শিরোনাম
প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ প্যাকেজে ঢাবিতে উন্নয়ন
প্রকাশ : ১৪ ডিসেম্বর ২০১৬, ১৪:২৭
প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ প্যাকেজে ঢাবিতে উন্নয়ন
আশিকুর রহমান লাভলু, ঢাবি প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

নানা সমস্যায় জর্জরিত প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সমস্যা সমাধানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার ব্যাপক উন্নয়নের প্যাকেজ নিয়েছে। অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে ঢাবির উন্নয়নের জন্য ৬ ডিসেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) সভায় প্রায় ৬২০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে সরকার।


প্রতিষ্ঠার ৯৫ বর্ষে পদার্পণ করলেও বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত এ বিশ্ববিদ্যালয় শত বর্ষে যাওয়ার পূর্বেই সব সমস্যা সমাধানে তোড়জোড় করে মাঠে নেমেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। উন্নয়নের জোয়ারে সারাদেশ যখন ভাসছে, তখন প্রাচ্যের এ অক্সফোর্ড বাদ থাকবেই বা কেন। আর তাইতো বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নে শেখ হাসিনার সরকার এ বিশেষ উন্নয়ন প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। একনেক ওই সভার কার্যতালিকায় উত্থাপিত প্রকল্পের প্রাথমিক তালিকায় এ প্রকল্পটি ছিল না। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসন সঙ্কটের গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে প্রকল্পটি চূড়ান্ত তালিকায় তোলা হয় এবং কোনো ধরনের সংশোধন ছাড়াই অনুমোদন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।


দেশ সেরা এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামো ও আবাসন সমস্যা বেশ পুরাতন। এসব কারণে দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছিল নানাভাবে। আর এ সমস্যা এখন অনেকটাই শেষ হবে এ বিশাল অংকের বরাদ্দের কারণে। ভোগান্তি দূর হবে শিক্ষক কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের। ত্বরান্বিত হবে শিক্ষা কার্যক্রম ও গবেষণা কার্যক্রম।


অন্যদিকে হলগুলোতে বহিরাগত ও মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের সরকারি দলের ছাত্র সংগঠনের অধীনে অবস্থান আবাসন সংকটকে আরো তীব্র থেকে তীব্রতর করছে।


এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১টি ইনস্টিটিউট ও ১৩টি অনুষদের অধীনে বর্তমানে নিয়মিত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩৮ হাজারের বেশি। নতুন করে ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষে ৬ হাজার ৮০০ শিক্ষার্থী ভর্তি প্রক্রিয়া চলছে। ২০টি আবাসিক হল ও তিনটি হোস্টেলসহ সব মিলিয়ে বর্তমানে এগুলোতে আবাসন ব্যবস্থা রয়েছে প্রায় ১৬ হাজার শিক্ষার্থীর। বর্তমানে ৪০ শতাংশ শিক্ষার্থীর আবাসন ব্যবস্থা থাকলেও ৬০ শতাংশ শিক্ষার্থীর আবাসন ব্যবস্থা নেই। তবে হলগুলোতে আবাসন সমস্যা তীব্রতর হওয়ায় ধারণ ক্ষমতার দ্বিগুণ শিক্ষার্থী থাকছে। এক ধরনের মানবেতর জীবনযাপন করছে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে থাকা শিক্ষার্থীরা।


এ উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় যে ২৫টি প্রকল্প হাতে নিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তা যথাসময়েই বাস্তবায়নের আশ্বাস দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক।


উপাচার্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, নিঃসন্দেহে এ প্রকল্প দেশের শিক্ষা বিস্তারে ভূমিকা রাখবে। নতুন ভবনে আমরা শিক্ষার্থীদের আবাসিক সুবিধা দিতে পারব। এই উদ্যোগ ছাত্র-শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের একাডেমিক ও আবাসন সমস্যা সমাধান করবে। প্রকল্পের আওতায় একাডেমিক ভবনেও উন্নয়ন কাজ করা হবে। এতে শিক্ষার্থীদের শ্রেণি কক্ষের যে সীমাবদ্ধতা আছে তা কমে আসবে। আবাসন সমস্যা সমাধানে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিশেষ নজরদারি রয়েছে বলেও জানান তিনি।


এছাড়াও এ বিশাল উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য জনবল বাড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানিয়ে তিনি বলেন, এই কাজকে গতিশীল করার জন্য যে যে জায়গায় জনবল প্রয়োজন, আমরা তা বাড়াব।


অন্যদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নের ইতিহাসে এটি একটি মাইলফলক বলে মনে করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এ নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এত বড় অঙ্কের বরাদ্দ এর পূর্বে কখনো হয়নি। এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হাফিজুর রহমান বলেন, এ বছরের প্রকল্পে আবাসন সমস্যা সমাধানে যে প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে তা সময় মত বাস্তবায়ন হোক। এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে আবাসন সমস্যা সমাধান হবে অনেকাংশে। প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে এ শিক্ষার্থী আরো বলেন, দেশের উন্নয়নের সাথে সাথে দেশের শ্রেষ্ঠ এ বিদ্যাপীঠেও উন্নয়নের জোয়ার আসুক।


এ বছর একনেক সভায় ৬১৯ কোটি ৪৬ লাখ ৩০ হাজার টাকার এ প্রকল্পের আওতায় ২৫টি অংশে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। ২৫টি প্রকল্পের মধ্যে আবাসন সমস্যা সমাধানে শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও কর্মচারীদের জন্য কয়েকটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে জগন্নাথ হলের অভ্যন্তরে ১০০০ ছাত্রের জন্য ১৫ তলার ভিত নিয়ে ১০ তলা রবীন্দ্র ভবন নির্মাণ করা হবে যার মধ্যে ১টি হল ভবন এবং ১টি হাউজ টিউটর ভবন থাকবে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান হলের অভ্যন্তরে ১০০০ ছাত্রের জন্য ১১তলা ভিত দিয়ে ১১ তলা হল ভবন নির্মাণ, তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীদের জন্য ২০ তলা ভিত দিয়ে ২০ তলা টাওয়ার নির্মাণ, চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের জন্য বঙ্গবন্ধু টাওয়ারের অবশিষ্ট ১১তলা হতে ২০তলা পর্যন্ত নির্মাণ, জগন্নাথ হলের সন্তোষচন্দ্র ভট্টাচার্য ভবনের অবশিষ্ট ৯ ও ১০তলা নির্মাণ, ফজলুল হক মুসলিম হলের ৭৬ জন ছাত্রের জন্য দক্ষিণ ব্লকের এক্সটেনশন ভবনের অবশিষ্ট ৫তলা নির্মাণ করা হবে।


এদিকে একাডেমিক উন্নয়নের জন্যও বিশেষ নজর দেয়া হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় আর্থ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট সায়ন্সেস ও ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনলোজি অনুষদের জন্য সায়েন্স ক্যাফেটেরিয়ার জায়গায় কার্জন হলের আদলে ২টি বেসমেন্ট ফ্লোরসহ ২১তলা ভিত দিয়ে ২১তলা একাডেমিক ভবন নির্মাণ, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ ভবনের ৭তলা থেকে ১২তলা পর্যন্ত নির্মাণ, সেন্টার ফর এডভান্স রিসার্চ ইন সায়েন্সেস ভবনের অবশিষ্ট ৮তলা থেকে ১০তলা পর্যন্ত নির্মাণ, মোকাররম হোসেন খন্দকার বিজ্ঞান ভবনের মধ্য ব্লকের অবশিষ্ট ৬তলা থেকে ১০তলা নির্মাণ, কলা ভবনের ৬তলার অবশিষ্টাংশ এবং ৭তলা নির্মাণ, চারুকলা অনুষদের লেকচার থিয়েটার ভবনের অবশিষ্ট ৩ তলা থেকে ৫তলা নির্মাণ, প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান ভবনের অবশিষ্ট ৩ তলা থেকে ৫তলা নির্মাণ, মৎস বিজ্ঞান ভবনের অবশিষ্ট ২তলা থেকে ৫তলা নির্মাণ, সায়েন্স কমপ্লেক্স ভবনের অবশিষ্ট ৭তলা থেকে ১০তলা পর্যন্ত নির্মাণ এবং ভূতত্ত্ব বিভাগের ৩য় তলা নির্মাণ এবং ডিজাস্টার সায়েন্স অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের জন্য বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি ক্রয়।


নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সুবিধার জন্য কার্জন হল এলাকায় বিভিন্ন একাডেমিক ভবন এবং হলের জন্য ২০০০ কেভিএ বৈদ্যুতিক সাবস্টেশন স্থাপন এবং চারুকলা অনুষদের জন্য ১০০০ কেভিএ বৈদ্যুতিক সাবস্টেশন সরবরাহ ও স্থাপন।


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১০টি গভীর নলকূপের জন্য ৬০ কেভিএ পিএফআই ইউনিট এবং ৪টি সাবমারসিবল পাম্প মটর ক্রয় এবং ৮ ডায়া ১০০০ ফুট গভীর নলকূপ স্থাপন। এছাড়াও ইন্টারনেট, আসবাবপত্র, সরবরাহ ও সেবা খাতে বিবিধ ব্যয় অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে।


উল্লেখ্য যে, প্রাথমিক পর্যায়ে গতবছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য প্রায় ৭৭৯ কোটি টাকার প্রক্কলিত ব্যয়ের প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। যার মেয়াদকাল ধারণা করা হয়েছিল ২০১৫ সালের জুন থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত। কিন্তু এক বছর যাচাই বাছাই এবং বিভিন্ন সম্ভাবনা যাচাই করে ৬ ডিসেম্বর তা অনুমোদিত হয়। নতুন প্রকল্পের মেয়াদ এ বছরের জুন থেকে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত ধার্য করা হয়েছে।


বিবার্তা/লাভলু/পলাশ

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com