হিলি সীমান্তে ঈদ আনন্দ ভাগ করতে স্বজনদের ভিড়
প্রকাশ : ২৩ এপ্রিল ২০২৩, ১৯:২৮
হিলি সীমান্তে ঈদ আনন্দ ভাগ করতে স্বজনদের ভিড়
হিলি, দিনাজপুর প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

এপার বাংলাদেশ অপর পাশে ভারত। মাঝখানে সীমানা কাঁটা তারের বেড়া। তবুও ঈদের খুশির দিনে ভারতে থাকা স্বজনদের এক নজর দেখতে, দূর থেকে কথা বলতে ও বিভিন্ন স্থান থেকে সীমান্ত দেখতে আসা দশনার্থীরা দিনাজপুরের হিলি সীমান্তে জড়ো হয়েছিল শতাধিক দর্শনার্থীরা। এখানে সরাসরি কথা না বলতে পারলেও দুর থেকে স্বজনদের দেখে শান্তি খুঁজে নেন তারা। সীমান্তের জিরো পয়েন্টে ফটোসেশন করে আনন্দ উপভোগ করতে দেখা গেছে অনেক দর্শনার্থীদের। 


রবিবার (২৩ এপ্রিল) সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত হিলি সীমান্তে শুন্যরেখা জড়ো হতে থাকে দর্শনার্থীরা। ঈদের দিন বিকেল থেকেই সীমান্তের শূন্য রেখায় ভিড় করে  দর্শনার্থীরা। এ এক অন্যরকম দৃশ্য। জড়ো হওয়া দর্শনাথীরা সীমানা ঘেঁষে দূরপাল্লার রেল লাইনে সেলফি তুলছেন। কেউ দূর  থেকে দাঁড়িয়ে স্বজনদের সঙ্গে ইশারায় কথা বলছেন। আবার কেউ কাটা তারের বেড়ার এপার থেকে স্বজনদের এক নজর দেখে তৃপ্তি নিচ্ছে। বড়দের সঙ্গে ছোটরাও শামিল হয়েছিলেন এই ভিড়ে।


হিলি স্থলবন্দরের দু-দেশের সীমান্ত শহরের নামেই হচ্ছে হিলি। দু-দেশের হিলি শহরের মাঝ দিয়ে রয়েছে রেললাইন। রেললাইনের এপার বাংলাহিলি আর ওপার ভারত হিলি।


বাংলাদেশ ও ভারতের নিকটবর্তী শহর হিলি হওয়ায় এই শহর দেখতে ছুটে চলে আসে অনেকেই। ঈদের দিন বিকেল থেকেই হিলি সীমান্তের চেকপোস্ট গেট এলাকায় ভিড় করেন দর্শনার্থীরা। শুধু ঈদের দিন নয় সাপ্তাহিক শুক্রবার ও শনিবার ছুটির দিনেও প্রতিদিনেই দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে যাত্রীবাহী বাস, প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস, মোটর সাইকেল, অটোরিক্সা, ভ্যানসহ বিভিন্ন যানবাহনের মাধ্যমে করে তারা এখানে আসেন।অপর দিকে ভারতের অভ্যন্তরের বিভিন্ন স্থান থেকে দর্শনার্থীরা আসেন ভারতের জিরোপয়েন্টে।


সেখানে কথা হয় দিনাজপুর ফুলবাড়ী থেকে আসা আহসান হাবীব নামের একজনের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমার বাবার সাত ভাই। এরমধ্যে বাবা বাংলাদেশে থাকেন, বাকি চাচারা ভারতে। বেশ কিছুদিন ধরে তাদের সঙ্গে সরাসরি কথা হয়নি। ফেসবুক মেসেঞ্জার হোয়াটসঅ্যাপে কথা হয়। আজকে সরাসরি কথা বলতে না পারলেও দুর থেকে এক নজর দেখে নিজেকে খুব খুশি লাগছে।


পলাশবাড়ী থেকে আসা আসমতি রানী সীমান্তের কাটা তারের বেড়ার এপারে বাংলাদেশ অংশে দাড়িয়ে বলছে ও মাসি তুমি কেমন আছো। কতো দিন তোমাকে দেখতে পাই না। 


তিনি বলেন, আমার মাসি পিষি দুজনই স্ব পরিবারে ভারতে থাকে। অনেক দিন পর ঈদের ছুটিতে দূর থেকে হলেও মাসিকে  দেখতে ও কথা বলতে এসেছি। কাছে গিয়ে কথা বলতে পারলাম না দুর থেকে দেখেও ভালো লাগলো।


জয়পুরহাট থেকে আসা দশনার্থীর মাসুদ রানা বলেন, ঈদের ছুটিতে ছেলে মেয়েদের বিনোদনের উদ্দেশ্যেই হিলি সীমান্ত এলাকা দেখতে এসেছি।এতদিন শুনেই এসেছি আজ অনেক কাছ থেকে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকা ঘুরে দেখলাম পরিবারের সদস্যদের নিয়ে। সেখানে ঘুরে বেড়িয়েছি ও ছবি তুলেছি,সব মিলিয়ে খুব ভালো লাগলো এখানে এসে।


বিজিবি সদস্য বলেন, সীমান্ত রক্ষার দায়িত্বে রয়েছি। দুই দেশের লোকজন ঈদের ছুটিতে দুপাশে ভিড় করে। তারা স্বজনদের সঙ্গে দেখা করতে আসে। কিন্তু নিরপাত্তার কারণে কাছে গিয়ে কথা বলার কোনো সুযোগ দেওয়া হয় না।


দর্শনার্থীরা বলেন, সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে দুই বাংলাকে ভাগ করে দিলেও আমাদের মনকে তো আর ভাগ করা যায়নি। আগে তো দুই বাংলা একই ছিল। তাই ভালোবাসার টানে, প্রাণের টানে, নাড়ির টানে তারা ছুটে এসেছেন সীমান্তের জিরো পয়েন্টে। এ ছাড়াও তাদের অনেক আত্মীয়স্বজন রয়েছেন ভারতে। সীমন্তে  কাঁটাতারের ফাঁক দিয়ে দূর থেকে আত্মীয়স্বজনকে দেখছেন দর্শনার্থীরা।


হিলি ইমিগ্রেশন চেকপোস্টের অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শেখ আশরাফ বলেন, ঈদুল ফিতর উপলক্ষে হিলি ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দিয়ে দু-দেশের মধ্যে পাসপোর্ট যাত্রীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। তা ছাড়া অনেক আত্মীয়স্বজন আসছে যাত্রীদের সঙ্গে।


তিনি বলেন, দুদিন থেকে লক্ষ করছি রেললাইনের দুপাশে অনেক দর্শনার্থী দাঁড়িয়ে থেকে দূর থেকে আত্মীস্বজনের সঙ্গে কথা বলেন। এমন দৃশ্য নিজেকে খুব মুগ্ধ করে। দেখে মনে হয়, জিরো পয়েন্টের এপাশ-ওপাশ মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে। শতাধিক দর্শনার্থীতে মুখরিত দুপাশ।


বিবার্তা/রব্বানী/এসবি

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com