শিরোনাম
হঠাৎ খলিল (পর্ব- ১৯)
প্রকাশ : ১৮ মার্চ ২০১৭, ১৬:৩০
হঠাৎ খলিল (পর্ব- ১৯)
পলাশ মাহবুব
প্রিন্ট অ-অ+

খলিলের ‘প্রকল্প ভালো কাজ’ অব্যাহত আছে। তিন দিনে অনেকগুলো ভালো কাজ করে ফেলেছে।নিয়ত করেছে, প্রতিদিন অন্তত দুইটা ভালো কাজ করবে।

 

চতুর্থ দিনের ভালো কাজের শুরু সকাল সকাল।

 

মেসের সামনে।

 

তাদের মানবিক বাড়িওয়ালা আইয়ুব মোল্লাকে দিয়ে। মেস থেকে বের হওয়ার পথে দেখা। পান খাওয়া দাঁতের লাল সিগন্যাল দিয়ে সামনে দাঁড়ান আইয়ুব মোল্লা, কি মনির সাহেব, অফিসে যাইতাছেন বুঝি?

 

জ্বি।

 

ভালো, ভালো! আপনি এখনকার যুব সমাজের মতো না। একটা নিয়ম-শৃংখলার মইধ্যে আছেন। এখনকার ইয়ং পোলাপানের তো শৃংখলার সিস্টেম নাই।

 

খলিল কিছু বলে না।

 

তা আপনারে পাইয়া ভালোই হইলো। ওইদিনের আলাপের বিষয়ে তো কিছু জানাইলেন না আর।

 

কোন আলাপ চাচা? খলিল মনে করার চেষ্টা করে।

 

ওই যে সামান্য কিছু ভাড়া বাড়ানোর কথা বলছি। আপনার ইয়েস-নো জানানোর কথা। বোঝেনই তো চাইর দিকের নানামুখী চাপ। আমি মানবিক বইল্যা কাউরে চাপ দিতে পারি না। আমার অবস্থা তাই ডাইল খিচুরি।

 

খলিল বাড়িওয়ালার মুখের দিকে তাকায়।কী অবলীলায় মিথ্যা বলে যায় লোকটা!

 

আচ্ছা চাচা, এক বছরের মধ্যে দুইবার ভাড়া বাড়ানোটা কোন ধরনের মানবিক আচরণ? সবাই তো বছর শেষে ভাড়া বাড়ায়। আপনি এমনই মানবিক যে বছরে ভাড়া বাড়ান দুইবার। এইটা আপনি কেমন কথা বললেন।

 

বাড়িওয়ালার হাসিমুখ কালো হয়ে যায়।

 

অন্য বাড়িওয়ালারা একবারে যা বাড়ায় আমি সেইটা বাড়াই দুইবারে। এইটা কি আপনার মানবিক বিষয় মনে হয় না? আর আমারে যদি মানবিক মনে না-ই হয় তাইলে রাস্তা তো খোলা।

 

বাসা ছাড়ার কথা বলছেন তো? আপনার মতো বাড়িওয়ালাদের মুখে তো ওই একটা কথাই আছে। মানুষের দুর্বলতা নিয়া ব্যবসা করেন।

 

খলিল সাহেব, আপনি কিন্তু অহেতুক বাহাস করতেছেন। পোষাইলে থাকেন, না পোষাইলে যান গা।

 

হুমম, ছাড়ব। তবে তার আগে আমার এক বন্ধু আছে র‌্যাবে। তার সাথে একটু আলাপ করতে হবে। গ্যাস-বিদ্যুত-ওয়াসার নানামুখী চাপ আপনার ওপর। অথচ আমি জানি সবার সাথে আপনি একটা সিস্টেম কইরা নিছেন। বিল যা আসে তার অর্ধেকও তো দেন না। আর এই অজুহাতে ছয় মাস পরপর ভাড়া বাড়ান।

 

খলিলের কথায় বাড়িওয়ালা আইয়ুব মোল্লা ক্ষেপে যান, বানাইয়া কথা বললেই সেটা সত্য হয়ে যায় না। আমার বাড়ি নিয়া আমি যা ইচ্ছা করবো। এত কথা কওয়ার আপনি কে?

 

শোনেন চাচা, আপনার তো বয়স হইছে। হজও করছেন শুনছি। এইসব ছাড়েন। মানুষের গলায় পাড়া দিয়া টাকা নেন। সেই টাকায় বিল্ডিংয়ের তলা বাড়ান। কবরের মাপ কিন্তু সাড়ে তিন হাত। বিল্ডিং কিন্তু কবরে যাইবো না।

 

আমারে জ্ঞান দিয়েন না খলিল সাব। চুল আমার বাতাসে পাকে নাই। আপনার মতো ভাড়াটিয়ার সাথে কি করতে হবে সেইটা আমার জানা আছে।

 

তা তো অবশ্যই। চুল তো আপনার পাকছে খালি। সেই পাকনা চুল মাথা থিকা উঠানোর জন্য টেনশনের ব্যবস্থা করতেছি। ইয়াং জেনারেশনের সাথে আপনি বুড়া মিয়া মাস্তানি করবেন, তা তো হইবো না।

 

বাড়িওয়ালার হুমকি আমলে নেয় না খলিল।কথাও বাড়ায় না আর।

তবে খলিলের এই হঠাৎ পরিবর্তন এবং আচরণ বাড়িওয়ালাকে চিন্তায় ফেলে দেয়। ঘটনা কি? সত্যি সত্যি র‌্যাবে কোনো লোক আছে নাকি?

 

বাড়িওয়ালার সাথে কথা বলে দেরি হয়ে যায় খলিলের। এখন বাস পাচ্ছে না। যাও বা দু-একটা আসছে সেগুলোতে ভিড়ের কারণে ওঠা দায়। খলিল ঠিক করে, সিএনজিতে যাবে।একটু এগিয়ে ট্যাক্সিস্ট্যান্ডের কাছে যায় সে। ট্যাক্সিস্ট্যান্ডের একটা মাত্র সিএনজি আছে। কিন্তু সিএনজিওয়ালাকে দেখা যাচ্ছে না। সে বাইরে। সিএনজির গায়ে হেলান দিয়ে মোবাইলে কথা বলছে। খলিল বলল, ভাই যাবেন নাকি?

 

সিএনজিওয়ালা আলাপে ব্যস্ত।খলিলকে খেয়ালই করে না।

 

ভাই, যাবেন?

 

কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে আবার জানতে চায় খলিল।

 

সিএনজিওয়ালা এবার খলিলের দিকে তাকায়, কিছু কইলেন?

 

বললাম যাবেন নাকি?

 

কই যাইবেন?

 

প্রেসক্লাব।

 

যামু।

 

কত?

 

একশ আশি টাকা।

 

কাওরানবাজার থিকা প্রেসক্লাবের ভাড়া ১৮০ টাকা?

 

জ্বি।

 

এটা কেমন কথা! আশি টাকার ভাড়া আপনি একশ আশি টাকা চাচ্ছেন?

 

আমি তো আফনেরে জোর করতাছি না মামা। পোষাইলে যাইবেন নাইলে এগারো নম্বরে যান।

 

সিএনজিওয়ালা খলিলের পায়ের দিকে ইঙ্গিত করে।

 

তাও ঠিক। আপনে তো আমারে জোর করেন নাই।

 

সিএনজির চারপাশে একটা চক্কর দেয় খলিল। তারপর সিএনজিওয়ালার সামনে এসে দাঁড়ায়, আচ্ছা ভাইজান, আপনার সিএনজির পাখনা কই? আপনার সিএনজি তো উইড়া চলে তাই না?

 

ফাও প্যাচালের টাইম নাই। যেই ভাড়া কইছি পোষাইলে চলেন, নাইলে সামনে যান।

 

সিএনজিওয়ালা খলিলকে পাত্তা দেয় না।

 

খলিল আছে ভালো কাজের নেশায়। মুহূর্তেই তার মেজাজ গরম হয়। সিএনজিওয়ালার কলার চেপে ধরে সে, ওই ব্যাটা, ঢাকা থিকা কক্সবাজারে দূরত্ব হইতেছে ৪০০ কিলোমিটার। প্লেনে ভাড়া হইল সাত হাজার টাকা। পার কিলোমিটার বিমানের ভাড়া হইতেছে ১৭-১৮ টাকা। তোর সিএনজির ভাড়া পার কিলোমিটার ১৮০ টাকা হইবো কোন যুক্তিতে? তুই কি পঙ্খিরাজ চালাছ? খোল দরজা।

 

কলার থেকে সিএনজিওয়ালার কানে আসে খলিল। এইবার সিএনজিওয়ালা ভড়কে যায়। খলিলকে সে পুলিশ সার্জেন্ট ভাবে। ইদানিং সিভিল পোশাকে সার্জেন্টরা এই কাম করতেছে। সিএনজিওয়ালা কিছু বলতে চায়। খলিল সে সুযোগ দেয় না।

 

কোনো কথা নাই। খোল দরজা। রাস্তায় নাইম্যা পাবলিকের লগে জুলুম করছ? মানুষরে অসহায় পাইয়া পাঁচ গুণ ছয় গুণ ভাড়া নেছ। আজকা পাইছি তোরে।

 

আপনার ভাড়াই লাগবো না স্যার।সিএনজিওয়ালা দরজা খুলে দেয়।

নিজেও ড্রাইভারের সিটে বসে।

 

আপনারে আমি চিনছি স্যার। আপনি পুলিশের লোক।

 

চিনস নাই। পুলিশেরও উপ্রে আমি। জনগণের লোক। মিটার চালাইয়া সোজা গাড়ি টান। এদিক-ওদিক তাকাবি না।

 

সিএনজিওয়ালা সিএনজি স্টার্ট দেয়। (চলবে)

 

বিবার্তা/মৌসুমী/হুমায়ুন

 

>>হঠাৎ খলিল (পর্ব- ১৮)

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com