শিরোনাম
জাতীয় পার্টি কীভাবে সরকারের আশীর্বাদপুষ্ট?
প্রকাশ : ২৯ অক্টোবর ২০১৬, ১৬:২৪
জাতীয় পার্টি কীভাবে সরকারের আশীর্বাদপুষ্ট?
জাহিদ বিপ্লব
প্রিন্ট অ-অ+

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের শিল্প বিষয়ক উপদেস্টা কাজী মামুনুর রশীদ বলেছেন, বিএনপি আমাদের নেতা এরশাদকে দমিয়ে রাখার জন্য তার বিরুদ্ধে অসংখ্য মামলা দায়ের করেছিলো। আওয়ামী লীগ একাধিকবার জাতীয় পার্টির সমর্থনে রাষ্ট্রক্ষমতায় এলেও আমাদের প্রতি তারা সুবিচার করেননি। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের কোনো মামলা প্রত্যাহার করেনি। আমাদের কোনো রকম রাষ্ট্রীয় সুবিধা দেয়া হয়নি। তাহলে আমরা কীভাবে সরকারের আশীর্বাদপুষ্ট হলাম?


তিনি শনিবার পল্টনে তার ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে বিবার্তার সাথে এক সাক্ষাতকারে এসব কথা বলেন।


বিবার্তা : দেশের বর্তমান রাজনীতি নিয়ে প্রেক্ষাপট আপনার দৃষ্টিতে কেমন ?


কাজী মামুন : দৃশ্যত রাজনীতির মাঠ স্থিতিশীল থাকলেও রাজনৈতিক দলগুলোর ভিতরে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে মানুষের মাঝে আতংক ততই বেড়ে চলছে। আমাদের দেশে রাজনৈতিক মাঠ সবসময় নির্বাচনের আগে সরব হয়। বর্তমানে আন্দোলনের নামে যেসব সহিংসতা হয় তা দেখে রাজনীতির উপর সাধারণ মানুষের মধ্যে ঘৃণা সৃষ্টি হচ্ছে।
বিবার্তা : দেশের বিদ্যমান গণতন্ত্র নিয়ে কিছু আপনার বক্তব্য কী?


কাজী মামুন : এককথায় বললে বর্তমানে গণতন্ত্রের চর্চা হচ্ছে না। গণতন্ত্র মানে জনগণের শাসন, কিন্তু বর্তমানে তা সম্পূর্ণ বিপরীত। বাক-স্বাধীনতার খুব অভাব। রাজপথে সহঅবস্থানের কোনো সুযোগ নেই। বিরোধী মত প্রকাশকারী দলগুলোকে স্বাধীনভাবে প্রতিবাদ করতে দেয়া হচ্ছে না, যা রাজনীতি বা দেশের জন্য ভাল না। এখানে জনমতের মূল্য দেয়া হচ্ছে না। বিশেষ করে ৫ জানুয়ারির নির্বাচন, পরবর্তীতে সিটি কর্পোরেশন ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও জনগণ স্বাধীনভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে নাই।


বিবার্তা : দেশের আইন-শঙ্খলা পরিস্থিতি আপনার দৃষ্টিতে কেমন?


কাজী মামুন : আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি আমি বলবো অনেকটাই ভাল। বাইরের অনেক রাষ্ট্র আমাদের দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে মাথা ঘামায়, তাদের চেয়ে আমাদের দেশের আইন-শৃঙ্খলা শতগুণে ভাল। তবে কিছু অনাকাঙ্খিত বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটছে যা আমরা কামনা করি না। বিশেষ করে দেশের নারীসমাজ তথা স্কুল-কলেজগামী মেয়েদের প্রতি যেভাবে হামলা হচ্ছে তাতে গোটা দেশ আজ আতংকিত।


বিবার্তা : বর্তমান সরকার সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কী?


কাজী মামুন : বর্তমান সরকারের শীর্ষ নেতারাই বলে থাকেন - স্বল্প গণতন্ত্র, ব্যাপক উন্নয়ন। এতেই বুঝা যায় গণতন্ত্র এখানে কতটা অবহেলিত। তবে একথা অস্বীকার করা যাবে না যে বর্তমান সরকার সারাদেশে ব্যাপক উন্নয়ন করছে। এই উন্নয়নকাজ যদি সরকার গঠন করার পরপরই শুরু করতো তাহলে দেশ আরো এগিয়ে যেত।


বিবার্তা : আগাম নির্বাচনের কোনো সম্ভাবনা আছে কি? জাতীয় পার্টি কি আগাম নির্বাচনের পক্ষপাতী?


কাজী মামুন : আগাম নির্বাচন বলতে আমার মনে হয় নির্দিষ্ট সময়ের দুই-তিন মাস আগে নির্বাচন দিতে পারে। তবে গণতন্ত্রকে সংহত করার স্বার্থে, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের গ্লানি থেকে বেরিয়ে আসার জন্য দ্রুত একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের দিকে যাওয়া উচিত। সরকার যে কোনো সময় নির্বাচন ঘোষণা করুক না কেন, জাতীয় পার্টি নির্বাচনের জন্য সদাপ্রস্তুত।



বিবার্তা : বিএনপি সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কী?


কাজী মামুন : বিএনপি নিঃসন্দেহে একটি বড় দল - অস্বীকার করার কিছু নেই। বর্তমানে অনেকে মনে করে, বিএনপি সবচেয়ে জনপ্রিয় একটি দল। কিন্তু আমি মনে করি, একথাটি ঠিক নয়। অনেকটা বাধ্য হয়েই মানুষ বিএনপিকে সমর্থন দিচ্ছে। যারা বর্তমান সরকারকে অথবা তাদের কর্মকা- মেনে নিতে পারছে না তারা বিএনপিকে আশ্রয়স্থল হিসেবে ভাবছে। জাতীয় পার্টি যদি শক্তিশালী হয়ে দাঁড়াতে পারে সেই অংশ অর্থাৎ সরকারকে যারা পছন্দ করছে না তাদের সমর্থন আমাদের প্রতি আসবে। কারণ, জনগণ ভালভাবেই জানে, বিএনপি ও আওয়ামী লীগ একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ।


বিবার্তা : বিদেশি কোনো কোনো মেহমান আপনাদের সাথে বৈঠক না করায় আপনাদের গুরুত্ব নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এবিষয়ে আপনার বক্তব্য কী?


কাজী মামুন : জাতীয় পার্টি প্রধান বিরোধীদল সত্য, কিন্তু আজ বিরোধীদলের নেতা যদি আমাদের চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ থাকতেন তাহলে হয়ত এধরনের ঘটনা ঘটতো না। কেননা বহির্বিশ্বে আমাদের চেয়ারম্যানের ব্যাপক পরিচিত ও সুনাম রয়েছে। তাছাড়া এখানে আমাদের দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়েরও গাফলতি আছে বলে আমি মনে করি। কেননা বিদেশী কোনো রাষ্ট্রপ্রধান দেশে এলে কার সাথে সাক্ষাত হবে তা নির্ধারণ করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তাই এই ব্যর্থতা আমাদের নয়, সরকারের।


বিবার্তা : জাতীয় পার্টিকে অনেকে সরকারের আশীর্বাদপুষ্ট বিরোধীদল বলে। এ ব্যাপারে আপনার বক্তব্য কী?


কাজী মামুন : যারা এধরনের সমালোচনা করে, তারা কখনই আমাদের মঙ্গল চায় না। বিএনপি আমাদের নেতা এরশাদকে দমিয়ে রাখার জন্য তার বিরুদ্ধে অসংখ্য মামলা দায়ের করেছিলো। আওয়ামী লীগ একাধিকবার জাতীয় পার্টির সমর্থনে রাষ্ট্রক্ষমতায় এলেও আমাদের প্রতি তারা সুবিচার করেননি। আমাদের নেতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের কোনো মামলা প্রত্যাহার করেনি। আমাদের কোনো রকম রাষ্ট্রীয় সুবিধা দেয়া হয়নি। তাহলে আমরা কিভাবে সরকারের আশীর্বাদপুষ্ট হলাম? বরং হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ সরকারের বিভিন্ন অনিয়মের যেভাবে সমালোচনা করছেন তা বিএনপিও করছে না।


বিবার্তা প্রতিবেদক : জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক অবস্থা সম্পর্কে বলুন।


কাজী মামুন : জাতীয় পার্টির উপর বিগত ২৫ বছর যাবত যে অত্যাচার-অবিচার হয়েছে তা যদি অন্যকোন দলের প্রতি করা হতো তাহলে তাদের অস্তিত্ব থাকতো না। বিএনপি ক্ষমতার বাইরে মাত্র দশ বছর, তাতেই তাদের অস্তিত্ব আজ হারিয়ে যাবার পথে। আমরা রাজনীতির ময়দানে টিকে আছে কারণ এরশাদের শাসনামল ছিল উন্নয়নের স্বর্ণযুগ। জনগণের ভালবাসা আমাদের দল ও এরশাদের প্রতি আছে বিধায় এখনও বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল জাতীয় পার্টি। বাংলাদেশের এমন কোনো জেলা-উপজেলা এমনকি ইউনিয়ন নেই, যেখানে আমাদের সংগঠনের কার্যক্রম নেই। হয়ত কোনো কোনো জায়গায় কমিটি মেয়াদউত্তীর্ণ। আমরা ইতিমধ্যে মেয়াদউত্তীর্ণ ১২টি জেলার সম্মেলন নভেম্বরের মধ্যেই শেষ করবো।


বিবার্তা/বিপ্লব/কাফী/হুমায়ুন

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com