নিরব ঘাতক গরমে আরামের এসি
প্রকাশ : ০২ মে ২০২৪, ১০:১৯
নিরব ঘাতক গরমে আরামের এসি
লাইফস্টাইল ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

গরমে আরামের জন্য এয়ার কন্ডিশন (শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র) বা এসির বিকল্প নেই। রাজধানী বেশিরভাগ শপিং মল থেকে শুরু করে অফিস-আদালত ও বাসা-বাড়িতেও এখন স্থান করে নিয়েছে এসি। কিন্তু গরম থেকে রক্ষা পেতে জনপ্রিয় হয়ে ওঠা এসি ব্যবহারের শারীরিক ক্ষতিও রয়েছে, যা সম্পর্কে অবগত নন বেশিরভাগ মানুষই।


চিকিৎসকরা বলছেন, নিরবে মারাত্মক ক্ষতি করে চলেছে এই যন্ত্র। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে থাকতে থাকতে শরীর এক ধরনের তাপমাত্রায় অভ্যস্ত হয়ে যায়। কোনও কারণে এর ব্যত্যয় ঘটলেই দেখা দেয় বিভিন্ন সমস্যা।


বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসিতে অভ্যস্ত হয়ে গেলে চোখ ও ত্বক শুষ্ক হয়ে যাওয়া ছাড়াও ঠাণ্ডাজনিত সমস্যা, চোখ লাল হওয়া, চোখ থেকে অবিরাম পানি পড়া, শরীরে রক্ত সঞ্চালনের ঘাটতি, শরীরের জয়েন্টে ব্যাথা, হাঁপানি, অতিরিক্ত ওজন (ওবেসিটি), শ্বাসকষ্ট, অ্যাজমা, সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত হওয়া এবং অ্যালার্জিতে আক্রান্ত হওয়াসহ অন্তত ১০টি রোগে আক্রান্তের আশঙ্কা থাকে।


প্রিভেন্টিভ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, ‘শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র নিয়ে মানুষ একেবারেই অসচেতন। এই যন্ত্রটি ভয়াবহভাবে মানুষের শরীরকে ডমিনেট করছে। এসির ঠাণ্ডা পরিবেশ অনেক অসুখের লক্ষণ বাড়িয়ে দেয়।’


উদাহরণ তুলে ধরে ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, ‘অতিরিক্ত এসির ব্যবহার কম রক্তচাপ আরও কমিয়ে দিতে পারে। শরীরের বিভিন্ন জয়েন্ট ও স্নায়ুর ব্যথা বেড়ে যায়। আবার যারা দিন-রাতের বেশিরভাগ সময় এসিতে থেকে অভ্যস্ত, তাদের গরম সহ্য করার ক্ষমতা কমে যায়। অ্যালার্জি ও অ্যাজমার সমস্যা যাদের রয়েছে, তারা ক্রমাগতভাবে এসিতে থাকলে এসব অসুখগুলো বেড়ে যাওয়ার প্রবণতাও অনিবার্য। এছাড়া, এসির ঠাণ্ডা পরিবেশ থেকে বাইরের গরমে গেলে কিংবা গরম থেকে এসির ঠাণ্ডায় গেলে তাপমাত্রার তারতম্যের কারণে মানুষের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়।’


এসি পরিবেশেরও ক্ষতি করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘অনেকগুলো এসি যখন একটি ভবনে চলতে থাকে, তখন গরম যে বাতাস বের করে দেয়, তা বাইরের পরিবেশের ওপর প্রভাব ফেলে। বাইরের তাপমাত্রা বাড়িয়ে দেয়। অন্যদিকে, এসির ফিল্টার নিয়মিত পরিষ্কার করা না হলে বাতাসে ব্যাকটেরিয়া মিশে বিভিন্ন অসুস্থতার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।’


ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালের ভাসকুলার সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. সাকলায়েন রাসেল ‘অতিরিক্ত ঠাণ্ডার কারণে ঠাণ্ডাজনিত সমস্যা— হাঁচি-কাশি থেকে শুরু করে দীর্ঘস্থায়ী কাশি এবং কারও কারও ক্ষেত্রে গলাব্যাথা থাকাও খুব স্বাভাবিক হয়ে যায়। আবহাওয়ার তারতম্যের কারণে শরীরে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। হাতের আঙুলের রক্তসঞ্চালন কমে যায়, যা নারীদের ক্ষেত্রে বেশি দেখা যায়। এছাড়া, অপারেশনের রোগী অতিরিক্ত ঠাণ্ডায় থাকলে রক্তনালী সঙ্কুচিত হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। রক্তের প্রবাহ ধীরগতির হওয়ায় ঘা শুকানোর গতিও কমে যায়।’


হাসপাতালগুলোতে ব্যবহৃত এসি অথবা আইসিইউতে থাকা এসি নিয়মিত পরিষ্কার করা না হলে রোগীদের শরীরে সংক্রমণ হওয়ার আশঙ্কা থাকে বলেও জানান ডা. সাকলায়েন। তিনি বলেন, ‘শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত রুম বা গাড়িতে বেশকিছু জীবাণু বাস করে। এগুলো মানুষের শরীরে রোগের জন্ম দেয়, যা আমাদের ভাবনারও বাইরে।’


চিকিৎসকরা বলছেন, এসির তাপমাত্রা ১৮ থেকে ১৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসে না রেখে ২৪ থেকে ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে রাখা নিরাপদ। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত রুমগুলো মাঝে-মধ্যে খুলে দিয়ে বাইরের আলো-বাতাস চলাচল করার সুযোগ করে দেওয়া পরামর্শও দেন তারা। ডা. লেলিন বলেন, ‘এসি থেকে বাইরে বের হওয়ার আগে বাইরের গরম আবহাওয়ায় দাঁড়িয়ে শরীরকে বাইরের তাপমাত্রার সঙ্গে সহনীয় করে তুলতে পারলে ভালো।’ যারা সবসময় এসিতে থাকতে অভ্যস্ত, তাদেরকে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি ও তরল খাবার খাওয়ার পরামর্শও দেন তিনি।


বিবার্তা/মাসুম

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com