শিরোনাম
অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসার টাকা যায় কার কাছে?
প্রকাশ : ০৭ ডিসেম্বর ২০১৬, ১৮:৩৩
অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসার টাকা যায় কার কাছে?
উজ্জ্বল এ গমেজ
প্রিন্ট অ-অ+

দেশের মুঠোফোন অপারেটরদের সেবার মান নিয়ে গ্রাহকদের রয়েছে হাজারো অভিযোগ। কলড্রপ, বিভিন্ন প্যাকেজের (ভয়েস, ডেটা, বান্ডেল) মূল্য, বায়োমেট্রিক নিবন্ধন, মোবাইল ফোনে হুমকি, ফেসবুকে নিরাপত্তা, সাইবার অপরাধ, অপারেটরদের কলসেন্টার সম্পর্কিত সকল বিষয়ে ভোক্তাদের ন্যায্য অধিকার রক্ষায় কাজ করছে বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশন।


তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে জঙ্গি তৎপরতা বন্ধ, সিটিসেল গ্রাহকদের ক্ষতিপূরণ প্রদান ও পুনর্বাসন এবং বায়োমেট্রিকের জালিয়াতি বন্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ, মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ভবিষ্যৎ, নিরাপত্তা ঝুঁকি ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর প্রাপ্তি, অবৈধভাবে ভিওআইপি ব্যবসা পরিচালনা করে অর্থবিত্তের মালিক হচ্ছেন কারা এসব বিষয় নিয়ে সংগঠনটি বিভিন্ন সময় প্রতিবাদ সভা ও সেমিনারের মাধ্যমে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) ও সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করে যাচ্ছে।


বুধবার দুপুরে সংগঠনটির সভাপতি মহিউদ্দীন আহমেদের সাথে আড্ডা জমে রাজধানীর কারওয়ান বাজারস্থ বিবার্তার কার্যালয়ে। তিনি টেলিকম সেক্টরের নানান দিক নিয়ে দীর্ঘক্ষণ কথা বলেন বিবার্তা২৪.নেটের সাথে। তার সাথে একান্ত আলাপের চুম্বক অংশ বিবার্তার পাঠকদের উদ্দেশে তুলে ধরছেন উজ্জ্বল এ গমেজ।


বিবার্তা : সম্প্রতি দেশের মুঠোফোন অপারেটরগুলোর সেবার মান নিয়ে গ্রাহকদের অভিযোগ শুনতে গণশুনানির আয়োজন করে বিটিআরসি। এ বিষয়ে আপনার মূল্যায়ন কী।


মহিউদ্দীন : এসব সমস্যা নিয়ে দীর্ঘদিন যাবৎ সংবাদ সম্মেলন, সেমিনার করি এবং মন্ত্রণালয় ও বিটিআরসিতে স্মারকলিপি দেই। কিন্তু এসব কোনো সমস্যারই সমাধান না করে গত ২২ নভেম্বর বিটিআরসি একটি লোকদেখানো গণশুনানির আয়োজন করে। ওই গণশুনানিতে অপারেটরদের কোনো প্রতিনিধি না থাকায় এটি গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছে।


রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে। সকল গ্রাহকেরই ই-মেইল অ্যাড্রেস নেই। যার ফলে ভুক্তভোগী গ্রাহকরা এই রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করতে পারেনি।


বিবার্তা : মুঠোফোনের অপব্যবহারের ফলে দেশে সড়ক ও রেল দুর্ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর দায় কার?


মহিউদ্দীন : মুঠোফোনের অপব্যবহারের ফলে গত ৯ মাসে কেবল রেল দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে প্রায় ৮শ’ লোক। অথচ রেল আইনে বলা আছে, রেললাইনের এপাশ-ওপাশ মিলিয়ে ২০ ফুটের মধ্যে ১৪৪ ধারা জারি থাকে। এই আইন সম্পর্কে দেশের ৯৯ ভাগ লোকই জানেন না। এমনকি রেল বিভাগের বেশির ভাগ লোকও জানেন না। সড়ক পরিবহন আইনের ১৫৫ (বি) ধারায় বলা আছে, মুঠোফোন ব্যবহার করে গাড়ি চালানো দণ্ডণীয় অপরাধ। এ আইন অমান্য করলে ৫০০ টাকা জরিমানা অথবা কারাদণ্ড বা উভয় প্রকার শাস্তির বিধান রয়েছে। এসকল আইন সম্পর্কে জনসচেতনতা বা প্রয়োগ থাকলে দুর্ঘটনা অনেকাংশে কমে যেতো। আমরা মনে করি, সংশ্লিষ্ট সরকারি প্রতিষ্ঠান, মুঠোফোন অপারেটর, হ্যান্ডসেট বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানসহ সংশ্লিষ্ট খাতের কোনো প্রতিষ্ঠানই এই সকল সড়ক ও রেল দুর্ঘটনার দায় এড়াতে পারে না।



বিবার্তা : দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী কী মোবাইল ব্যাংকিংয়ের সেবা যথাযথভাবে পাচ্ছে? আপনার অভিজ্ঞতা কী বলে?


মহিউদ্দীন : দেশের প্রায় ৮৫% লোক মূল ব্যাংকিং সেবার বাইরে থাকায় সরকার ২০১১ সালে প্রথম মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালূ করে। কিন্তু শুরুতে এই ব্যাংকিং সেবার সার্ভিস চার্জ, সেবার মান, গ্রাহক নিরাপত্তা, হুন্ডি ব্যবসাসহ সকল বিষয়ে কোনো বাচবিচার না করে এ কার্যক্রম চালু হয়। যদিও বর্তমানে বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে বিশ্বের দ্বিতীয় এবং এশিয়া মহাদেশের মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করেছে। বর্তমানে প্রায় ২০ হাজার ৬শ কোটি টাকা বাৎসরিক লেনদেন হচ্ছে। এর সার্ভিস চার্জ প্রান্তিক অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দিচ্ছে বলে আমরা মনে করি। অন্যদিকে প্রায় ৬ লক্ষ রিটেইলারের উপর নজদারি না থাকায় এক দিকে তারা যেমন গ্রাহকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করছে, আবার এর মাধ্যমে জঙ্গি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জন্য নিরাপদ ব্যাংকিং হচ্ছে বলে আমরা মনে করি।


বিবার্তা : অবৈধ ভয়েস ওভার ইন্টারনেট প্রোটোকল (ভিওআইপি ) ব্যবসার টাকা যায় কার কাছে?


মহিউদ্দীন : রাষ্ট্রমালিকানাধীন মোবাইল অপারেটর টেলিটকের প্রায় ২২ লক্ষ সিম আজ পর্যন্ত নিবন্ধিত হয়নি। নিয়ম লঙ্ঘন করে এ সকল সিমের মাধ্যমে অপারেটরটি বিদেশ থেকে অবৈধ ভিওআইপি কল আনছে। অন্যান্য অপারেটরের অনেক সিম এই অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসায় জড়িত হচ্ছে। সরকার এটা জানার পরেও কেন এই ভিওআইপি ব্যবসা বন্ধ করতে পারছে না, আর এ অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসার টাকা যায় কার কাছে, এটা আমাদের প্রশ্ন। আমরা মনে করি, ভিওআইপি ব্যবসাকে বৈধতা প্রদান করলে এর থেকে রাষ্ট্র অনেক রাজস্ব আদায় করতে পারতো।


বিবার্তা : গ্রাহকরা প্রতিনিয়িতই অপারেটরগুলোর কাছ থেকে বিভিন্ন অফার ও মেসেজের নামে প্রতারণা শিকার হচ্ছে। এ বিষয়ে আপনার মতামত কী?


মহিউদ্দীন : বাংলাদেশের ১৯৯১ সালে মুঠোফোন আসার শুরু থেকেই এই খাতের গ্রাহকরা হয়রানির শিকার হয়ে আসছে। প্রথমত সঠিক তথ্যের ভিত্তিতে সিম নিবন্ধিত না হওয়ার ফলে সন্ত্রাসী, জঙ্গী এবং অসামাজিক খারাপ চরিত্রের লোকেরা গ্রাহকদেরকে বিভিন্ন ধরনের হুমকি-ধামকি, ম্যাসেজ ও ফোনের মাধ্যমে বিরক্ত করতো। সরকার এই থেকে রেহাই পেতে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধন করেছে। এই নিবন্ধন প্রক্রিয়ার শুরু থেকেই জালিয়াতির মাধ্যমে নিবন্ধনকৃত সিম বা অন্যের আঙ্গুলের ছাপ দিয়ে নিবন্ধিত সিম অপারেটররা বিক্রয় করেছে। যার ফলে খোদ বিটিআরসির নাম করেই অসংখ্য লোকের মুঠোফোনে ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়ে ও ফোন করে ওই গ্রাহকের পিন নাম্বার জেনে গ্রাহকের অ্যাকাউন্টের সব অর্থ আত্মসাৎ করেছে এ সব প্রতারক, যা আজো বিটিআরসি বন্ধ করতে পারেনি। শুধু পত্রপত্রিকায় সতর্কতামূলক বিজ্ঞাপন দিয়েই দায় সেরেছে। আবার মুঠোফোন অপারেটররা গ্রাহকদের বিভিন্ন অযাচিত অফারের ম্যাসেজ দিয়ে বিরক্ত করছে। অনেক সময় ওয়েলকাম টোন বা শর্টকোট থেকে ফোন দিয়ে বিভিন্ন অফার দিয়ে থাকে। কখনোবা গ্রাহকের অজান্তেই ফোনের বাটনে চাপ লেগে গেলেই নিজে থেকেই অফারটি ডাউনলোড হয়ে যাচ্ছে। ফলে গ্রাহকদের রিসার্জের টাকা কেটে নিচ্ছে অপারেটররা। এ নিয়ে প্রায় ৯০ ভাগ গ্রাহকই অন্তোষ প্রকাশ করে থাকে। কিন্তু প্রতিকার কিছুই পাওয়া যায় না। এই লুটপাটের টাকা আসলে কারা পায়, তা আমাদের জানা প্রয়োজন। আর তা না হলে এ অপরাধের দায় বিটিআরসি কিংবা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকেই নিতে হবে।


বিবার্তা : সাম্প্রতিক উবারের কার্যক্রম নিয়ে আপনাদের ভাবনা কি?


মহিউদ্দীন : মানুষের দৈনন্দিন জীবনের প্রায় ৮৫% ভাগ কাজ সম্পন্ন হচ্ছে মুঠোফোন ও ইন্টারনেটের মাধ্যমে। কিন্তু আমাদের দেশের সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহ এই প্রযুক্তি আগ্রাসন মোকাবেলায় কতটুকু সক্ষম তা বুঝা গেল ২২ নভেম্বর ঢাকায় উবার চালুর ঘোষণার পর। ২৫ নভেম্বর বিআরটিএ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানায় যে, উবার অবৈধ এবং এটি চালানো দণ্ডণীয় অপরাধ। কারণ দেশের টেক্সি সেবার জন্য ২০১০ সালে টেক্সি ক্যাব গাইড লাইন চালু আছে।


২০০৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোনিয়ায় যাত্রা শুরু করে উবার। গত ৭ বৎসর বিশ্বের প্রায় ৫ কোটি দেশে এই সেবা কার্যক্রম বিস্তৃত রয়েছে। এর বর্তমান মূলধন প্রায় ৬৮০০ কোটি ডলার, যা বিশ্বের সবচাইতে মূল্যবান স্টার্টঅ্যাপ বা নতুন ব্যবসার উদ্যোগ। প্রশ্ন হচ্ছে, এই সেবা সম্পর্কে ৭ বৎসর বিআরটিএ কি কিছুই জানতো না? বর্তমানে যে সকল দেশে উবারের কার্যক্রম আছে তা এক দিকে যেমন সুফল বয়ে এনেছে তেমনি এর অপব্যবহারের ফলে ধর্ষণ, খুনের মতো ঘটনাও ঘটেছে। তাই এ সেবার শুরুর আগে যাচাই করে বিটিআরসি ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান এবং ভোক্তা প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি নীতিমালা বা পর্যবেক্ষণ কমিটি তৈরি করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে আমরা আশা করি।


বিবার্তা/উজ্জ্বল/হুমায়ুন/মৌসুমী

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com