
এক বছরের বেশি সময় ধরে কারাবন্দী এক্সিম ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ও নাসা গ্রুপের কর্ণধার নজরুল ইসলাম মজুমদারকে জুলাই আন্দোলনের সময়কার একটি হত্যা মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেছিল পুলিশ। আজকে ওই মামলার শুনানিতে নিজের অসুস্থতার কথা তুলে ধরে বিচারকের উদ্দেশে তিনি বলেছেন, এর আগে দুই দফায় তাঁকে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। আবার রিমান্ডে নেওয়া হলে তিনি ‘হার্ট অ্যাটাক’ করবেন।
৮ ডিসেম্বর, সোমবার সকালে নজরুল ইসলাম মজুমদারকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত প্রাঙ্গণে এনে হাজতখানায় রাখা হয়। দুপুরের দিকে হেলমেট ও বুলেট প্রুফ জ্যাকেট পরিয়ে তাঁকে হাজতখানা থেকে আদালত ভবনের চতুর্থ তলায় কোর্ট-৩–এ ওঠানো হয়। এ সময় তাঁর দুই হাতে ছিল হাতকড়া।
কাঠগড়ায় ওঠানোর পর নজরুল ইসলামের মাথা থেকে হেলমেট নামিয়ে রাখেন পুলিশ সদস্যরা। কিছুক্ষণ পর রিমান্ড শুনানি শুরু হয়। জুলাই আন্দোলনের সময় গুলশানের শাহজাদপুর এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে কামাল হোসেন প্রকাশ সবুজ (৪০) হত্যা মামলায় তাঁর ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা গুলশান থানার উপপরিদর্শক রেজাউল করিম।
রিমান্ড আবেদনে রেজাউল করিম বলেন, ‘মামলার ঘটনাস্থল পরিদর্শনসহ ঘটনাস্থলের আশপাশে বিশ্বস্ত গুপ্তচর নিয়োগ করি। বিশ্বস্ত গুপ্তচর ও আমার গোপনীয় তদন্তে উল্লিখিত আসামি এই মামলার ঘটনার সঙ্গে জড়িত অপর সহযোগী আসামিদের মধ্যে অর্থ সরবরাহ ও পর্যায়ক্রমে উসকানি দিয়েছে মর্মে পর্যাপ্ত সাক্ষ্য–প্রমাণ পাওয়া গেছে।’
এ সময় রিমান্ড বাতিল চেয়ে শুনানিতে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা বলেন, নজরুল ইসলাম এই মামলায় সন্দিগ্ধ আসামি। ঘটনার সঙ্গে আসামির কোনো সম্পৃক্ততা নেই। তদন্ত কর্মকর্তা তা নিজের মুখে বলেছেন। জুলাই আন্দোলনের সময় আসামি দেশে ছিলেন না। আসামি বয়স্ক, অসুস্থ ব্যক্তি। মানবিক দিক বিবেচনা করে রিমান্ড বাতিলের প্রার্থনা করেন তাঁরা।
এ সময় কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে থাকা নজরুল ইসলাম মজুমদার বলেন, ‘আমি গুরুতর অসুস্থ। আমি হার্টের রোগী। আমার ওপেন হার্ট সার্জারি করা হয়েছে। অনেকবার জেলখানায় হার্টে পেইন (ব্যথা) উঠেছে। জেলখানায় চিকিৎসাও চলেছে। আমার বুকের রাইট কর্নারে ব্যথা ওঠে। এর আগেই দুই দফা রিমান্ডে নেওয়া হয়। তদন্ত কর্মকর্তা জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। রিমান্ডে নেওয়া হলে কিছুই করার থাকবে না। মামলা যেহেতু হয়েছে। কিছুই করার নেই। আবারও যদি রিমান্ডে নেওয়া হয়, তাহলে আমার হার্ট অ্যাটাক হতে পারে। হার্ট অ্যাটাক করব। আমি অসুস্থ, বয়স্ক ব্যক্তি। প্রয়োজনে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দিতে পারেন।’
এ সময় রাষ্ট্রপক্ষের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর মুহাম্মদ শামছুদ্দোহা সুমন রিমান্ড মঞ্জুরের পক্ষে জোরালো বক্তব্য তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনা এক দিনে ফ্যাসিস্ট সরকার হয়ে ওঠেননি। আসামিরা অর্থ জোগান দিয়ে ফ্যাসিস্ট সরকার হওয়ার জন্য সহযোগিতা করেছেন। আসামি ঘটনার সঙ্গে জড়িত, তিনি একজন অর্থ জোগানদাতা। মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে আসামির ১০ দিনের রিমান্ডের প্রার্থনা করছি।’
উভয় পক্ষের শুনানি শেষে ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. সেফাতুল্লাহ নজরুল ইসলামের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এই মামলার অভিযোগে বলা হয়, জুলাই আন্দোলন চলাকালে গত বছরের ১৯ জুলাই গুলশান থানার শাহজাদপুরের বাটার গলি এলাকায় আন্দোলনে অংশ নেন কামাল হোসেন (৪০)। ঘটনার দিন দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান তিনি। এ ঘটনায় গত ৭ জুলাই রাজধানীর গুলশান থানায় মামলা হয়।
গত বছর ১ অক্টোবর রাতে রাজধানীর গুলশান এলাকা থেকে নজরুল ইসলাম মজুমদারকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। এর পর থেকে তিনি কারাগারে বন্দী আছেন।
বিবার্তা/এসএস
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]