শিরোনাম
হঠাৎ খলিল (পর্ব- ১১)
প্রকাশ : ০২ জানুয়ারি ২০১৭, ১৭:৩৭
হঠাৎ খলিল  (পর্ব- ১১)
পলাশ মাহবুব
প্রিন্ট অ-অ+

দৈনিক ইদ্রিসের হাতে অনেকগুলো দৈনিক পত্রিকা। মুখ কালো করে ম্যানেজার স্যারের রুম থেকে বেরিয়েছে সে। মুখ কালোর কারণ ম্যানেজার স্যারের ঝাড়ি।

 

কড়া ঝাড়ি খেয়েছে ইদ্রিস। ভালোর জন্যই কাজটা করেছিল, ফল হলো উল্টো।

ম্যানেজার স্যার সারাদিন পেপার ঘাঁটাঘাটি করেন, কিন্তু মনমতো কাস্টমার পান না। জমিটাও তাই বেচা হইতেছে না।

 

ইদ্রিস বুদ্ধি করে নীলক্ষেত থেকে অনেকগুলো পুরনো পত্রিকা কিনে এনেছে। সবগুলোতে জমি কেনাবেচার খবর আছে। একটা না একটায় কাস্টমার লাগবোই।

 

পত্রিকা নিয়ে ফুরফুরে মেজাজেই ঢুকেছিল স্যারের রুমে, স্যার, আনছি।এইবার কাজ হইবোই।

 

ম্যানেজার স্যারের টেবিলের ওপর পত্রিকাগুলো রেখে ইদ্রিস বলে।

 

কি এগুলো? সোলায়মান সাহেব ভুরু কুঁচকে জানতে চান।

 

পুরানা পেপার স্যার।

 

পুরাতন পেপার! পুরতান পেপার দিয়ে কি হবে?

কাইল সন্ধ্যায় সের দরে কিনছি স্যার। প্রত্যেকটার মধ্যে জমি বেচা-কেনার খবর আছে। চেক কইরা দেখছি।

 

জমি বিক্রির খবর!  সোলায়মান সাহেব পেপারের স্তুপ থেকে একটা কাগজ হাতে নেন। উল্টে-পাল্টে দেখেন।

 

তোমাকে এসব করতে কে বলেছে ইদ্রিস?

না স্যার। কেউ কয় নাই। প্রত্যেক দিন আপনে পেপারে কাস্টমার খোঁজেন, কিন্তু মনমতো পান না। সেইজন্য আমি নিজেই বুদ্ধি কইরা কিনছি। অনেক পেপার আছে। একটা না একটা এবার লাগবোই।

 

সোলায়মান সাহেবের মেজাজ খারাপ হয়।

 

নিজেই বুদ্ধি কইরা কিনছি। তুমি যে একটা উজবুক সে কথা কি কেউ তোমাকে বলেনি এখনো? এক বছর আগের পুরাতন পেপার কিনে নিয়ে এসেছে। গর্দভ। এক বছর আগে যারা বিজ্ঞাপন দিয়েছে তারা কি আমার জমি কেনার জন্য বসে আছে? সরাও এসব আমার চোখের সামনে থেকে। ফাজিল!

 

ইদ্রিসের কাছে বিষয়টা পরিষ্কার হয় না। টেবিলে রাখা পেপারগুলো হাতে তুলে নেয় সে।

 

শোনো ইদ্রিস তামার কাজ হচ্ছে চা বানানো। সেটাই ভালোমতো বানাতে পারো না। অন্য বিষয়ে পণ্ডিতি করবে না। যাও চোখের সামনে থেকে।

 

মন খারাপ করে রুম থেকে বেরিয়ে যায় ইদ্রিস। খলিলও সে সময়ে অফিসে ঢোকে। খলিলের শরীরের অবস্থা গতকালের চেয়ে খারাপ। রাতে প্রলাপ বকার কথা সকালে মনির তাকে বলেছে। জ্বরের ঘোরে সে কি কি বলেছে তাও শুনিয়েছে।

সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর শরীরের যে খুব একটা উন্নতি হয়েছে তা না। কিন্তু অফিস কামাই দেয়ার সুযোগ নেই। জ্বর গেলে জ্বর আসবে, কিন্তু চাকরি ফিরে আসবে না। জ্বর নিয়েই তাই অফিসে এসেছে সে। এখন জ্বরটা কম, তবে দুর্বলতা সারা শরীরে।

 

অফিসে ঢোকার পথে মুখ-কালো দৈনিক ইদ্রিসের সাথে দেখা তার।

পেপার নিয়া মুখ কালো কইরা কই যাও ইদ্রিস। কোনও খারাপ খবর আছে নাকি পেপারে?

 

ডাস্টবিনে ফালাইতে যাই।

 

ডাস্টবিনে! ডাস্টবিনে ক্যান? খবর কি খুব বেশি খারাপ?

 

ইদ্রিস জবাব দেয় না। রাগে ওপরে থাকা পেপারের পাতা ছেড়ে।

 

ডাস্টবিনে না ফালাইয়া এক কাজ করো, কেজি দরে বেইচা দাও। সেটাই ভালো হবে। কিছু টাকা পাবে। খবর যতই খারাপ হোক কেজি প্রতি দশ টাকা পাবা। যারা পুরান কাগজ কেনে তাগো কাছে কাগজ ইম্পর্টেন্ট খবর না।

 

খলিল হাসির কথা বললেও ইদ্রিস হাসে না।

 

মানুষের জন্য উপকার করাই পাপ, বুঝলেন খলিল ভাই। আমি সেই পাপ করছি।

 

ক্যান কি হইছে? খুলে বলো।

 

ম্যানেজার স্যারের একটা জমি আছে আশুলিয়া না জানি গজারিয়ায়। অনেক দিন হইলো জমিডা বেচতে চায়। সারাদিন পেপারের মইধ্যে জমির কাস্টমার খোঁজে। পায় না। ভাবলাম মানুষটা বিপদে পড়ছে একটু উপকার করি। সেই নীলক্ষেত যাইয়া ওনার লাইগ্যা পুরান পেপার কিন্না আনছি। বিনিময়ে কি পাইছি জানেন? গলাধাক্কা।

 

গলাধাক্কার অভিনয় করে দেখায় ইদ্রিস। খলিল হাসে।

 

তা তুমি পুরান পেপার কিইনা আনছো কোন বিবেচনায়?

 

পেপারের আবার নতুন পুরান কি। সব পেপারেই খবর থাকে। আডভারটাইজ আছে দেইখ্যা ভাবছি কামে লাগবো।

 

এই কারণে ম্যানেজার স্যার অমানবিকভাবে তোমাকে গলাধাক্কা দিল?

সত্যি সত্যি দেয় নাই। বলছে আউট। কথা তো একই হইলো, নাকি? ভদ্রলোকের জন্য ওইটুকুই যথেষ্ট।

 

তা অবশ্য ঠিক। শোনো ইদ্রিস, তোমারে একটা কথা কই, কথাটা মনে রাখবা। এই দুনিয়ায় মানুষ হইলো গিয়া দু রকমের। একটা উপরের তলার মানুষ। আরেকটা হইতেছে নিচের তলার মানুষ। আমি তুমি হইতেছি নিচের তলার মানুষ। উপরের তলার মানুষেরা নিচের তলার মানুষগো উপকার নেয় না।  নিয়ম নাই।

 

তাই বইল্যা ম্যানেজার স্যার আমার ভুলডাই দেখল, মনটা বুঝল না? আমি তো ওনার ভালোর জন্যই আনছিলাম।

 

মন খারাপ কইরো না। তুমি মন থিকা উপকার করতে চাইছো সেইটাই হইল শান্তি। মনের শান্তি হইলো বড় শান্তি। এখন যাও সের দরে যেইভাবে কিনছো সেইভাবে সের দরে বেইচা দাও। কেজিতে দুই-তিন টাকা কম পাইবা অবশ্য। সেইটা বড় কথা না। উপকার করতে চাইছো সেইটাই বড়।

খলিলের কথা ইদ্রিস কতটুকু বুঝল তা বোঝা গেল না, তবে মাথা নাড়াল।

 

আর শোনো। গলাধাক্কার বিষয়টা মাথায় নিও না। গলা থাকলে ধাক্কা দুই-একটা লাগবোই। গলার কাজ শুধু কথা বলা না, মাঝে-সাঝে দুই-একটা ধাক্কা খাওয়াও গলার কাজ।

 

অনেকক্ষণ পরে ইদ্রিসের মুখে একটু হাসি দেখা যায়, আপনার শরীল কেমুন খলিল ভাই? ওইদিন তো এক্কেবারে হুইয়া পড়ছিলেন।

 

শোয়ার অবস্থাতেই আছি। শরীর বেশি ভালো না। অফিস আসছি চাকরি বাঁচাইতে। তবে সেদিন তোমার চায়ে কাজ হইছিলো। তোমার চায়ে জাদু আছে।

 

খলিলেল কথায় ইদ্রিসের ছোট হাসিটা বেশ বড় হয়।

আপনি এক কাম করেন। ডেস্কে গিয়া বসেন। আমি আপনের লাইগ্যা ফাইন কইরা একটা চা বানাইয়া আনতেছি। (চলবে)

 

বিবার্তা/মৌসুমী/হুমায়ুন

 

>>হঠাৎ খলিল (পর্ব- ১০)

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com