শিরোনাম
‘টাকা দে, না হয় ছেলেকে মারবো’
প্রকাশ : ২০ ডিসেম্বর ২০১৬, ১৯:০৭
‘টাকা দে, না হয় ছেলেকে মারবো’
খলিলুর রহমান
প্রিন্ট অ-অ+

‘তর ছেলে আমাদের কাছে আছে। যদি ফেরত নিতে হয় তা হলে ৪০ হাজার টাকা পাঠাতে হবে।’


সোমবার দুপুরে এমন বার্তা এসেছিল গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলার পাকুড়পার গ্রামের বাসিন্দা ভরত চন্দ্র বরাইয়ের মোবাইল ফোনে।


এটাই শেষ নয়, কিছুক্ষণ পরে আবার মেসেজ আসে মোট ৩৫ লাখ টাকা দিতে হবে, না হয় ছেলেকে মারা হবে। তবে টাকাগুলো আগামী ২৬ ডিসেম্বরের মধ্যে দিতে হবে।


মঙ্গলবার বিকালে বিবার্তাকে এসব তথ্য জানান ভরত চন্দ্রের বড় ছেলে প্রণব চন্দ্র বরাই। তিনি রাজধানীর ভাটারা থানার বারিধারায় একটি রিজার্ভ ট্যাংক থেকে উদ্ধার করা নিহত কপিল চন্দ্র বারইয়ের বড় ভাই।


তিনি জানান, কপিল চন্দ্র বরাই রাজধানীর ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল একাডেমিতে কম্পিউটার বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। এ সুবাদে তিনি ভাটারার হাইস্কুল রোডের ১ নং বাসায় থাকতেন। দুই রুমের ওই বাসার এক রুমে তার বড় ভাই প্রণবও থাকতেন। অন্য রুমে থাকতেন সুমন ও রানা নামের তাদের দুই আত্মীয়। সুমন ব্রিটিশ অ্যাম্বেসিতে চাকরি করেন এবং রানা মেকানিকের কাজ শিখছেন। তবে গত কয়েক দিন থেকে সুমন ও রানা বাসায় ছিলেন না। ১৬ ডিসেম্বর ছোট ভাই কপিলকে রেখে প্রণবও বাড়ি গিয়েছিলেন।


প্রণব জানান, পারিবারিক কাজে তাদের বাবা ঢাকায় আসছিলেন। তাকে নিয়ে গত ১৬ ডিসেম্বর তিনি টুঙ্গিপাড়ায় যান। বাড়িতে পৌঁছার ওই দিন রাত ৮টায় প্রণবের সাথে তাদের কথা হয়। ওটিই ছিল তার সঙ্গে শেষ আলাপ। এরপর ১৭ ডিসেম্বর থেকে মোবাইল ফোন বন্ধ হয়ে যায়। এক পর্যায়ে মোবাইল খোলা পাওয়া যায়, তবে সংযোগ পাওয়া যাচ্ছিল না।



১৮ ডিসেম্বর ভাইয়ের সন্ধানে ঢাকায় চলে আসেন প্রণব। সারাদিন খোঁজাখুজি করেও কপিলকে পাননি তিনি। পরে ভাটারা থানায় একটি সাধারণ ডায়রি করেন প্রণব। তিনি জানান, সর্বশেষ সোমবার দুপুরে তার ছোট ভাইয়ের মোবাইল ফোন থেকে ৪০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দাবি করে একটি এসএমএস আসে। এ সময় তারা পুনরায় ওই নাম্বারে ফোন দিলেও সংযোগ পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে এসএমএসের মাধ্যমে তারা জানান টাকা পাঠাবেন। পরবর্তীতে তাদের একটি বিকাশ নাম্বারও দেয় অপহরণকারীরা।


প্রণব আরো জানান, কিছুক্ষণ পর আরো একটি এসএমএস আসে। সেটাতে ৩৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। তিনি জানান, ওই টাকা আগামী ২৬ তারিখের মধ্যে পরিশোধ করতে বলা হয়েছিল। এভাবে মঙ্গলবার বেলা পৌনে ৩টা পর্যন্ত ৭ থেকে ৮টা এসএমএস এসেছে। তবে নিরাপত্তাজনিত কারণে সব এসএমএস সম্পর্কে বলতে চাননি প্রণব।


জনতা ব্যাংকের সাবেক কর্মকর্তা ভরত চন্দ্র বরাইয়ের বড় ছেলে প্রণব আরো জানান, ২০১১ সালে লেখাপাড়ার উদ্দেশ্যে ঢাকায় আসে কপিল। পরে সে ক্যামব্রিয়ান কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে। এরপর তাকে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি করা হয়।


এক প্রশ্নের জবাবে প্রণব বলেন, আমাদের কোনো শত্রু নেই। তবে কেন, কিজন্য আমার ভাইকে খুন করা হলো, তা বলতে পারছি না।


এদিকে মঙ্গলবার বিকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গের সামনে গিয়ে দেখা গেছে, কপিলের লাশ মর্গে, বাইরে বসে আসেন তার স্বজনরা। এ সময় অনেককেই কান্নাকাটি করতে দেখা যায়।


কপিলের চাচাতো বোন পারুল কেঁদে কেঁদে বলছিলেন, এক সপ্তাহ আগে তিনি বাড়ি গিয়েছিলেন। এ সময় কপিলও বাড়ি যেতে চেয়েছিল। কিন্তু তিনি তাকে নেননি। পারুল বলেন, আমি তাকে বলেছিলাম তুমি এখন বাড়ি যাওয়ার প্রয়োজন নাই। পরে যেও।


চাচাতো ভাই প্রণবকে জড়িয়ে ধরে পারুল বলেন, কে আমার কাকার এতো বড় ক্ষতি করলো, কেন করলো?


উল্লেখ্য, গত সোমবার রাতে বারিধারার জে ব্লকের ৩ নম্বর রোডে একটি নির্মাণাধীন বাড়ি থেকে কপিলের লাশ উদ্ধার করা হয়। মঙ্গলবার সকালে লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়।


ভাটারা থানার এসআই জিয়াউর রহমান জানান, ওই যুবকের মাথায় ধারালো অস্ত্রের আঘাত রয়েছে। দুষ্কৃতকারীরা তাকে হত্যা করে লাশ গুম করার উদ্দেশ্যে বেল্টের সাথে বালুর বস্তা বেঁধে ট্যাংকের মধ্যে ফেলে দেয়। তার পরণে ছিল নীল-কালো ডোরাকাটা ফতুয়া ও জিন্সের প্যান্ট।


তিনি আরো জানান, ঘটনার সাথে জড়িতদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।


বিবার্তা/খলিল/মৌসুমী/হুমায়ুন


সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com