শিরোনাম
হঠাৎ খলিল পর্ব-৩
প্রকাশ : ২৭ অক্টোবর ২০১৬, ১৯:০৭
হঠাৎ খলিল পর্ব-৩
পলাশ মাহবুব
প্রিন্ট অ-অ+

রাজ্যের উত্তেজনা নিয়ে টিভিতে হিন্দি সিরিয়াল দেখছে নুপূর। তার চোখে মারাত্মক কিছু ঘটে যাওয়ার পূর্বাভাস।

সমস্যা হচ্ছে এরকম ক্লাইমেক্সের মধ্যেও সে সিরিয়ালে পুরো মনযোগ দিতে পারছে না। আশেপাশেও চোখ রাখতে হচ্ছে তাকে।

হাতে আছে টিভি রিমোট।

কখন কে এসে পড়ে।

এলেই দ্রুত চ্যানেল বদলাতে হবে।

অফিসের টিভিতে সিরিয়াল দেখা নিষিদ্ধ।

নুপূরকে এ ব্যাপারে কয়েকবার সতর্ক করা হয়েছে। তার মধ্যে একবার লিখিতভাবে।

অফিসের লোকগুলোও যেন কেমন।

তোরা সিরিয়াল দেখিস না ভালো কথা, তা আরেকজন দেখলে এত জ্বলে কেন!

কানকে সতর্ক রেখে মনকে ক্লাইমেক্সে ধরে রাখার চেষ্টা করে নুপূর।

নামের মতোই লম্বা সিরিয়াল।

শাশুড়ির সাথে বউয়ের লেগে গেছে শুরুর দিন থেকে।

কে পাবে চাবির গোছা।

চাবির গোছা এই সিরিয়ালের প্রধান একটি চরিত্র।

একটু পরপর ক্লোজ শটে চাবির গোছার উপস্থিতি জানান দেয়া হয়। সাথে টেনশন বাড়ানো মিউজিক।

চাবি এখন বউয়ের আঁচলে আছে।

শাশুড়ি বিষয়টা মেনে নিতে পারেননি।

তিনি হারানো সাম্রাজ্য ফেরত চান।

এই নিয়ে দ্বন্দ্ব।

এক ঝগড়া চলছে পাঁচ বছর ধরে।

তবে আজ কিছু একটা হতে পারে।

সিরিয়ালগুলোতে ক্যামেরা ঝাঁকালে বুঝতে হবে জটিল কিছুর পূর্বাভাস।

ঝাঁকি ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে।

বউয়ের জায়গামতো হাত দিয়েছেন ছাইহস্ত শাশুড়ি।

বউও কম না।

চাবির গোছা তাকে রক্ষা করতেই হবে।

 

বিজ্ঞাপন বিরতির সময় খুক করে একটা কাশি দিল খলিল।

অনেকক্ষন ধরে কাশিটা আটকে রাখতে হয়েছে তাকে।

তারও কিছু আগে সে ম্যানেজারের রুম থেকে ফিরেছে।

নুপূর সেটা খেয়াল করেনি।

সে ছিল সিরিয়ালের মধ্যে।

যে টানটান অবস্থা তাতে আশপাশ খেয়াল করার কথা মনে থাকে না।

কাশি আটকাতে খলিলকেও সিরিয়ালে চোখ রাখতে হয়েছে।

কাশি আটকানোর জন্য অন্যদিকে মনযোগ দেয়া জরুরি।

টিভির ভলিউম কমিয়ে খলিলের দিকে তাকায় নুপূর।

কি, কিছু বলবেন?

কিভাবে বুঝলেন যে কিছু বলতে চাই? আপনি দেখি মনের কথাও পড়তে পারেন।

জ্বি না। মনের কথা পড়তে পারি না। তবে কাশির কথা পড়তে পারি। অফিসের বসেরা বাজায় বেল। আপনার বেল হচ্ছে কাশি। খুক, খুক। কাশির ধরণ শুনে বুঝতে পারলাম কিছু জানতে চান। এটা হলো জিজ্ঞাসু কাশি।

যতটা আগ্রহ নিয়ে জানতে চেয়েছিল খলিল, উত্তরটা তারচেয়ে বেশি হতাশ করে তাকে।

ওহ। আপনি দেখি আমার কাশি নিয়ে গবেষণা করছেন।

তা বলতে পারেন। প্রতিবেশী হওয়ায় বাধ্য হয়েই করতে হচ্ছে। জিজ্ঞাসু কাশি, মতলবি কাশি। সারাদিন তো কাশির মধ্যেই থাকি। এবার বলুন কি বলতে চান?

না। বলার তেমন কিছু নাই। আসলে খুঁজতেছি।

সারা অফিসের মানুষজন আপনাকে খোঁজে। আর আপনি এখানে কি খোঁজেন?

ওই কূটনীটারে খুঁজি।

কূটনী!

নুপূর অবাক হয়।

কূটনী আবার কে?

হ, কূটনী। অনেকক্ষন ধইরা দেখতেছি কিন্তু কূটনীডারে তো পাইতেছি না। এইসব সিরিয়ালে তো কম হইলেও একহালি কইরা কূটনী থাকে। হিন্দি সিরিয়াল হইলো গিয়া কূটনী সমাবেশ। তা আপনার এই সিরিয়ালে কূটনী ম্যাডাম কয়জন?

কে বলেছে আপনাকে, হ্যাঁ? যা জানেন না তা নিয়ে কথা বলবেন না। এই সিরিয়ালটার কাহিনী খুব ভালো। ফ্যামিলি ক্রাইসিস। পাঁচ বছর ধরে চলছে।

সব সিরিয়ালই তো জীবন থেকে নেয়া। আর কূটনী ছাড়া কি ক্রাইসিস হয়? কূটনামী আছে বইলাই পাঁচ বছর ধইরা চলতেছে। কূটনামী না থাকলে পাঁচ মাসও চলত না। সব কূটনামীর ফসল।

যারা যা বোঝে না তাদের সাথে সে বিষয়ে কথা বলা অর্থহীন। তারপরও নুপূর খলিলকে কড়া কিছু একটা শোনাতে চাচ্ছিল।

কিন্তু তার আগে সিরিয়াল শুরু হয়ে যায়।

মুখ ঘুরিয়ে সিরিয়ালে মন দেয় নুপূর।

জবাব না পেয়ে খলিলও টিভিতে চোখ রাখে।

ওইতো আইছে। কূটনী আপা আইছে। এইবার জিলাপি ভাজা শুরু হবে। এক প্যাঁচ, দুই প্যাঁচ, আড়াই প্যাঁচ। সিরিয়ালের আয়ু বাড়বে আরও পাঁচ বছর। এই সিরিয়াল দেখতে দেখতে আপনি রিটায়ার্ডমেন্টে চলে যাবেন ইনশাল্লাহ। কিন্তু সিরিয়াল শেষ হবে না।

উফফ খলিল ভাই। এমনিতে অফিসে আসেন দেরি করে। যেটুকু সময় থাকেন মানুষের কাজে ডিস্টার্ব করেন। এটা ঠিক না।

নুপূরের সতি সত্যি মেজাজ খারাপ হয়।

ও। সিরিয়াল দেখা যে আপনার অফিসিয়াল কাজ সেইটা জানতাম না। একজন অফিসে আইসা শুরু করেন রূপচর্চা। একবার পাউডার মাখেন আরেকবার পাউডার তোলেন। আরেকজন দেখেন হিন্দি সিরিয়াল। তাগো কোনও দোষ হয় না। আমি একটু দেরি কইরা আসলেই যত সমস্যা। আরে আমার সমস্যা তো  . . .

কথা শেষ করার আগে কাশি চলে আসে খলিলের।

কাশতে কাশতেই সে বলে, আরে আমার সমস্যাটা জেনুইন।

এই লোকের সাথে কথা বলা অর্থহীন।

নুপূর মনযোগ টিভিতে সরিয়ে নেয়। 

সিরিয়ালের যখন-তখন অবস্থা।

কি হবে বোঝা যাচ্ছে না।

বুঝছি আমার কথার দাম নাই। শোনেন ম্যাডাম, ফাইনাল একটা কথা বলি। এইসব জিলাপি ভাজা দেখেন ঠিকাছে। কিন্তু শিইখেন না আবার। প্যাঁচ জিনিসটা কিন্তু ভালো না।

ওরে আল্লারে। মানুষকে বিরক্ত করার সব গুণ নিয়া এই লোক দুনিয়ায় আসছে।

খলিলকে আরও কিছু শক্ত কথা শোনানোর ইচ্ছে ছিল নুপূরের।

কিন্তু তার আগে তাকে দ্রুত টিভিটা বন্ধ করতে হলো।

ইদ্রিস আসছে।

 

দৈনিক ইদ্রিস।

পিয়ন ইদ্রিসের আরেক নাম।

অফিসের সব খবর তার কাছে আছে।

আর আছে বসদের কাছে কথা সরবরাহের অভ্যাস।

অর্থাৎ শুধু খবরের কাগজ না। একই সাথে সে বার্তা সংস্থার কাজও করে।

এর বাইরেও তার আরও কিছু গুণের খবর আমরা জানব।

ইদ্রিসকে দেখে টিভি অফ করে দেয় নুপূর।

তার চোখে পড়লে সর্বনাশ হয়ে যাবে। মুহূর্তে বসের কাছে খবর চলে যাবে।

টিভি কিংবা নুপূর কোনদিকেই ইদ্রিস যায় না।

সে এসে খলিলের সামনে দাঁড়ায়।

এমডি স্যার আপনারে ডাকতেছে।

ইদ্রিসের ব্যস্ততা অনেক।

খবরটা দিয়েই সে চলে যাচ্ছিল।

খলিল তাকে থামায়।

ইদ্রিস শোনো। এই যে তুমি বললা, এমডি স্যার আপনারে ডাকছে। কথাটা কিন্তু তুমি রং বললা। তোমার বলা উচিত ছিল, এমডি স্যার আপনারে সালাম দিছে। নেক্সট টাইম ডাকলে বলবা এমডি স্যার আপনাকে সালাম দিছে। কি বলবা?

এমডি স্যার আপনারে সালাম দিতে যাইবো কোন কারণে? এইডা কেমুন কতা? আপনি বড় না এমডি স্যার বড়?

খলিলকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ইদ্রিস চলে যায়।

খিলখিল করে হেসে ওঠে নুপূর।

এমডি স্যার, আপনাকে সালাম দিয়েছেন। আসসালামুআলাইকুম। যান, সালামের উত্তরটা দিয়ে আসেন।

এমডি স্যার আমাকে সালাম দিতে যাবে কেন! খুব ভালো এবং খুব খারাপ কারণ ছাড়া এমডি স্যার কাউকে ডাকেন না।

খলিলের মধ্যে ভয় ঢোকে।

আবার কি প্যাঁচ লাগলো কে জানে। অফিসটাও দেখি একটা হিন্দি সিরিয়াল। (চলবে)

 

বিবার্তা/মৌসুমী/হুমায়ুন

হঠাৎ খলিল পর্ব-২

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com