
সাপ দেখে ভয় পায় না এমন মানুষের সংখ্যা খুবই কম। কিন্তু এই সাপই হতে পারে অপার সম্ভাবনাময় একটি খাত। সেই স্বপ্নই দেখছেন রাজবাড়ী স্নেক ফার্মের কয়েক যুবক। এখন শুধু দরকার সরকারি বা বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা।
সম্প্রতি বিবার্তা প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে সেই স্বপ্নের কথাই জানালেন রাজবাড়ী স্নেক ফার্মের প্রধান উদ্যোক্তা রবিউল ইসলাম।
রবিউল ইসলাম জানান, কালুখালী উপজেলার মৃগী ইউনিয়নের কাসাদহ গ্রামে তার বাড়ির পাশে ২০১৩ সালে ৮৩ শতাংশ জমির ওপর হাতে গোনা কয়েকটি সাপ নিয়ে গড়ে তোলেন সাপের খামার। নাম দেন, রাজবাড়ী স্নেক ফার্ম অ্যান্ড সরীসৃপ পার্ক'। এখানেই থেমে থাকেনি তিনি। বিভিন্ন স্থানে সাপের প্রদর্শনী ও সর্প মেলায় অংশ নিয়ে সাপ সম্পর্কে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির কাজটাও করে চলেছেন তিনি। ফলে এসব এলাকার মানুষ এখন আর কেউ সাপ মারে না। সাপ দেখলেই তাদের ফার্মে খবর দেয়। তার মতে প্রাণী সম্পর্কে ধ্যান ধারণা থাকলে এদের চেয়ে ভালো বন্ধু আর কেউ হতে পারে না। তেমনি সাপও একটি ভালো বন্ধু। তিনি সেটি প্রমাণও করেছেন। আর তাই সাপের সাথে সেলফি তোলা এখন যেন তার অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।
সাপ প্রেমিক রবিউল ইসলাম বলেন, সাপ সম্পর্কে আমাদের অনেকেরই কোনো ধারণা নেই। যেমন দাঁড়াস সাপ। দাঁড়াসের প্রিয় খাদ্য হচ্ছে ইদুর। তাই ইংরেজিতে এর নাম হচ্ছে র্যাট স্নেক। এটি নির্বিষ একটি সাপ। অস্ট্রেলিয়ায় গম ক্ষেতে ইদুরের আক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য তারা দাঁড়াস (র্যাট স্নেক) ছেড়ে দেন। কিন্তু আমাদের দেশের চিত্র ভিন্ন। দাঁড়াস দেখলেই মানুষ লাঠিশোঠা নিয়ে মারার জন্য এক হয়ে যায়। সাপ সম্পর্কে জ্ঞান না থাকায় আমাদের দেশ থেকে দাঁড়াসের মতো উপকারী সাপ বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে।
তিনি জানান, বর্তমানে তার খামারে রয়েছে ৪০টির মতো সাপ। এর মধ্যে রয়েছে চন্দ্রবুরা, অজগর, নাজা কাউথিয়া ও কালকেউটে, নাজা ও খয়াগোখরা, স্যন্ডবুয়া, বালিবুরা, বেবি ও দাঁড়াস।
খামারের সম্ভাবনা নিয়ে বলেন, সাপের খামারের জন্য বাংলাদেশের আবহাওয়া খুবই উপযোগী। অন্য দেশের তুলনায় এ দেশে সাপের খামারে বিষ সংগ্রহ ও সংরক্ষণও অনেক সহজ। এ জন্য দরকার আধুনিক ল্যাব ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর ছাড়পত্র। আমরা ১ হাজার সাপের জন্য একটি প্রজেক্ট ফাইল তৈরি করেছি। এর জন্য প্রয়োজন ১ কোটি ৩১ লাখ টাকা। প্রজেক্টটি করতে পারলে এ থেকে বছরে আয় হবে প্রায় ২কোটি টাকা। তবে পরের বছর থেকে খরচ কমে দাঁড়াবে ৪০ লাখ টাকায়। আমরা এই প্রজেক্ট ফাইলটি বিভিন্ন দপ্তরে জমা দেব। আমরা সরকারি বা বেসরকারি সহযোগিতার প্রত্যাশা করছি। এটি পেলে এ প্রজেক্ট সফল করা সম্ভব।
রাজবাড়ী সরকারি কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান প্রভাস চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, সাপ পরিবেশের ভারসাম্যের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সাপের বিষ দিয়ে অত্যন্ত মূল্যবান এ্যান্টিভেনন তৈরি করা হয়। যেকোনো সাপ কামড়ালে এই এ্যান্টিভেনন প্রতিষেধক হিসেবে ব্যবহার করা হয় এবং রোগীকে বাঁচানো যায়। এছাড়াও সাপের বিষ থেকে তৈরি হয় ক্যান্সারের ওষুধ। সরকারি অনুমোদন ও সহযোগিতা পেলে ওরা সাপ ও সাপের বিষ বিদেশে রপ্তানি করতে পারবে। সেটা দেশের জন্য খুবই লাভজনক হবে। সেটি পেলে ওরা অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারবে। সরকারি সহযোগিতা পাওয়া ওদের জন্য খুবই দরকার। তা না হলে ব্যক্তিভাবে এ রকম একটি প্রতিষ্ঠানের অনুমিত নেয়া, দাঁড় করানো বা এগিয়ে যাওয়া কোনোটাই সম্ভব না।
রাজবাড়ী জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. গণেশ চন্দ্র মণ্ডল জানান, এখনো রাজবাড়ী স্নেক ফার্মে কোন সরকারি সহযোগিতা করা হয়নি। কারণ, বন বিভাগ ও আমাদের মধ্যে দ্বিধাদ্বন্দ রয়েছে কারা এটি দেখভাল করবে। তবে সম্প্রতি আমাদের কাছে চিঠি এসেছে এটি বাণিজ্যিকীকরণ করার।
বিবার্তা/শিহাব/মনোজ
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
পদ্মা লাইফ টাওয়ার (লেভেল -১১)
১১৫, কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ,
বাংলামোটর, ঢাকা- ১০০০
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]