শিরোনাম
জাপার ৩১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী, সমাবেশ রবিবার
প্রকাশ : ৩১ ডিসেম্বর ২০১৬, ২২:৪০
জাপার ৩১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী, সমাবেশ রবিবার
জাহিদ বিপ্লব
প্রিন্ট অ-অ+

জাতীয় পার্টির ৩১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী রবিবার। সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নেতৃত্বে ১৯৮৬ সালের ১ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে এ দলটি আত্মপ্রকাশের পর নানা ঘাত-প্রতিঘাত এবং চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দলে পরিণত হয়েছে।


জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ পরপর দু’বার পাঁচটি আসন থেকে নির্বাচিত হয়ে দেশের রাজনীতিতে অনন্য নজির স্থাপন করেছেন।


দীর্ঘ পথপরিক্রমায় অনেকে জাতীয় পার্টিকে ব্রাকেটবন্দি করার চেষ্টা করলেও শেষ পর্যন্ত তারা কালের গর্ভে হারিয়ে গেছে। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টি পথ চলছে সগৌরবে।


১৯৮৬ সালে প্রতিষ্ঠিত জাতীয় পার্টি প্রথম হোচট খায় ক্ষমতাসীন থাকা অবস্থায় ১৯৮৮ সালে। তখন ডা. মতিন দলের কিছু এমপি নিয়ে দল থেকে পদত্যাগ করে আলাদা জাতীয় পার্টি গঠনের চেষ্টা চালান। কিন্তু সে চেষ্টা ব্যর্থ হয়। নব্বই পরবর্তীতে এ পর্যন্তু সাত দফা ভাঙ্গনের মুখে পড়েছে দলটি।


এখনো জাতীয় পার্টি নামে পাঁচটি দলের অস্তিত্ব বিদ্যমান। এরমধ্যে এরশাদের জাতীয় পার্টিসহ আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর নেতৃত্বে একটি, জাপা (কাজী জাফর), জাপা (নাজিউর) বর্তমানে নেতৃত্ব ড়িচ্ছেন আন্দালিব পার্থ এবং জাপা (মতিন)।


তবে এরশাদের মূলস্রোতের থেকে সরে গিয়ে রাজীতিতে কেউ ভালো নেই। দেশের ক্ষমতা পরিবর্তনের রাজনীতিতে এরশাদের জাতীয় পার্টি এখনও বড় ফ্যাক্টর। নব্বইয়ের পর গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় উত্তরণের পর থেকে প্রতিটি নির্বাচনেই সরকার গঠনে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি মূল ভূমিকা পালন করে আসছে। আর তাই নির্বাচনের আগে প্রধান দুই দল আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি জাতীয় পার্টিকে নানাভাবে কাছে টানার চেষ্টা করে।


নব্বই সালে ক্ষমতা হস্তান্তরের পর দলের চেয়ারম্যানসহ অধিকাংশ নেতা হামলা-মামলার শিকার হলে অস্তিত্ব সংকটে পড়ে দলটি। সেসময় ৩৫টি আসনে জয়লাভ করে রীতিমত চমক দেখায় জাতীয় পার্টি। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে এরশাদ বা জাতীয় পার্টি যদি সেসময় নির্বাচনী প্রচারে সমান অধিকার পেত, তাহলে এরশাদই পুনরায় রাষ্ট্রক্ষমতায় আসতো। এরপর ২০০১ সালের নির্বাচনে ১৪টি আসন, ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে ৩৩টি আসন পায় দলটি।


নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে মহাজোট গঠন করে জাতীয় পার্টি। আওয়ামী লীগের সঙ্গে জাতীয় পার্টির এই জোটবদ্ধ হওয়া এবং ঐক্যবদ্ধ নির্বাচনে অংশগ্রহণ পুরো নির্বাচনী আবহ পাল্টে দেয়। মহাজোট নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। আর জাতীয় পার্টি ২৯টি আসনে জয়ী হয়ে দেশের তৃতীয় বৃহত্তম রাজনৈতিক দলে পরিণত হয়।


এর আগে ১৯৯৬ সালের নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগের সরকার গঠন করতে জাতীয় পার্টির সমর্থন প্রয়োজন হয়। জেলখানায় থেকে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ তখন আওয়ামী লীগকে সমর্থন দেন। যার ফলে দীর্ঘ ২১ বছর পর সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ।


২০০৮-এর নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেও বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট জাতীয় পার্টিকে তাদের সঙ্গে নেয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু বৃহত্তর স্বার্থ বিবেচনায় এনে জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের সঙ্গে যোগ দেয়। সৃষ্টি হয় মহাজোট। সেই সঙ্গে এক নতুন ইতিহাসের জন্ম হয়। নির্বাচনে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় মহাজোট। জাতীয় পার্টি গঠনের আগে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নেতৃত্বে সমমনা পাঁচটি রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে গঠিত হয় জাতীয় গণফ্রন্ট। এ ফ্রন্টের সমন্বয়ে একসময় জাতীয় পার্টি নামে নতুন রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ ঘটে।


১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও জাতীয় পার্টির ভূমিকা ছিল অগ্রগণ্য। বিএনপিসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দল নির্বাচন বর্জন করলেও জাতীয় পার্টি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে এবং বর্তমানে জাতীয় সংসদে বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করছে।


১৯৮৬ সালের ১ জানুয়ারি জাতীয় ফ্রন্টের ধানমন্ডির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে জাতীয় পার্টি গঠনের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়া হয়। জাতীয় ফ্রন্টের ৫টি শরিক দল একত্রিত হয়ে জাতীয় পার্টির আত্মপ্রকাশ ঘটে। নবগঠিত পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এবং মহাসচিব নিযুক্ত হন অধ্যাপক ডা. এম.এ মতিন।


পার্টির কাউন্সিল না হওয়া পর্যন্ত জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্যসচিব হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন আনোয়ার জাহিদ। সংবাদ সম্মেলনে ফ্রন্টের শরিক দল জনদল, ইউপিপি, গণতান্ত্রিক পার্টি, ডিএল (শাহ মোয়াজ্জেম) ও মুসলিম লীগ (সা) নিজেদের অস্তিত্ব বিলুপ্ত ঘোষণা করে জাতীয় পার্টিতে একীভূত হয়।


এর আগে ১৯৮৫ সালের ১৬ আগস্ট তৎকালীন রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নীতি ও আদর্শ বাস্তবায়নের অঙ্গীকার নিয়ে জাতীয় ফ্রন্ট গঠিত হয়। রাজনৈতিক দলের বাইরেও অনেক বরেণ্য ব্যক্তিত্ব ও রাজনৈতিক নেতা এ ফ্রন্টে যোগ দেন। জাতীয় পার্টি গঠনের ঘোষণার দিন তারাও জাতীয় পার্টিতে যোগদান করেন।


পার্টি গঠনের ঘোষণায় বলা হয়, দেশের সব গণতন্ত্রকামী জাতীয়তাবাদী দেশপ্রেমিক শক্তির বিভক্তির প্রবণতা কাটিয়ে একটি একক রাজনৈতিক দলে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার প্রয়োজনীয়তা থেকে জাতীয় পার্টি গঠন করা হয়েছে।
জাতীয় পার্টি গঠনের ঘোষণার দিন প্রথমে ২১ সদস্যের প্রেসিডিয়াম, ৫৭ সদস্যের জাতীয় নির্বাহী কমিটিসহ ৬০১ সদস্যের জাতীয় নির্বাহী কমিটি গঠনের ঘোষণা দেয়া হয়। প্রথম দিনে ২১ সদস্যের প্রেসিডিয়ামের মধ্যে ১৮ জনের নাম ঘোষণা করা হয়।


প্রেসিডিয়াম সদস্য ছিলেন, মিজানুর রহমান চৌধুরী, মওদুদ আহমদ, কাজী জাফর আহমদ, সিরাজুল হোসেন খান, রিয়াজউদ্দিন আহমেদ ভোলা মিয়া, সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী, ব্যারিস্টার সুলতান আহমদ চৌধুরী, এম কোরবান আলী, শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী, একেএম মাঈদুল ইসলাম, এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আমিনুল ইসলাম, ক্যাপ্টেন আবদুল হামিদ চৌধুরী, শামসুল হুদা চৌধুরী, এমএ সাত্তার ও বিচারপতি একেএম নুরুল ইসলাম। নবগঠিত কমিটিতে ৩ জন যুগ্ম মহাসচিব করা হয়। তারা ছিলেন শফিকুল গণি স্বপন, মোস্তফা জামাল হায়দার এবং লে. কর্নেল (অব.) জাফর ইমাম।


জাতীয় পার্টির ঘোষণাপত্রে সামরিক শাসন থেকে সাংবিধানিক শাসনে উত্তরণের পরিবেশ অধিকতর উন্নত করার জন্য পার্টির ৫টি আশু কর্মসূচির কথা ঘোষণা করা হয়। এগুলো ছিল, স্থগিত সংবিধানের সংশ্লিষ্ট ধারাগুলোর ভিত্তিতে স্বল্পতম সময়ের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠান, নির্বাচিত জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনে সামরিক শাসনের অবসান এবং স্থগিত সংবিধান পরিপূর্ণরূপে পুনরুজ্জীবন, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সম্ভাব্য সব ব্যবস্থা গ্রহণ।


নির্বাচনের আগে সামরিক আইন সংকোচন ও সামরিক আদালত, সামরিক ট্রাইব্যুনাল প্রত্যাহার, নির্বাচনের আগে ক্রমান্বয়ে স্থগিত সংবিধানের মৌলিক অধিকার ও হাইকোর্টের রিট এখতিয়ার সংক্রান্ত ধারাগুলো পুনর্বহাল এবং রাজনৈতিক কারণে আটক সব দেশপ্রেমিক বন্দির মুক্তিদান।


জাতীয় পার্টির প্রথম ঘোষণাপত্রে ৫টি মৌলিক আদর্শসহ ৯টি মূলনীতি ঘোষণা করা হয়। মৌলিক আদর্শ হচ্ছে- স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব, ইসলামী আদর্শ প্রতিষ্ঠা ও অন্য ধর্মাবলম্বীদের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ, বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র ও সামাজিক প্রগতি তথা অর্থনৈতিক মুক্তি।


ঘোষণাপত্রে এ ৫টি আদর্শের ব্যাখ্যাসহ ৯টি মূলনীতি ও ১২টি কর্মসূচির বিবরণ দেয়া হয়। এছাড়াও সামরিক শাসন থেকে সাংবিধানিক শাসনে উত্তরণের জন্য ৫টি আশু কর্মসূচির কথাও ঘোষণা করা হয়।


ঘোষণাপত্রে বলা হয়, বাংলাদেশ নামের এই ভূখণ্ডে ভাষা, আঞ্চলিক বৈশিষ্ট্য, ধর্মীয় চেতনা ও অর্থনৈতিক আস্থার ভিত্তিতে জাতীয় মুক্তি ও জাতীয় স্বাতন্ত্র্যবোধের যে উপলব্ধি ঐতিহাসিক প্রক্রিয়ায় গড়ে উঠেছে, তার নাম বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ। আমাদের অস্তিত্বের উৎস এই বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ। ঘোষণাপত্রে উপজেলা ব্যবস্থাকে অভিনন্দিত করে বলা হয়, দেশের ইতিহাসে এই প্রথম নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের হাতে নির্বাহী ক্ষমতা অর্পিত হয়েছে। রাষ্ট্রায়ত্ত্ব খাতের পাশাপাশি বেসরকারি খাতে পুঁজি বিকাশ ও বিনিয়োগ উৎসাহিত করার বলিষ্ঠ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।


জাতীয় পার্টির মূলনীতির মধ্যে রয়েছে, সব মৌলিক রাষ্ট্রীয় প্রশ্নে জাতীয় ঐকমত্য ও বাংলাদেশী জাতির ঐক্য অর্জন, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব নিরংকুশ করা, সব ধরনের আধিপত্যবাদ ও সম্প্রসারণবাদ এবং তাদের দেশীয় সামাজিক-রাজনৈতিক ভিত্তির বিরুদ্ধে আপসহীন সংগ্রাম পরিচালনা, ’৭১ সালের স্বাধীনতা সংগ্রামের আদর্শ সংরক্ষণ এবং মুক্তিযোদ্ধাদের বীরের মর্যাদা দান।


এদিকে দলের ৩১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে রবিবার ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহাসমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়া সব জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ের কার্যালয়ে দলীয় ও জাতীয় পতাকা উত্তোলন, আলোকসজ্জাকরণ, আলোচনা সভা, বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা, বাদ আসর দোয়া এবং মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।


মহাসমাবেশ সফল করতে দলের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে সর্বাত্মক প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। ১০ লক্ষাধিক নেতাকর্মীর সমাবেশ ঘটানোর টার্গেট নেয়া হয়েছে মহাসমাবেশে। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান সাবেক রাষ্ট্রপতি আলহাজ হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এমপি এতে সভাপতিত্ব করবেন।


দলের মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার এমপি এক বিবৃতিতে জাতীয় পার্টির সর্বস্তরের নেতা-কর্মী-সমর্থকসহ দেশবাসীকে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যোনে সমবেত হয়ে মহাসমাবেশ সফল করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন।


বিবার্তা/বিপ্লব/কাফী

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com