শিরোনাম
৭ নভেম্বর কোনো বিপ্লব দিবস নয়
প্রকাশ : ০৭ নভেম্বর ২০১৬, ১৭:০১
৭ নভেম্বর কোনো বিপ্লব দিবস নয়
আল আমিন
প্রিন্ট অ-অ+

বিনা বিচারে বীর মুক্তিযোদ্ধা জেনারেল খালেদ মোশাররফ, কর্নেল হুদা ও হায়দারকে হত্যা করে বেঈমান জিয়া।


৭৫ সালের ৭ নভেম্বর রাত ১২টায় বঙ্গভবনে সিপাহী বিপ্লবের খবর পেয়ে জেনারেল খালেদ মোশাররফই কর্নেল হুদা ও হায়দারকে সঙ্গে নিয়ে প্রথমে ব্রিগেডিয়ার নুরুজ্জামানের বাসায় যান। সেখান থেকে শেরে বাংলা নগরে অবস্থিত ১০ম বেঙ্গল রেজিমেন্টে যেতে সিদ্ধান্ত নেন। উল্লেখ্য, ১০ম বেঙ্গলকে বগুড়া থেকে খালেদ মোশাররফই আনিয়েছিলেন তার নিরাপত্তার জন্য। পথে ফাতেমা নার্সিং হোমের কাছে তার গাড়ি খারাপ হয়ে গেলে তিনি হুদা ও হায়দারসহ পায়ে হেঁটে কর্নেল নওয়াজিসের নেতৃত্বাধীন ১০ম বেঙ্গলে গিয়ে পৌঁছেন। খালেদের আগমনের খবর পেয়ে তৎক্ষণাৎ তিনি টেলিফোনে টু ফিল্ডে সদ্যমুক্ত জেনারেল জিয়াউর রহমানকে তার ইউনিটে খালেদ মোশাররফের উপস্থিতির কথা জানান। তখন ভোর প্রায় চারটা, জিয়ার সাথে ফোনে তার কিছু কথা হয়। এরপর তিনি মেজর জলিলকে ফোন দিতে বলেন। জিয়ার সাথে মেজর জলিলের কথা হয়।


ভোরবেলা দেখতে দেখতে সিপাহী বিদ্রোহের প্রবল ঢেউ ১০ম বেঙ্গলে এসে পড়ে। পরিস্থিতি কর্নেল নওয়াজিসের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। অফিসার্স মেসে বসে খালেদ-হায়দার-হুদা সকালের নাস্তা করছিলেন। হুদা ভীত হয়ে পড়লেও খালেদ ছিলেন ধীর, স্থির, শান্ত। হায়দার নির্বিকারভাবে পরোটা মাংস খাচ্ছিলেন। এমন সময় মেজর জলিল কয়েকজন উত্তেজিত সৈনিক নিয়ে মেসের ভিতর প্রবেশ করে, সাথে একজন বিপ্লবী হাবিলদারও ছিল। সে চিৎকার দিয়ে জেনারেল খালেদকে বললো, ‘আমরা তোমার বিচার চাই’! খালেদ শান্তকণ্ঠে জবাব দিলেন, ‘ঠিক আছে, তোমরা আমার বিচার করো। আমাকে জিয়ার কাছে নিয়ে চলো।’


স্বয়ংক্রিয় রাইফেল বাগিয়ে হাবিলদার চিৎকার করে বললো, ‘আমরা এখানেই তোমার বিচার করবো।’


খালেদ ধীর স্থির কন্ঠে বললেন, ‘ঠিক আছে, তোমরা আমার বিচার করো।’ খালেদ দুহাত দিয়ে তার মুখ ঢাকলেন। ট্যারর-র-র-র! একটি ব্রাশ ফায়ার। মেঝেতে লুটিয়ে পড়লেন সেনাবাহিনীর চৌকস অফিসার জেনারেল খালেদ মোশাররফ যার ললাটে ছিল বীর-যোদ্ধার জয়টিকা, মাথায় ছিল মুক্তিযুদ্ধের বীর উত্তমের শিরোপা আর মাথার বাম পাশে ছিলো পাকিস্তানী গোলন্দাজ বাহিনীর কামানের গোলার গভীর ক্ষতচিহ্ন। কামরার ভেতরেই গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণত্যাগ করলেন আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার অন্যতম আসামী, মুক্তিযুদ্ধে ৮নং সেক্টরের সাবসেক্টর কমান্ডার বীর বিক্রম কর্নেল নাজমুল হুদা। কর্নেল হায়দার ছুটে বেরিয়ে যান কিন্তু সৈনিকদের হাতে বারান্দায় ধরা পড়েন। উত্তেজিত সিপাহীরা কিল ঘুষি লাথি মারতে মারতে দোতলা থেকে নিচে নামিয়ে এনে ব্রাশ ফায়ারে হত্যা করে।


প্রশ্ন হচ্ছে, জিয়া মেজর জলিলকে কি বলেছিলেন?


হত্যা উৎসব? সিপাহী বিপ্লব ছিল হত্যা উৎসব।


হামিদা নামে এক লেডি ডক্টর আর একজন ডেন্টাল সার্জন করিমকে সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত আক্রোশে হত্যা করা হয়। আর দুজন অফিসার ক্যাপ্টেন আনোয়ার আর লে. মোস্তাফিজ, যারা বাংলাদেশ হকি ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ নিচ্ছিল তাদেরকে টিভি স্টেশনের কাছে তাড়া দিয়ে নিয়ে হত্যা করা হয়।


একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে কর্নেল তাহের আরেকজন মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমানকে বিশ্বাস করে ক্ষমতায় বসালেও সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় মুক্তিযুদ্ধের অর্জনগুলো। জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার শত্রু আর পরাজিত শক্তিকে পূর্নবাসন শুরু করে। অন্যদিকে মুক্তিযুদ্ধের অর্জনগুলোকে বর্জন করে হাত মিলায় রাজাকারদের সাথে। ক্ষমতা হাতে পেয়েই ব্যস্ত হয়ে পড়েন মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ-মৌলবাদ এবং দেশীয় ধনিক শ্রেণীর স্বার্থরক্ষায়। জিয়া বিশ্বাসঘাতকতা করেন ক্ষমতায় বসার শর্তের সঙ্গে।


ঘটনা এখানেই শেষ নয়। তিনি তার প্রাণরক্ষক তাহেরকে গ্রেফতার করেন, তারপর তার বিরুদ্ধে ৭ নভেম্বরের ঘটনার নেতৃত্ব দেয়ার জন্য দোষী করেন এবং এক প্রহসনের বিচার বসিয়ে তাঁকে ফাঁসি দিয়ে হত্যা করেন। পুরস্কারের বদলে বুলেট/ফাঁসি।


জিয়া ৭ নভেম্বরের কৃতিত্ব এবং নেতৃত্ব নিজে নিয়ে নেন, দিনটিকে ‘সিপাহী-জনতার অভ্যুত্থান’-এর বদলে কথিত বিপ্লব ও সংহতি দিবস হিসেবে প্রচার করেন। আর এর সঙ্গে সঙ্গে সেনাছাউনিগুলো থেকে বিপ্লবের সঙ্গে যুক্ত ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সিপাহী ও অফিসারদের আটক করে ফায়ারিং স্কোয়াডে দাঁড় করিয়ে হত্যাকাণ্ড ঘটাতে থাকেন। হাজার হাজার সিপাহী-অফিসার এবং জাসদ সংগঠককে জেলখানায় আটক রেখে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়া হয়। মাসের পর মাস ধরে চলতে থাকে এসব কাণ্ড।


তাই ৭ নভেম্বর কোনো বিপ্লব দিবস নয়, এটি বেঈমানী বা জাতীয় প্রতারণা দিবস হিসেবে পালন করা হোক।


লেখক : সহ-সভাপতি, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদ


বিবার্তা/মৌসুমী/হুমায়ুন

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com