শিরোনাম
ফিরে দেখা ২০১৬
কুমিল্লার তনু থেকে সিলেটের খাদিজা
প্রকাশ : ৩১ ডিসেম্বর ২০১৬, ১৮:২১
কুমিল্লার তনু থেকে সিলেটের খাদিজা
খলিলুর রহমান
প্রিন্ট অ-অ+

দিন আসে, দিন যায়। এভাবে চলে যায় বছরের ৩৬৫ দিন। তবে ওই দিনগুলোতে অনেকগুলো ঘটনা ও দু্র্ঘটনার জন্মও দিয়ে থাকে। এমন কিছু ঘটনা ঘটে যা সবাইকে তাক লাগিয়ে দেয়। ২০১৬ সালে এমনই দুটি ঘটনা বাংলাদেশে ঘটেছিল, যা সবার অন্তরে নাড়া দিয়েছে। এছাড়াও আলোচনা-সমালোচনা ঝড় বইয়ে যায় দেশজুড়ে।


বছরের শুরুতে প্রথম ঘটনাটি ঘটেছিল কুমিল্লায়, কলেজ ছাত্রী সোহাগী জাহান তনু হত্যা। দ্বিতীয় ঘটনাটি বছরের শেষের দিকে সিলেটে, কলেজ ছাত্রী খাদিজা আক্তার নার্গিসকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা। ওই দুই ঘটনার বিচারকার্য্য বর্তমানে চলামান রয়েছে।


ঘটনা দুটির সারাংশ বিবার্তা পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো:


সোহাগী জাহান তনু:


২০১৬ সালের ২০ মার্চ। ওই দিন রাতে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী ও নাট্যকর্মী সোহাগী জাহান তনুর লাশ উদ্ধার করা হয়। কুমিল্লা সেনানিবাস এলাকার একটি ঝোপে সোহাগী জাহান তনুর লাশ পাওয়া যায়। এরপর তনু হত্যার বিচারের দাবিতে উত্তাল হয়ে ওঠে সারা দেশ।


তনু কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী ছিলেন। তার বাবা ইয়ার হোসেন কুমিল্লা সেনানিবাসে বোর্ডের অফিস সহায়ক পদে কর্মরত। এক পর্যায়ে তনুর বাবা ইয়ার হোসেন বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। প্রথমে পুলিশ মামলাটির তদন্ত শুরু করে। তারপর তা র‌্যাবের নিকট হস্তান্তর হয়। পরে তদন্ত চলে যায় সিআইডির কাছে। সিআইডির তত্ত্বাবধানে লাশ আবার মাটি খনন করে তুলে নিয়ে ময়নাতদন্ত করা হয়। তারপর আরও বিভিন্ন ধরণের খবর পাওয়া যায়।


পরবর্তীতে ২৮ মার্চ ডিএনএ নমুনা সংগ্রহের জন্য তনুর লাশের দ্বিতীয় ময়নাতদন্তের জন্য আদালতে আবেদন করে ডিবির জেলা শাখা। তাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে ৩০ মার্চ তনুর লাশ কবর থেকে উত্তোলন করে দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত ও ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এরপর ৪ এপ্রিল কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগ থেকে প্রথম ময়নাতদন্ত প্রকাশ করা হয়। ওই প্রতিবেদনে তনুকে হত্যা এবং ধর্ষণের আলামত পাওয়া যায়নি বলে উল্লেখ করা হয়। বর্তমানে তনু হত্যা মামলা বিচারাধীন রয়েছে।


তনু’র পর সিলেটের খাদিজা:


কুমিল্লার কলেজ ছাত্রী সোহাগী জাহান তনু হত্যার রেশ কাটতে না কাটতে সিলেটের এমসি কলেজ ক্যাম্পাসে খাদিজা আক্তার নার্গিসকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা করে বখাটে বদরুল আলম। এ ঘটনার প্রতিবাদে সারাদেশ উত্তাল হয়ে উঠে।


খাদিজা আক্তার নার্গিস সিলেট সদর উপজেলার মোগলগাঁও ইউনিয়নের হাউসা গ্রামের মাসুক মিয়ার মেয়ে। সে সিলেট সরকারী মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী। গত ৩ অক্টোবর বখাটে বদরুলের এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাতে জখম হয় খাদিজা। পরদিন মুমূর্ষ অবস্থায় তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য নিয়ে আসা হয় রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে। এ সময় তার জিসিএস ছিল মাত্র ৫। সম্পূর্ণ অচেতন অবস্থা ছিল তার। বাঁচার সম্ভাবনা খুবই কম ছিল।


পরে লাইফ সাপোর্ট দিয়ে তাকে নিবিড় পরিচার্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) পাঠানো হয়। সেখানে সি.টি. স্ক্যান করে দেখা যায়, ব্রেনের বিভিন্ন অংশ গুরুতর আক্রান্ত এবং মিডলাইন থেকে সরে গেছে। এ অবস্থায় তাকে সাথে সাথেই অপারেশনে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে নিউরোসার্জারী বিভাগের কনসালট্যান্ট ডা. এ এম রেজাউল সাত্তারের নেতৃত্বে মস্তিস্কে ডিকমপ্রেসিভ সার্জারি করা হয়। পরে আইসিইউতে ধীর গতিতে তার অবস্থার উন্নতি হয়।


গত ১৭ অক্টোবর অর্থোপেডিক বিভাগের ডা. মেসবাহ উদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে খাদিজার ডান হাতে মাল্টিপল ফ্লিক্সার টেনটন রিপেয়ার করা হয়। এছাড়াও ওই সময় ট্রেথসটমি করা হয়, যা ১৯ অক্টোবর ক্লোজ করা হয় এবং তাকে এইচডিইউতে স্থানান্তর করা হয়।


৭ নভেম্বর একসাথে অর্থোপেডিক ও নিউরোসার্জারি বিভাগের চিকিৎসরা আবার অপারেশন করেন। সর্বশেষ ৮ নভেম্বর সার্বিক অবস্থা উন্নতি হওয়া খাদিজাক কেবিনে স্থানান্তর করা হয়। বর্তমানে খাদিজার জিসিএস ১৫ রয়েছে। এটা মানুষের স্বাভাবিক জিসিএস বলে জানান ডাক্তাররা। গত সোমবার ২৮ নভেম্বর তাকে সাভারের সিআরপিতে পাঠানো হয়েছে। বর্তমানে সেখানে তার চিকিৎসা চলছে।


খাদিজা এখন সাভারের সিআরপিতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। সেখানে নেয়ার একদিন পর থেকে তাকে ফিজিওথেরাপির দিচ্ছেন চিকিৎসকরা।


এদিকে, খাদিজার উপর হামলাকারী বদরুল আলমের বিচার শুরু হয়েছে। স্বয়ং খাদিজাও সেই বদরুলের বিচার দাবি করেছেন।


বিবার্তা/খলিল/মৌসুমী

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com