শিরোনাম
হঠাৎ খলিল (পর্ব- ১৭)
প্রকাশ : ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১৯:৩০
হঠাৎ খলিল (পর্ব- ১৭)
পলাশ মাহবুব
প্রিন্ট অ-অ+

দুশ্চিন্তায় মানুষের ভালো ঘুম হয় না। খলিলের ভালো ঘুম হলো। ঘুম ভাঙলো মনিরের ডাকে।

 

কাল সন্ধ্যার ঘটনার পর খলিল গিয়েছিল এক বন্ধুর কাছে। বন্ধু সামান্য কিছু টাকা পেত। সেটা দিয়ে এসেছে। কখন কি হয়ে যায়। দেনা শোধ থাকা ভালো।


বন্ধু তার রোগের খবর জানে না। তাই তাকে ভালো-মন্দ কিছু বলেনি। তবে বন্ধু ভালো-মন্দ খাইয়েছে।

 

রাতে মেসে ফিরেছে বেশ রাত করে। ফিরে মনিরের সাথে আর কথা হয়নি।

 

ভাই, কয়টা বাজে খেয়াল আছে? আজকেও তো অফিসে লেট করবেন।

 

ঘড়িতে সময় দেখে খলিল। বেশ বেলা হয়ে গেছে। 

 

কাইল রাইতে কখন আইলেন, ভাই? টেরই তো পাইলাম না। আজকা বেলা কইরা উঠলেন। শরীরের এখন কি অবস্থা? অফিস যাইবেন না?

 

না। আইজকা আর অফিস যাবো না। জীবনে অনেক অফিস করছি। 

 

আড়মোড়া ভাঙে খলিল।

 

কি কন ভাই? অফিস যাইবেন না! শরীর কি আরও খারাপ হইছে নাকি?

 

শরীর আছে শরীরের মতোই। শরীরের নাম মহাশয়, যাহা সওয়াবা তাহা সয়। আমারও সইয়া গেছে।

 

কাইল না আপনার রিপোর্ট দেয়ার কথা আছিল। দিছে?

 

হুমম। দিছে তো। 

 

কি লিখছে রিপোর্টে? 

 

মৃত্যু পরওয়ানা।

 

তামাশা কইরেন না তো ভাই। তার মানে রিপোর্ট ভালো।

 

তামাশা না, সত্য সত্যই। আমার খেলা ফাইনাল। ডাক্তার কইছে আমার ক্যান্সার হইছে। বড়জোর আর মাসখানেক বাঁচমু। তারপর ফুটুস।

 

আকাশ থেকে পড়ে মনির, কি কন এইসব আপনে! আপনের ক্যান্সার হইবো ক্যান! আপনি তো বিড়ি-সিগারেটও খান না। কই দেখি তো রিপোর্টটা।

 

রিপোর্ট দেইখা তুমি কি করবা। তুমি তো মিয়া অশিক্ষিত ডাক্তার। রিপোর্ট ডাসবিনে ফালাই দিছি। 

 

রিপোর্ট ফালাই দিছেন! 

 

হ দিছি। 

 

ক্যান?

 

বাঁচমুই না যখন রিপোর্ট দিয়া কি হইবো। আজরাইল তো আর মরার আগে রিপোর্ট দেখতে চাইবো না। তাই ফালাই দিছি। তাছাড়া ওইগুলা দেখলে মরণের কথা বেশি বেশি মনে পড়বো। তারচেয়ে যে কয়দিন আছি হাসি-খুশি থাকতে চাই। খুশি মনে দুইটা ভালো কাজ করতে চাই। 

 

হেসে-খেলে জীবনটা যদি কেটে যায় . . .গুনগুন করে গান গায় খলিল।

 

মনির তাকিয়ে আছে খলিলের মুখের দিকে।

 

কি হইলো? তুমি মুখ কালা কইরা আছো ক্যান। মরমু আমি, কান্দো তুমি। মরার পরে করবা কি? কিছু পানি জমাই রাখো। পরে কাজে লাগবো। 

 

ভাই, আপনার কি সত্যি সত্যি ক্যান্সার হইছে? আমার তো বিশ্বাস হয় না।

 

ক্যান্সার কি হাসি-মশকরার বিষয়? রাজবংশীয় রোগ। আর তোমার বিশ্বাস না হইলে হাসপাতালের ঠিকানা দেই। খোঁজ-খবর নিয়া দেখো।

 

ক্যামনে সম্ভব! একটা মানুষের ক্যান্সার ধরা পড়ছে আর সে হাসি-তামাশা করতেছে।

 

মুখ কালা কইরা বইসা বইসা কানলে কি কোনও ফায়দা হবে? যদি হয় তাইলে আমারে বলো। মুখ কালা কইরা বইসা থাকি। আমি জানি হবে না। আয়ু একদিনও বাড়বে না। ডাক্তার বলছে উল্টা কমবে। সুতরাং লাভ নাই।

 

ডাক্তার কি বলছে খলিল ভাই?

 

ডাক্তার বলছেন অল্প যে কয়দিন বাঁচবেন বাঁচার মতে বাঁচেন। টেনশন করলে আয়ু যা আছে তাও যাইবো। নাকি তুমি চাও আমি তাই করি?

 

মনির কথা বলে না। বলার মতো কথা তার কাছে নেই।

 

আচ্ছা শোনো, বুয়া কি আজকেও বাতি ঢেঁড়শ দিয়া আলু ভাজি করছে নাকি? এই বুয়া একটা অভিশাপ। দুইদিন পরে মইরা যামু। কই একটু ভালো-মন্দ খাওয়াইবো। তুমি নিশ্চয়ই খাইয়া ফেলছ। তোমার তো সব চলে। আমার ধারণা পাত্থর খাইয়াও তুমি হজম কইরা ফালাইতে পারবা। কি, পারবা না?

 

অন্য সময় হলে মনির হাসত। আজ তার হাসি আসে না। খলিল তাকে কাছে টেনে নেয়, শোনো মনির। মন খারাপের কিছু নাই। প্রথম যখন ডাক্তারের কাছে খবরটা শুনছি, তখন অনেক কানছি। পরে ভাবলাম, কাইন্দা কি লাভ? কপালে যা আছে তাই হবে।

 

আপনে আরেকজন ডাক্তার দেখান ভাই। আমি আপনেরে নিয়া যামু।

 

আরেক ডাক্তার দেখাইয়া কি হইবো। ডাক্তার ওষুধ দিতে পারবে। আয়ু তো আর দিতে পারবে না! ওই চিন্তা তাই বাদ। শোনো, জীবনে মানুষের জন্য তো কিছু করতে পারি নাই। সিদ্ধান্ত নিছি মরার আগে কিছু ভালো কাজ করবো। কি বলো, আইডিয়াটা কেমন?

 

মনির খলিলের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে।

 

তোমার হেল্প লাগতে পারে। তোমার ক্যান্সার হয় নাই বইল্লা আবার পিছপা হইও না। হয় নাই কিন্তু হইতে কতক্ষণ। ক্যান্সার কিন্তু এই বাসা চিইন্না ফালাইছে। হে হে হে।

 

খলিল হাসে। খলিলের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে মনির।

 

আল্লায় এই মানুষটারে কি দিয়া যে বানাইছে!  (চলবে)

 

বিবার্তা/মৌসুমী/হুমায়ুন

 

>>হঠাৎ খলিল (পর্ব- ১৬)

 

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com