শিরোনাম
হঠাৎ খলিল (পর্ব- ২৪)
প্রকাশ : ০৭ মে ২০১৭, ১৭:২৪
হঠাৎ খলিল (পর্ব- ২৪)
পলাশ মাহবুব
প্রিন্ট অ-অ+

খলিলের হাসপাতালে যাওয়াটা হুট করেই। একজন মুমূর্ষূ রোগীর জন্য রক্ত লাগবে। খলিল যেহেতু রক্ত দিতে পারবে না, সে পরিচিত একজনকে ম্যানেজ করে, তাকে নিয়ে হাসপাতালে যায়।

 

সেই হাসপাতাল, যে হাসপাতালে সে নিজের জন্য এসেছিল। এসেই যখন পড়েছে খলিল ভাবলো, তার ডাক্তারের সাথে দেখাটা করে যাবে। কারণ, এতদিন অনেকে তাকে বলেছে। সে পাত্তা দেয়নি। এখন সংশয়টা তার মনেও।

 

পঁচিশ-ছাব্বিশ দিন হয়ে গেলো। ডাক্তারের হিসাব অনুযায়ী তার আয়ু আর বড়জোর এক সপ্তাহ। একটা মানুষ সাত দিনের মধ্যে মরে যাবে, অথচ তার মধ্যে কোনো লক্ষণ নাই। জ্বর নাই একদম। হালকা কাশির ভাব আছে। সেটা তার সবসময়ই থাকে, মুদ্রাদোষের মতো। এর বাইরে ডাক্তার যেসব লক্ষণের কথা বলেছিলেন শরীরে তার কিছুই খুঁজে পায় না খলিল। আয়নায় নিজেকে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখে। নিজেকে দেখে মৃত্যুপথযাত্রী মনে হয় না তার।

 

হাসপাতালে রক্ত দেয়ার পাট চুকিয়ে, পরিচিতজনকে বিদায় দিয়ে ডাক্তারের চেম্বারে যায় খলিল।

 

আরে আপনি! খলিলকে দেখে হই হই করে চেয়ার ছেড়ে উঠে আসেন ডাক্তার।

 

আচ্ছা, আপনি কেমন মানুষ বলেন তো! আজব ব্যাপার। একবার যোগাযোগ পর্যন্ত করলেন না? যে মোবাইল নাম্বারটা দেয়া ছিল সেটাও বন্ধ।

 

মোবাইল তো স্যার মনে করেন হারাইয়া ফেলছি। যেদিন ক্যান্সার ধরা পড়ল সেই দিনই। হাসপাতাল থিকা বাইর হইতেই দেখি এক আপারে ছিনতাইকারী ধরছে। তাগো লগে মুশাবিদা করতে গিয়া কোন ফাঁকে মোবাইলটা নাই। ছিনতাইকারী ঠেকাইতে গিয়া চোরের হাতে পড়ছি। হেরপর আর মোবাইল কিনি নাই। জীবনই যেখানে শ্যাষ মোবাইল দিয়া আর কি হইবো।

 

তাই বলে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করবেন না। জীবনে অনেক রোগী দেখেছি, কিন্তু আপনার মতো দেখিনি। আপনাকে খুঁজে খুঁজে জান শেষ। আশ্চর্য মানুষ আপনি।

 

ক্যান স্যার? আমারে খোঁজেন ক্যান? খলিল কিছুটা অবাক হয়।

 

কেনো খুঁজছি সেটা তো বলবোই। কিন্তু এতদিন পরে আপনি কেন এসেছেন, সেটা আগে শুনি।

 

আমি আইছি স্যার খটকা দূর করতে। আপনে যেসব আলামতের কথা কইছিলেন তার কিছুই টের পাইতেছি না। মুখে রুচি ঠিকঠাক আছে। শরীরও তো ভাঙতেছে না। ওজন উল্টা বাড়ছে। আজরাইল কি বাসার ঠিকানা খুঁইজা পাইতেছে না, নাকি?

 

খলিলের কথা শুনে হো হো করে হাসেন ডাক্তার সাহেব, আরে রুচি তো ঠিকঠাক থাকবেই। আর শরীর ভাঙারও কোনো কারণ নেই। কারণ, আপনার তো ক্যান্সারই হয়নি। ইউ আর অলরাইট ম্যান।

 

কি কন স্যার!  নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারে না খলিল। আবার কন তো স্যার।

 

হুমম। আপনার মোটেও ক্যান্সার হয়নি। আপনি একদম ঠিকঠাক আছেন।

 

আমার ক্যান্সার হয় নাই!  তাইলে যে সেইদিন কইছিলেন আমার ক্যান্সার। আয়ুও বাইন্ধা দিলেন এক মাস।

 

আই অ্যাম সরি খলিল সাহেব। তখন ভুল বলেছিলাম। ভুলটা আমারও না, ভুলটা আসলে হয়েছে আমাদের ল্যাবে। সেখান থেকে ভুল রিপোর্ট এসেছিল। ঠিক ভুল না, খলিল নামে দুজনের রিপোর্ট ছিল ল্যাবে। দুজনের নাম পুরো এক। বয়সটা শুধু আলাদা। আপনার ৩৪, আর সেই ভদ্র লোকের ৪৩। এই ৩৪ আর ৪৩-এ ভুলটা হয়েছে। খলিল নামে অন্য আরেকজনের রিপোর্ট আপনার রিপোর্ট হিসেবে আমার হাতে এসেছে। ক্যান্সার আসলে হয়েছে সেই খলিলের, আপনার না।

 

ও আল্লা, কন কি স্যার! এইটা সত্য রিপোর্ট তো!

 

এবার একদম হানড্রেড পার্সেন্ট সত্য। কোনো ভুল নাই। আপনার হয়েছে ক্রনিক কাশি। ক্যানসারের কোনো আলামত নেই।

 

ডাক্তার সাহেব টেবিলের নিচ থেকে খলিলের রিপোর্ট বের করেন, এই নিন আপনার আসল রিপোর্ট। আপনার নাম্বারে অনেকবার ফোন দেয়া হয়েছিল। ফোন খোলা থাকলে এতদিন আপনাকে টেনশনে থাকতে হতো না।

 

রিপোর্ট দিয়া আর কি হইবো স্যার। বাঁচমু কিনা সেইটা ক্লিয়ার কইরা কন।

 

নির্ভাবনায় বাঁচবেন। আরে কাশি হলে কেউ মারা যায় নাকি! ওটা তো তুশকার মামলা। হা হা হা।

 

খলিলের চোখে মুখে জীবন ফিরে পাবার হাসি, আপনি আমার জীবন বাঁচাইলেন স্যার।

 

চেয়ার ছেড়ে উঠে ডাক্তারের পা ছুঁয়ে সালাম করে খলিল।

 

আরে কি করেন, কি করেন! আমি আপনার জীবন বাঁচালাম কিভাবে? আপনার তো জটিল কোনো রোগই হয়নি। আমি উল্টো ভুল রিপোর্টের কারণে আপনার মধ্যে মরণের ভয় ঢুকিয়ে দিয়েছিলাম। আই অ্যাম সরি ফর দ্যাট। এনি ওয়ে মরণের স্বাদ কেমন বেঁচে থাকতেই আপনি সেটা বুঝতে পারলেন। এটাও খারাপ না। হা হা হা।

 

হাসতে হাসতে খলিলের পিঠ চাপড়ান ডাক্তার, ইয়াংম্যান, এনজয় দা লাইফ । লাইফ ইজ বিউটিফুল। (চলবে)

 

বিবার্তা/মৌসুমী/হুমায়ুন

 

>>হঠাৎ খলিল (পর্ব- ২৩)

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com