যে কোনো দেশের সরকারের মূল লক্ষ্য থাকে সম্পদের যথাযথ পরিকল্পিত ব্যবহারের মাধ্যমে দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে কাজ করে যাওয়া।
বাংলাদেশের মতো একটি স্বল্পোন্নত দেশের জন্য এই কাজটি সরকারের জন্য সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জর। একদিকে আমাদের সম্পদ কম, অন্য দিকে জনসংখ্যা অত্যন্ত বেশি। স্বাধীনতাপরবর্তী সময়ে আমাদের দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারের তুলনায় সম্পদ বৃদ্ধির হার ছিল নিতান্তই কম। অর্থাৎ জনসংখ্যা যদি জ্যামিতিক হারের বেড়ে থাকে তাহলে সম্পদ বেড়েছে গাণিতিক হারে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন নিয়ে এ দেশকে স্বাধীন করেছিলেন সেই সোনালী স্বপ্নের মৃত্যু ঘটে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তাঁকে হত্যার মধ্য দিয়ে।
এর পরের ইতিহাস সকলেরই জানা।
১৯৭৫-৯৬ এই ২১ বছর বঙ্গবন্ধুর সোনালী স্বপ্নবিজড়িত এই দেশে ইতিহাসবিকৃতির এক কালো অধ্যায়ের সূচনা হয় এবং ইতিহাসের পাতা থেকে বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারকে মুছে ফেলার অপচেষ্টা চালানো হয়। সেই অপচেষ্টার মৃত্যু ঘটে ১৯৯৬ সালের জাতীয় নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার ক্ষমতায় আসার মধ্য দিয়ে।
শেখ হাসিনা বাংলাদেশের তিন তিন বার নির্বাচিত সরকারপ্রধান। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু আমাদের দিয়েছিলেন একটি স্বাধীন দেশ এবং স্বপ্ন দেখেছিলেন একটি সুন্দর সমৃদ্ধ অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের। আর বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর সেই অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নে ছুটে চলেছেন নিরন্তর।
তাঁর গতিশীল নেতৃত্বে এক সময়ের সমস্যাজর্জরিত দেশ এখন আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের দ্বারপ্রান্তে। অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক তথা সার্বিক উন্নয়ন এখন আর স্বপ্ন নয়, বাস্তব। আমাদের দেশের জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার এখন ৭.২ শতাংশ, মাথাপিছু আয় ১,৪৬৬ মার্কিন ডলার, দারিদ্র্যের হার কমে নেমে এসেছে ২৪.৮ শতাংশে।
দেশের বর্তমান খাদ্য উৎপাদন ৩৮৯.৯৭ লাখ মেট্রিক টন, যা কোনো সময়ের থেকে অনেক বেশি। দেশের প্রায় ৭৫ ভাগেরও বেশি মানুষ আজ বিদ্যুৎ সুবিধা ভোগ করছেন এবং আমাদের দেশের বর্তমান বিদ্যুৎ উৎপাদনক্ষমতা ১২,৩৩৯ মেগাওয়াটের চেয়ে বেশি। দেশে আবিষ্কৃত ২৬টি গ্যাসক্ষেত্রে ৩৮.০২ ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস মজুদ রয়েছে, যেখান থেকে ২৭.১২ ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলনযোগ্য। আমাদের মজুদ জ্বালানি তেলের পরিমাণ ১০.৯১ লাখ মেট্রিক টন। বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ ২৯.১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা পূর্বের যে কোনো সময়ের থেকে কয়েক গুণ বেশি। বর্তমানে রপ্তানি আয় ২৭৬৩৭.২২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। আমাদের রেমিটেন্স ১২২৫৫.২৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। জলবায়ু তহবিলে বরাদ্দ টাকার পরিমাণ প্রায় ৩০০০ কোটি টাকা। ব্র্যাক সেন্টার, মাদ্রাসা এবং শিশুকল্যাণসহ দেশে বর্তমানে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ১,১২,১৭৬ টি। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির হার ৯৭.৯ শতাংশ এবং প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়ার হার নেমে এসেছে ২০.৪ শতাংশে। বর্তমানে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় সংখ্যা ৩৮টি এবং মেডিকেল কলেজ ৩৬টি।
শেখ হাসিনার সরকারের অন্যতম সফলতা হলো দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে ১৩,১৩৬টি কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন। বাল্য বিবাহকে আইনের দ্বারা নিষিদ্ধ করার ফলস্বরূপ এবং নানাবিধ সচেতনতামূলক কর্মকাণ্ডের ফলে আমাদের দেশে এখন বিয়ের গড় বয়স পুরুষ - ২৪.৯ বছর এবং মহিলা ১৮ বছর।
বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতু নির্মাণের জন্য অর্থের যোগান দিতে চেয়েও প্রতিশ্রুতি রাখেনি। তাতে কিন্তু আমাদের পদ্মা সেতুর কাজ থেমে থাকেনি। শেখ হাসিনার সরকার ২৮,৭৯৩.৩৯ কোটি টাকা ব্যয়ে নিজস্ব অর্থায়নেই নির্মাণ করছে স্বপ্নের পদ্মা সেতু। এটি হলো বাংলাদেশের সমসাময়িক উন্নয়নের একটি খণ্ডচিত্র।
কিছুদিন আগেও যা উন্নয়নের অন্তরায় ছিল, আজ তা শেখ হাসিনার দক্ষ নেতৃত্বে সম্ভাবনার নতুন নতুন দ্বার উন্মোচন করছে। আর এ কারণে বিশ্বে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে পরিচিতি লাভ করতে সক্ষম হয়েছে। আমাদের দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশের বেশি ছিল একমাত্র বঙ্গবন্ধুর সময়ে। তা আবার ৭ শতাংশ অতিক্রম করেছে ধমনীতে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে।
আর্থ- সামাজিক উন্নয়নের দ্বারপ্রান্তে এসে আজ যখন আমরা মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে সক্ষম হয়েছি এবং অচিরেই উন্নত দেশ হওয়ার স্বপ্ন লালন করে সম্ভাবনাময় আগামীর দিকে ধাবমান, ঠিক তখন আমাদের দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে বিশ্বের কাছে বাংলাদেশকে নেতিবাচক ভাবে উপস্থাপন করার ব্যর্থ ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে কিছু মানুষ। স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি আমাদের দেশ থেকে এখনো নির্মূল হয়নি। এরা এদের রূপ বদলায় এবং বিভিন্নভাবে সুযোগ বুঝে স্বাধীনতাবিরোধী এজেন্ডা বাস্তবায়ন করার মাধ্যমে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে সর্বদা কাজ করে চলেছে। শেখ হাসিনার সরকার যখন জনগণের ভাগ্য উন্নয়নে কাজ করে চলেছে নিরন্তর, বিএনপি-জামাত- শিবির তখন ব্যস্ত সাধারণ মানুষের জীবন নিয়ে খেলতে।
স্বেচ্ছায় ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেয়নি। এখানে সাধারণ মানুষের কোনো দোষ ছিল না। কিন্তু ২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত বিএনপি-জামাত বাংলার সাধারণ মানুষদের পেট্রোল বোমায় পুড়িয়ে হত্যা করেছিল। সে ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হয়েছিল। স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি কিন্তু বসে নেই।
আমরা বাঙালি। হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ-খৃষ্টান সবাই অসাম্প্রদায়িক চেতনায় অভ্যস্ত। কিন্তু ভেবে দেখার সময় এসেছে যে অসাম্প্রদায়িক বাঙালি জাতির মধ্যে সাম্প্রদায়িকতার বীজ বপনের চেষ্টায় আজ কারা লিপ্ত। আজ কারা এবং কাদের ইন্ধনে সনাতন ধর্মালম্বীদের উপর হামলা করা হচ্ছে। মাথায় টুপি এবং লম্বা লেবাস পরলেই মুসলমান হওয়া যায় না। যে সকল জঙ্গি ইসলামকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে মানুষ হত্যা করে আর যারা সনাতন ধর্মালম্বীদের উপর হামলা করে, আমার দৃষ্টিতে তারা সমান অপরাধী।
মনে রাখা উচিৎ, দেশের সচেতন নাগরিক হিসেবে আমাদের প্রত্যেকের দেশ ও জাতির প্রতি দায়িত্ব রয়েছে। নিজেদের দায়িত্ব এড়িয়ে ঢালাওভাবে সরকারের উপর নির্ভরশীলতা দায়িত্ব অবহেলার নামান্তর মাত্র। গণমানুষের প্রতিরোধ সবচেয়ে বড় প্রতিরোধ। খোঁজ রাখুন আপনার পাশের মানুষটির দিকে। কে বা কারা এবং কাদের ইন্ধনে আজ সাম্প্রদায়িকতার বীজ বপনের চেষ্টা করে অস্বাভাবিক পরিস্থিতি সৃষ্টির মাধ্যমে আমাদের উন্নয়নের গতিকে মন্থর করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত।
প্রয়োজন একটু সচেতনতা ও দায়িত্ববোধ, যার বিনিময়ে আমরা এগিয়ে যাবো উন্নয়নের পথে।
মনে রাখবেন, স্বাধীনতাবিরোধী চেতনা ধারণকারী কিছু মানুষের লক্ষ্য হলো আমাদের মাঝে সাম্প্রদায়িকতার বীজ বপন করে জাতিকে বিভক্তির মাধ্যমে দেশের স্বাভাবিক পরিস্থিতি অস্থির করে তোলা এবং তাদের কু-স্বার্থ চরিতার্থ করা। আর বাঙালি জাতির লক্ষ্য হলো অসাম্প্রদায়িক চেতনা লালন করে উন্নয়নের মহাসড়কে যোগ দিয়ে নিজেদের একটি সুখী ও সমৃদ্ধ জাতি হিসেবে বিশ্বের বুকে আত্মপ্রকাশ করা।
আমরা অসাম্প্রদায়িক চেতনা বুকে লালন করে উন্নয়নের মহাসড়কে এগিয়ে চলেছি দুর্বার। এখনই সময় বাংলাদেশের মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার।
লেখক : সাংগঠনিক সম্পাদক, সার্জেন্ট জহুরুল হক হল ছাত্রলীগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
বিবার্তা/মৌসুমী/হুমায়ুন
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]