
রাজধানীর দক্ষিণখান থানার আশকোনায় জঙ্গি আস্তানায় অভিযানকালে এক নারী জঙ্গীর আত্মঘাতী হওয়ার ঘটনা সাধারণ মানুষ তো বটেই, এমনকী পুলিশকেও বিস্মিত করেছে। কেননা, নারী জঙ্গীর আত্মঘাতী হওয়ার ঘটনা বাংলাদেশে এটাই প্রথম। তাই এর কারণ জানতে অনুসন্ধানে নেমেছে পুলিশ।
উল্লেখ্য, গত শনিবার রাজধানীর আশকোনায় জঙ্গি আস্তানায় পুলিশের অভিযানকালে দুই নারী জঙ্গি তাদের দুই শিশু সন্তানকে নিয়ে আত্মসমর্পণ করলেও আরেক নারী জঙ্গি তার শিশুকে নিয়ে বের হয়ে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই নিজের পরণের ‘সুইসাইডাল ভেস্ট’টি বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আত্মঘাতী হয়। এছাড়া আস্তানার ভেতরে গুলিবিদ্ধ হয়ে আফিফ কাদেরী ওরফে আদর নামের এক জঙ্গি কিশোর নিহত হয়।।
এই অভাবিত ঘটনায় বিস্মিত পুলিশ এখন জানতে চাইছে নারীদের আত্মঘাতী হওয়ার কারণ কী? মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া সেন্টারে সাংবাদিকদের কাছে এ তথ্য জানিয়েছেন কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম।
তিনি জানান, জঙ্গিদের তো নারীদের ঘর থেকে বের হতে দেয়ারই কথা না। তাদের বিশ্বাস অনুযায়ী নারীরা জঙ্গিদের সাপোর্ট করবে, সেবা দেবে, তাদের সন্তানদের জিহাদী শিক্ষা দেবে, কিন্তু কখনো আত্মঘাতী হবে না। অথচ এখন তা-ই হচ্ছে। কেন হচ্ছে?
মনিরুল ইসলাম জানান, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে নারী জঙ্গিরা স্বামীর কারণে বাধ্য হয়ে আত্মঘাতী হচ্ছে। দক্ষিণ খানের আশকোনায় ‘সুইসাইডাল ভেস্ট’ বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নিহত হওয়া নারীর কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের ধারণঈ, সে হতাশা থেকে এই পথ বেছে নিয়েছিল। কারণ, তার প্রথম স্বামী ইকবাল মারা যাওয়ার পর জঙ্গি সুমনের সাথে তার বিয়ে হয়। সুমন তাকে জঙ্গিবাদে যুক্ত করে। সুমনও কিছুদিন আগে গ্রেফতার হয়ে জেলে রয়েছে বলে জানা গেছে। এতে তার আর যাওয়ার কোনো জায়গা থাকলো না - এমন ধারণাতেই সেই নারী আত্মঘাতী হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকতে পারে।
গত ১০ সেপ্টেম্বর রাতে আজিমপুরে বিডিআর ২ নম্বর গেটের পাশে এক বাড়িতে সন্দেহভাজন জঙ্গিদের আস্তানায় অভিযান চালায় পুলিশ। ওই অভিযানে আহত তিন নারীকে আটক করে হাসপাতালে পাঠানো হয়। চিকিৎসা শেষে তাদের ৭ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়। রিমান্ডে তারা স্বীকার করে, স্বামীদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে জঙ্গিবাদে যুক্ত হয়।
আজিমপুরে গ্রেফতার হওয়া নারীদের উদাহরণ টেনে পুলিশের ঊধ্বর্তন কর্মকর্তা মনিরুল বলেন, নিহত জঙ্গি তানভীর কাদেরীর স্ত্রী জানিয়েছিলো, জঙ্গিবাদে যুক্ত না হলে স্বামী তাকে তালাক দিতো। সামাজিক ও আত্মীয়স্বজনের কাছে লজ্জিত হওয়ার ভয়ে সে জঙ্গিবাদে সম্পৃক্ত হয়। জঙ্গি মারজানের স্ত্রী প্রিয়তিও একই রকম তথ্য জানিয়েছিলো।
আশকোনার আস্তানা থেকে গ্রেফতার হওয়া দুই নারীকে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে জানিয়ে মনিরুল ইসলাম বলেন, কোথা থেকে এসব অস্ত্র আনা হয়েছিল, কিভাবে আনা হয়েছিল তা ভাসা ভাসা জানা গেছে। বিস্তারিত তথ্য জানা যাবে পলাতক জঙ্গি মুসাকে গ্রেফতার করতে পারলে। মুসাকে গ্রেফতারে পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
এদিকে, আশকোনার ওই আস্তানাটি এখন পর্যন্ত পুলিশি পাহারায় রয়েছে। আস্তানার আশপাশের বাসায় বাসিন্দাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে বাসায় প্রবেশ করার অনুমতি দিচ্ছে পুলিশ। তবে স্থানীয় বাসিন্দা ছাড়া অন্য কাউকে ওই এলাকায় প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না। মঙ্গলবার দুপুরে স্থানীয় বাসিন্দারা বিবার্তাকে এমন তথ্য জানিয়েছেন।
বিবার্তা/খলিল/হুমায়ুন/মৌসুমী
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]