ব্রিটিশ সুপ্রিম কোর্টের দিকে তাকিয়ে পুরো ব্রিটেন ও ইউরোপ। শুধু যে ব্রিটেন, ইউরোপ তা-ই নয়, অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় সারা বিশ্ব। মাত্র তিনদিন পরেই আগামী মঙ্গলবার ব্রিটিশ সুপ্রিম কোর্ট ব্রেক্সিট নিয়ে সরকারের আপিলের বিষয়ে চূড়ান্ত রায় দেবে।
আদালত যদি সরকারের পক্ষে রায় দেয় তাহলে প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারবেন। আর যদি হাইকোর্টের রায়ই বহাল রাখে আদালত তাহলে তড়িঘড়ি করে হাতেগোনা কয়েক দিনের মধ্যে তেরেসা মে’কে ব্রেক্সিট নিয়ে লিসবন চুক্তির ৫০ অনুচ্ছেদ সক্রিয় করা নিয়ে পার্লামেন্টে ভোট দিতে বাধ্য হবেন। যদি পার্লামেন্টে এ প্রস্তাব ভোটে যায় তাহলে রায় কোন্দিকে যায় তা আরেক ক্লাইম্যাক্স হয়ে দাঁড়াতে পারে। পার্লামেন্ট তেরেসা মে’কে অনুমোদন না দিলে ব্রেক্সিট প্রক্রিয়া জটিল এক ঘূর্ণিপাকে পড়বে।
উল্লেখ্য, ব্যবসায়ী নারী গিনা মিলার ও অন্য কয়েকজন ব্রেক্সিট প্রক্রিয়া নিয়ে আদালতের শরণাপন্ন হয়েছিলেন। তারা দাবি করেছিলেন, প্রধানমন্ত্রী নির্বাহী ক্ষমতাবলে ব্রেক্সিট প্রক্রিয়া নিজে নিজেই শুরু করতে পারেন না। ব্রিটিশ হাইকোর্ট তার পক্ষে রায় দেয়। হাইকোর্ট বলে, ব্রেক্সিট কার্যক্রম চালাতে হলে অবশ্যই ব্রিটিশ পার্লামেন্ট থেকে প্রধানমন্ত্রী বা সরকারকে অনুমোদন নিতে হবে। এমন অনুমোদন ছাড়া কোনোভাবেই ব্রেক্সিট প্রক্রিয়া শুরু করা যাবে না। ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে সরকার।
সেই আপিলের বিষয়ে গত ৫ ডিসেম্বর থেকে ৪ দিন শুনানি হয় ব্রিটিশ সুপ্রিম কোর্টে। আগামী মঙ্গলবার ব্রিটেনের স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ৯টায় এ বিষয়ে চূড়ান্ত রায় দেয়ার কথা সুপ্রিম কোর্টের। বিষয়টির দিকে তাকিয়ে ব্রিটেন, ইউরোপসহ সারাবিশ্ব। কারণ, ব্রেক্সিট প্রক্রিয়ার ওপর নির্ভর করে বিশ্ব অর্থনীতির অনেকটাই। এর ওপর নির্ভর করছে ওই অঞ্চলে বিনিয়োগ, ব্যবসা, বাণিজ্য।
লন্ডনের অনলাইন দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট লিখেছে, সুপ্রিম কোর্টের রায়ে তেরেসা মে হেরে যাবেন বলেই অনেকে মনে করছে। যদি সরকার হেরে যায় তাহলে পার্লামেন্টে ব্রেক্সিট বিষয়ক বিল উত্থাপনে তেরেসা মে বিলম্ব করবেন বলে মনে হয় না। কারণ, তিনি এরই মধ্যে ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, তিনি হেরে গেলেও অনুচ্ছেদ ৫০ সক্রিয় করার সময়সীমা থেকে তিনি পিছপা হবেন না।
তিনি এরই মধ্যে পরিষ্কার বলেছেন, মার্চ মাস শেষ হয়ে যাওয়ার আগেই তিনি অনুচ্ছেদ ৫০ সক্রিয় করবেন। তা করা হলে ব্রেক্সিট সম্পন্ন করতে তিনি দু’বছর সময় পাবেন। উল্লেখ্য, যদি অনুচ্ছেদ ৫০ সক্রিয় করার জন্য পার্লামেন্টে ভোটের রায় দেয় সুপ্রিম কোর্ট তাহলে ইউরোপীয় ইউনিয়নপন্থি এমপিরা সরকারে তাদের প্রভাব ফেলার চেষ্টা করবেন।
লিবারেল ডেমোক্রেটরা তো বলেই দিয়েছে, তারা ব্রেক্সিট চূড়ান্ত করার আগে দ্বিতীয় আরেকটি গণভোট চায়। কিন্তু এতে সমর্থন নেই বিরোধী লেবার দলের। এক্ষেত্রে উত্তর আয়ারল্যান্ড, স্কটল্যান্ড সমস্যা হয়ে দাঁড়াতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পার্লামেন্টে সর্বসম্মত সম্মতি আদায় করার বিষয়টি ব্রিটেনকে পুরোপুরি একটি সাংবিধানিক সংকটে ফেলতে পারে। তাতে প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে ব্রেক্সিটের জন্য যে সময়সীমা নির্ধারণ করেছেন তাও মিইয়ে যেতে পারে। সুপ্রিম কোর্টের মোট ১১ জন বিচারক ৫ ডিসেম্বর থেকে ৪ দিনের শুনানির পর বিচার বিশ্লেষণ করছেন। এরপরই মঙ্গলবার তাদের চূড়ান্ত রায় ঘোষণা করবেন।
বিবার্তা/জিয়া
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]