শিরোনাম
হঠাৎ খলিল (পর্ব- ২১)
প্রকাশ : ০৮ এপ্রিল ২০১৭, ১৭:৫৪
হঠাৎ খলিল (পর্ব- ২১)
পলাশ মাহবুব
প্রিন্ট অ-অ+

খলিলকাণ্ড অফিসে ছড়িয়ে পড়ে। দৈনিক ইদ্রিসের ভূমিকা এক্ষেত্রে বেশি। ডেস্কে ডেস্কে সে-ই খবর বিলি করে। 

 

‘ঠাণ্ডা মানুষ চেতলে এই এক সমস্যা। কি খলিল ভাই, কি কইরা ফালাইলো। এমডি স্যাররে চোখ গরম কইরা কথা!  বলে, চাকরির চেয়ারে আমি উস্টা মারি।’

 

এতটুকু বলে গলা নামায় ইদ্রিস, চোখ-কান একটু খোলা রাইখেন ভাই। এমডি স্যারের মাথা ঠিক নাই। কোনখানের ঘূর্ণিঝড় কোথায় আঘাত করে বলা যায় না।


এমডির রুম থেকে বেরিয়ে খলিল তার ডেস্কে এসেছে। তার আচরণ একদম স্বাভাবিক। প্রথমে ড্রয়ার খুলে নিজের দরকারি কয়েকটা জিনিস বের করে। কলিগদের কেউ তার কাছে আসছে না, যার যার জায়গা থেকে উঁকি-ঝুঁকি দিচ্ছে। এখন খলিলের আশপাশে থাকা মানে নিজের চাকরি হালকা করা।

 

কয়েকটা জিনিস একটা কাগজের প্যাকেটে নিয়ে নুপূরের সামনে দাঁড়ায় খলিল। নুপূর আড়চোখে সবই দেখছিল। অফিসে কি ঘটেছে তাও শুনেছে। কিন্তু খলিলের সাথে কথা বলার মতো সুযোগ পায়নি।


এই যে ম্যাডাম, একটু আসেন তো আমার সাথে।


কোথায়? খলিলের দিকে তাকিয়ে জানতে চায় নুপূর।


আপনার সাথে জরুরি কথা আছে। আসেন একটু আমার সাথে।


সবাই দেখছে। নুপূর তাই একটু ইতস্তত করে, এখানে বলা যায় না?


প্রাইভেট কথা তো। সবার সামনে বললে তো প্রাইভেটের মর্যাদা থাকে না। আসেন . . .


খলিল অফিসের বারান্দার দিকে এগিয়ে যায়। খানিক ইতস্তত করে নুপূরও যায়। অনেকগুলো চোখ যার যার জায়গা থেকে তাদের অনুসরণ করে।

 

আমাকে এখানে না আনলে হতো না! সবাই কিভাবে তাকিয়ে রইলো।


থাকুক না। সুন্দরীদের দিকে এমনিতেই সবাই তাকিয়ে থাকে।


ওও! তো আমাকে এখানে ডাকার কারণটা কি জানতে পারি?


কথা আছে, সেজন্য। নুপূরের প্রশ্নের জবাবে খলিল বলে।


সে তো বুঝতেই পারছি। কিন্তু কি এমন কথা যা ওখানে বলা গেল না!


খলিল আশপাশে একবার তাকায়, সব কথা কি সব জায়গায় বলন যায়? প্রাইভেট কথা থাকে না কিছু। তাই আপনাকে এইখানে নিয়া আসলাম।


প্রাইভেট কথা! আমার সাথে?


হুমম। আপনার সাথে।


ওহ। তা এমডি স্যারের সাথেও কি প্রাইভেট কথা বলেছেন নাকি?


আরে না! খলিল হাসে, ওনারে বলছি নীতিকথা। সারাজীবন তো মাইনষেরে নীতিকথা শুনাইয়া নিজে দুর্নীতি করছে, আইজকা আমি ওনারে কয়ডা নীতিকথা শুনাইয়া দিলাম। নীতিকথা শুইনা স্যারের মুখ হইছে পটকা মাছের পেটের লাহান। হজম করতে পারে নাই।


তা হঠাৎ এত নীতিবান হওয়ার কি কারণ?


কারণ তো আছেই। কারণ ছাড়া বৃক্ষের পাতাও নড়ে না। কিন্তু কারণ বলার আগে প্রাইভেট কথাটা বলা দরকার।


ও আচ্ছা। ঠিকাছে, বলেন। তা আপনার প্রাইভেট কথাটা কি নরমাল, নাকি সিরিয়াস টাইপ?


সিরিয়াস।


ওকে। নুপূর সিরিয়াস হওয়ার ভঙ্গি করে, শুরু করেন।


আপনে কি খেয়াল করছেন সুযোগ পাইলেই আপনার দিকে আমি চাইয়্যা থাকি। সুযোগ পাইলেই আপনেরে দেখি। নানা উছিলায় আপনার সাথে কথা বলি। 


তাই নাকি? নুপূর অবাক হওয়ার ভান করে।


হ। একটা কথা কওনের জন্য ঘুরাইয়া-প্যাঁচাইয়া কত কথা কইছি। কিন্তু আসল কথাডাই কইতে পারি নাই কোনোদিন।  পেটের মইধ্যে কথাটা ঘুরপাক খাইতো কিন্তু মুখে আনার সাহস পাইতাম না। কিন্তু এখন সাহস বাড়ছে।


কি এমন কথা যা বলার জন্য এতদিন ধরে আপনাকে সাহস জমাতে হলো!


খলিলের কথা শুনে নুপূর চোখ বড় করে। খলিল হাসে, নুপূর, আপনারে আমার ভালো লাগে, খুবই ভালো লাগে। ভালোবাসার মতো ভালো লাগে। বিষয়টা আপনার জানা থাকা দরকার। সাহসের অভাবে জানাইতে দেরি হইয়া গেছে। সেইজন্য সরি।


খলিলের কথা শুনে নুপূর আসলে অবাক হয় না। খলিল মুখে কিছু না বললেও বিষয়টা সে অনেক আগে টের পেয়েছে। মেয়েরা অনেক কিছু টের পায়।


হুমম! বুঝলাম। আমাকে আপনার ভালো লাগে। ভালোবাসার মতোই ভালো লাগে। সাহসের অভাবে এতদিন আমাকে বলতে পারেননি,  সেটাও বুঝলাম। তা জনাব, হঠাৎ করে এত সাহস পেলেন কোথায় আপনি? এমডি স্যারকে নীতিকথা শুনিয়ে আসলেন। এখন আমাকে প্রেমের প্রস্তাব দিচ্ছেন। আপনি তো শুধু সাহসী না, রীতিমতো দুঃসাহসী হয়ে গেছেন।


ঠিকই বলছেন। আমার অবস্থা ওইরকমই। বাতি নেভনের আগে দপ কইরা জ্বইলা ওঠে না? আমিও সেরকম শেষ সময়ের সাহসী।


মানে?


মানেডাই সবাইরে কইতে চাইছিলাম। কেউ আমার কথা শুনল না।


কি হয়েছে খলিল ভাই? নুপূর এবার সত্যি সিরিয়াস।


ডাক্তার দেখাইতে কইছিলেন। দেখাইছি। টেস্ট করতে কইলো। তাও করাইলাম। এখন সব দেইখা শুইনা ডাক্তার কইলো আমার ক্যান্সার হইছে। 


ক্যান্সার!  আপনার!! নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারে না নুপূর।


হ। মাসখানেকের মতো আয়ু আছে। তার মইধ্যে চাইর দিন তো চইলা গেলো। আর কয়ডা দিন মাত্র। তারপর সব শ্যাষ। আর অফিস কামাই করা লাগবো না। আপনারও আমার কাশির যন্ত্রণা ভোগ করতে হইবো না। সারাজীবনের লাইগ্যা মিউট হইয়া যাইতেছি। আপনে ঠাণ্ডা মাথায় সিরিয়াল দেখতে পারবেন।


হাসতে হাসতে চোখ মোছে খলিল। কপালে হাত দিয়ে বসে আছে নুপূর। কি বলবে বুঝতে পারছে না সে।


আইচ্ছা, আমি যাই। আপনে ভালো থাইকেন।


নুপূরকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে বেরিয়ে যায় খলিল। একবারের জন্যও পেছনে তাকায় না। পেছনে তাকানো মানে মায়ায় পড়া। খলিল এখন মায়ার উর্ধ্বে।


বিস্ময়ভরা চোখে খলিলের চলে যাওয়া দেখে নুপূর। তার চোখে পানি।   (চলবে)


বিবার্তা/মৌসুমী/হুমায়ুন

 

>>হঠাৎ খলিল (পর্ব- ২০)

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com