খলিল (পর্ব- ১১)

 

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com