শিরোনাম
হঠাৎ খলিল (পর্ব- ১৬)
প্রকাশ : ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১৯:০৮
হঠাৎ খলিল (পর্ব- ১৬)
পলাশ মাহবুব
প্রিন্ট অ-অ+

এই যে ভাইজা খাওয়া সুপারভাইজার, এইদিকে আসেন।

 

মাস্তানদের লিডার তাইজু শিস বাজিয়ে সুপারভাইজারকে ডাকে।

 

খলিলের মেসের কাছেই একটা নতুন বিল্ডিং হচ্ছে।

 

তাইজু এলাকার পাতি মাস্তান। এলাকায় দালান উঠবে আর তাদের পকেটে কিছু ঢুকবে না, তা হয় না। তারা এসেছে চাঁদার টাকা তুলতে।

 

তাইজুর ডাকে সুপারভাইজার শাহাদাতের খবর হয়ে যায়, স্লামালেকুম ভাই।

টেলিফোনে যা কইছিলাম সেইটা রেডি আছে তো?

 

জ্বি, মানে ভাই . . . আপনারা এসেছেন একটু বসেন। এই ভাইদের জন্য চা নিয়া আয়।

 

পাশে থাকা একজনকে তাড়া দেয় শাহাদাত।

 

চা লাগবো না, এইখানে টক শোর আলাপ করতে আসি নাই যে মগে ভইরা চা দিবেন। মাথা এমনিতেই গরম আছে। চা খাইলে আরও গরম হইয়া যাবে।

 

তাইলে ঠাণ্ডার ব্যবস্থা করি ভাই?

 

সুপারভাইজার শাহাদাত হাত কচলায়।

 

ঠাণ্ডা-গরম কোনোটারই দরকার নাই। যেইটা ব্যবস্থা করতে বলছিলাম সেইটা বাইর করেন। নগদ পাঁচ লাখ।

 

ডান হাত ওপরে তুলে পাঁচ আঙুল দেখায় তাইজু।

 

শাহাদাত কাচুমাচু করে, আপনারা তো সবই বোঝেন ভাই। আমি তো আসলে এখানে চাকরি করি, কর্মচারী মাত্র।

 

আমরাও চাকরি করি। আমগো বসের নাম মুরগি মতিন। নামটা চেনা চেনা লাগে না?

 

জ্বি। অবশ্যই। ওনাকে কে না চেনে।

 

বসের নাম মুরগি মতিন ক্যান হইছে সেইটা জানা আছে?

 

শাহাদাত তাইজুর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে, বুঝছি। জানা নাই। জানা থাকলে এত আলাপ করতেন না। টেকা ব্যাগে ভইরা বাসায় দিয়া আসতেন। জানা নাই বইলাই আমগো আসা লাগলো।

 

ওই, বসের নাম মুরগি মতিন ক্যান হইছে ক তো।

 

সাথের একজনকে নির্দেশ দেয় তাইজু। এত কথা বলা তাইজুর সাজে না। সে মুরগি মতিনের ডান হাত।

 

বসের নাম মুরগি মতিন হইছে কারণ তিনি মুরগির মতো মানুষ জবাই করেন। কোরবানীর সময়ও বসের হেভি ডিমান্ড।

 

জ্বি অবশ্যই, জ্বি অবশ্যই!

 

হাত কচলায় শাহাদাত। শক্ত তালুর ঘর্ষণে খসখস শব্দ হয়।

 

বুঝলে ভালো। এবার তাড়াতাড়ি মাল বাইর করেন। কথা বেশি হইতেছে। পাঁচ লাখের জন্য আমরা এত কথা কই না।

 

একটা প্লাস্টিকের চেয়ার টেনে তাতে বসে তাইজু। শাহাদাত ছোট একটা টাকার প্যাকেট তার দিকে এগিয়ে দেয়। প্যাকেটটা হাতে নেয় তাইজু। কিছুক্ষণ নাড়াচাড়া করে।

 

এত হালকা ক্যা! টেকা কি স্লিম হইয়া গেলো নাকি! কত আছে?

 

প...প . . . পঞ্চাশ হাজার।

 

কি? পঞ্চাশশশ হাজার!

 

তাইজু তার চার সঙ্গীর দিকে তাকায়।

 

এইটা কি এতিমখানার ফিতরা নাকি? অগো তো দেখি বিরাট কলিজা। এই বিল্ডিংয়ের সমান কলিজা।

 

ঘাড় ঘুরিয়ে আবার সুপারভাইজারের দিকে তাকায়, দশ-পনেরো কোটি টাকার বিল্ডিং বানাবি, কোটি কোটি টাকায় ফ্ল্যাট লেনদেন করবি, আর চান্দা চাইলে দিবি পঞ্চাশ হাজার। আরে ব্যাটা, প্রতিবেশীর একটা হক আছে না? ব্যবসা করলেও তো ঈমান থাকা উচিত।

 

টাকার বান্ডিল দিয়ে সুপারভাইজারের মুখে বাড়ি মারে তাইজু। তার সঙ্গীরা পকেট থেকে বের করে জিনিস। সুপারভাইজার শাহাদাত হাত জোড় করে তাইজুর পায়ের কাছে বসে পড়ে।

 

আমি ভাই এইখানের কর্মচারী। আমারে মাইরা আপনাগো দুই পয়সারও লাভ হবে না। আমার কী করার আছে!

 

বসা থেকে উঠে দাঁড়ায় তাইজু।

 

কান টানলে মাথা আসে। তোরে কলেমা শাহাদাত পড়াই দিলে তোর বসের হুঁশ হবে।

 

শাহাদাতকে কিছু একটা করতে যাচ্ছিল তাইজু আর তার লোকজন। তখনই সামনে এসে দাঁড়ায় খলিল। আড়াল থেকে সবই দেখছিল সে।

 

ভাই, কি হইতেছে এইখানে? মারামারি কেন?

 

কণ্ঠটা খুব নরম করে জানতে চায় খলিল।

 

এই মাল আবার কোইত্থা আইলো?

 

খলিলকে দেখে সুপারভাইজারের মুখ থেকে পিস্তলের নল বের করে আনে মাস্তানদের একজন, আপনি কে ভাই? কোথা হতে এসেছেন? আর কোনখানেই বা আপনার গন্তব্য?

 

ব্যঙ্গ করে জানতে চায় তাইজু।

 

আমি? আমি কেউ না।

 

ওওও . . .আইচ্ছা। লম্বা টান দেয় তাইজু, আপনে তাইলে কেউ না। কিন্তু আমরা হইলাম গিয়া কেউ। মানে কেউটে। কেউটে চেনো? সাপ।

 

তাইজু হাত বাঁকিয়ে সাপের ফনা তোলে।

 

যে রাস্তা দিয়া আসছস তার উল্টা রাস্তা দিয়া সোজা চইল্লা যা। একদম নাক বরাবর। দুইশ গজের মাথায় একটা মসজিদ পাবি। গিয়া আল্লা-বিল্লা কর। ক্যান আল্লারে ডাকবি? কারণ মুরগি মতিনের ভাই-বেরাদরের সামনে পড়ছস কিন্তু তোরে কিছু করে নাই। যা. . .

 

তাইজু ভয় দেখানোর চেষ্টা করে। কিন্তু তাতে খুব-একটা কাজ হয় না।

 

আরে ভাই, একটা মানুষরে হুদাহুদি মারতাছেন। ক্যান মারতাছেন সেইটা জিগানও যাইবো না? দ্যাশটাতো মগের মুল্লুক হইয়া যায় নাই একেবারে।

 

 

উরে বাবা। এইডা দেখি বিরাট মানবাধিকার। ওই, কি কইছি তোরে? নাক ফাটানোর আগে একদম নাক বরাবর যা . . .

 

নাক ফাটানোর হুমকিতেও খলিলের ভাবান্তর হয় না।

 

দিনে-দুপুরে চান্দাবাজি করতেছেন, আবার গলা উচাইয়া কথা বলেন। টাকা কামাইতে কত কষ্ট, সেইটা তো বোঝেন না। খান তো মানুষেরটা চাইট্টা।

 

এই, কি কইলি তুই? তাইজুর সঙ্গীদের একজন কথা বলে এবার।

 

ভাই, মালে কিন্তু বেশি উৎপাত করতেছে। বীচি মনে হয় দুইটা খরচা হইবো।

 

আরে রাখ রাখ। বীচির দাম আছে। মশা মারতে কামান আর ছুঁচো মারতে বীচি। হা হা।

 

তাইজু খলিলের আরেকটু কাছাকাছি যায়,  চেহারাডা তো মাসুম লাগতেছে। তা মাসুম মাসুম চেহারা, কি যেন বললি তুই। একই কথা আবার বল তো শুনি!

 

হঠাৎ খলিলের মধ্যে সাহস ভর করে।

 

আগের কথাগুলো সে মনে মনে উচ্চারণ করে, মইরাই তো যামু। কাইল মরলেও যা, আইজ মরলেও তা। একটা ভালো কাজ কইরা মরি।

 

খলিলের জবাব না পেয়ে তাইজু ক্ষেপে যায়, এখন মুখে আওয়াজ নাই ক্যারে মানবাধিকারের মাসুম বাচ্চা . . .

 

খলিলের কলার ধরতে এগিয়ে আসে তাইজু। কিন্তু তার আগেই তাইজুর মুখে সপাটে ঘুষি চালায় খলিল। শুধু তাইজু না, খলিলের এক ঘুষিতে পুরো পরিবেশ স্তম্ভিত হয়ে যায়।

 

তাইজুর দাঁত নড়ে গেছে। নাক দিয়ে জমাট কালো রক্ত বের হচ্ছে। হাত দিয়ে সেই রক্ত মুছে চোখের সামনে ধরে তাইজু। একবার রক্তের দিকে তাকায়। একবার খলিলের দিকে। তার সঙ্গীরা ভয়ে মুখে হাত দিয়ে তিন হাত দূরে সরে গেছে।

 

র‌্যাব-পুলিশের লোক না তো আবার!  তারা পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করছে। ঘুষি-পরবর্তী কয়েক মুহূর্তের বিরতি শেষে মুখ খোলে খলিল, তোদের বস মুরগি মতিনরে গিয়া আমার নাম বলবি। কালা খলিল। কি বলবি? বলবি, বি কে। ব্লাক খলিল।

 

খলিল কাণ্ডে বিল্ডিংয়ের শ্রমিকরা সাহস ফিরে পায়। শাবল, কোদাল, বেলচা নিয়ে তারাও দাঁড়িয়ে গেছে।

 

অল্পের মইধ্যে ছাইড়া দিলাম, যা। যে রাস্তা দিয়া আসছস তার উল্টা রাস্তা দিয়া সোজা চইল্লা যা। একদম নাক বরাবর। দুইশ গজের মধ্যে একটা মসজিদ পাবি। গিয়া সবগুলান মিল্লা আল্লারে ডাকবি। ক্যান আল্লারে ডাকবি? কারণ, কালা খলিলের সামনে পড়ছস অথচ হাত-পা লুলা হয় নাই। যা . . .

 

রক্ত নেশার মতো। যেমন উত্তেজনা তৈরি করে, আবার ভীতিও।

 

খলিলের হঠাৎ আক্রমণে খেই হারিয়ে ফেলে তাইজু ও তার লোকজন।

 

খলিল আসলে কে -  এ নিয়েও তারা বিভ্রান্ত। আস্তে সরে পড়ে তারা।

 

ভাই, এই কালা খলিলটা আবার কে? কোথা থিকা উইড়া আইসা যা তা কইরা গেলো।

 

যেতে যেতে তাইজুর কাছে জানতে চায় একজন।

 

ইজ্জত তো গুঁড়া গুঁড়া হইয়া গেলো ভাই। জানাজানি হইলে সব শেষ। এক টাকাও চান্দা দিবো না কেউ।

 

আরে ব্যাটা, চিনস নাই ওনারে? আমি তো চিনছি। সেইজন্য কিছু কই নাই। মতিন ভাইয়েরও বড় ভাই। এই এলাকা তো আগে তারই আছিল। ভুরি ফালানোর মামলায় বহুতদিন ভিতরে ছিল। আজকাই ছাড়া পাইছে মনে হয়। পুলিশের গাড়ি নামাই দিয়া গেছে দেখলাম। পুলিশও ওনারে জমা দিয়া চলে। বুঝছোস এবার কি জিনিস?

 

কি কন ভাই? ক্যামনে!

 

যা জানোস না সেইটা নিয়া কথা কইস না। আর শোন, আজকের এই রক্তপাতের ঘটনার কথা ভাইরে কিছু বলার দরকার নাই। ফিল্ডে নামলে এইরকম টুকটাক হয়ই। ভুইল্লা যা।

 

জ্বি ভাই . . . (চলবে)

 

বিবার্তা/মৌসুমী/হুমায়ুন

 

>>হঠাৎ খলিল (পর্ব- ১৫)

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com