খলিলের কপালটাই এমন।
যখনই খুব সতর্কতার সাথে কিছু করতে যায় তখনই কোনও না কোনও ভুল হয়।
এবারও হলো।
এমডি স্যারের রুমে নক না করেই ঢুকে পড়ে খলিল।
যত দ্রুত ঢোকে তার চেয়ে দ্রুত গতিতে বেরিয়েও যায়।
তবে ভুল হওয়ার জন্য ওইটুকুই যথেষ্ট।
এখন এমডি স্যার খেয়াল না করলেই হলো।
ভেতরে এক নারী কর্মকর্তার সাথে গল্প করছেন তিনি।
ভঙ্গিটা বেশ ঘনিষ্ঠ।
মুহূর্তে যে দু-চারটি শব্দ কানে এসেছে তাতে বুঝেছে আলোচনার বিষয়বস্তু আরও ঘনিষ্ঠ।
বাইরে এসে সে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে।
তারপর দরজার বাইরে থেকেই কাশি দেয়।
স্যার, আসতে পারি?
সংযত হওয়ার যথেষ্ট সময় দিয়ে খলিল ভেতরে ঢোকে।
এক অপরাধের জন্য ডাক পেয়ে আরও একটা অপরাধ করে ফেলে খলিল।
রুমের বাইরে যে লালবাতি জ্বলছিল সেটা খেয়াল করেনি।
তোমার কি কমনসেন্স বলে কিছু নেই? বাইরে ইমার্জেন্সি লাইট জ্বলছে, তারপরও ঢুকে পড়েছো! নিয়ম-কানুন কিছুই মানো না দেখছি।
আপনি আমাকে ডেকেছিলেন তাই ঢুকে পড়েছি স্যার।
ডেকেছি বলেই কি হুটহাট রুমে ঢুকে পড়বে?
সরি স্যার!
খলিল রুম থেকে বেরোতে যায়।
থাক, আর যেতে হবে না। তোমার সাথে কথা সামান্য।
এমডি সাহেব একটা ফাইল বের করেন।
ফাইল দেখে খলিলের কাশি শুরু হয়।
কারণ, এমডি সাহেবের হাতে খলিলের পার্সোনাল ফাইল।
এটা কি জানো?
না স্যার।
খলিল মাথা নাড়ে।
এটা তোমার আমলনামা। গত দুই মাসে অফিস হয়েছে একান্ন দিন। তার মধ্যে তুমি অফিসে আসোনি তিনদিন। আর দেরি করেছো ষোল দিন।
১৪ দিন স্যার। দুইদিন আগেই অফিসকে জানাইছিলাম।
খলিলের কথা শুনে এমডি সাহেব ক্ষেপে যান।
ইয়ার্কি করার জন্য আমি তোমাকে এখানে ডাকিনি।
এমডি সাহেবের কথা শুনে খলিলের মুখ যত কালো হয়, পাশে বসে থাকা নারী কর্মকর্তা আইরিনের মুখের হাসি তত বাড়ে।
হাসি ঢাকার জন্য সে মুখের কাছে বারবার হাত নিচ্ছে।
এতে হাসির ব্যাপারটা আরও বড় করে ধরা পড়ে।
এমডি স্যারের কথার চেয়ে আইরিনের হাসিটা বেশি লাগছে খলিলের।
কি, চুপ করে আছো কেন? এটা আমার অফিস না তোমার?
এধরণের প্রশ্নের কোনও জবাব নেই।
খলিল খুক খুক কাশে।
আমি এই অফিসের মালিক। অথচ আমিও এতদিন অফিস কামাই দেইনি। হাউ কাম! ইজ দিজ তোমার মামার বাড়ি?
মানে স্যার . . . শরীরটা ভালো যাইতেছে না।
শরীর খারাপ বলে কাশি দিয়ে লাভ নেই। এই এক কথা আর কাশি সেই শুরুর দিন থেকে শুনে আসছি। শরীর ভালো না, শরীর ভালো না। শরীর ভালো না হলে ভালো করে ডাক্তার দেখাও। তাতেও না হলে একটা হাসপাতালেই চাকরি নিয়ে নাও। শরীর খারাপ হলেই বেডে শুয়ে পড়বে। ওটাই তোমার জন্য পারফেক্ট। ইচ্ছে হলে অফিস এলাম, ইচ্ছে হলো না এলাম না। এটা তো যক্ষা পুনর্বাসন কেন্দ্র না।
এমডি স্যার খলিলের পার্সোনাল ফাইল আবার দেখেন।
পুরো বছর জুড়ে একই অবস্থা। হয় অফিস কামাই নয়তো দেরি করে অফিস। আজও দেরি করে এসেছো। হোয়াট ইজ দিজ! আমাকে দেখলে পালিয়ে যাও। এটা চোর-পুলিশ খেলার জায়গা না। দিজ ইজ নট থানা-পুলিশ। কানামাছি ভোঁ ভোঁ খেলতে ইচ্ছে করলে মাঠে যাও। আমার অফিসে এসব চলবে না।
খলিলের কাশি বেড়ে যায়।
কারণ এসব প্রশ্নের উত্তরের সাথে কাশি জড়িত।
অনেকদিন ধরেই তার শরীরটা ভালো যাচ্ছে না তার। কাশি লেগেই আছে। সাথে জ্বর-ঠাণ্ডা। সকালের দিকে শরীরটা বেশি খারাপ থাকে। ঘুম থেকে উঠতেই দেরি হয়ে যায়। দিনের বেলায় আবার কাশিটা সহনীয় পর্যায়ে থাকে। আলসেমি আর অনিচ্ছার কারণে ডাক্তারের কাছেও যাওয়া হয় না।
রুমমেট মনির মাঝে-মধ্যে দু-একটা ট্যাবলেট দেয়।
ওষুধ বলতে ওই।
তোমাকে শেষবারের মতো একটা কথা বলছি। আমার সামনে যক্ষা রোগীর মতো কাশবে না। আর কাশির অজুহাত নিয়ে আসবে না। বাঙালির হাত ওই একটাই। অজুহাত। তুমি কাজে ভালো সেজন্য অনেক কিছু ওভারলুক করি। যে গরু দুধ দেয় তার দুটো লাথি মেনে নেয়া যায়, কিন্তু গরু দুষ্টু হয়ে গেলে গোয়াল শূণ্য করাই সমাধান।
জ্বি স্যার। আর এরকম হবে না।
কতটুকু বুঝতে পেরেছ সেটা সময় হলেই বোঝা যাবে। বাট বি কেয়ারফুল। নেক্সট টাইম তোমাকে ডেকে আর মিষ্টি কথা বলা হবে না। এনাফ ইজ এনাফ। বহু লোক সিভি হাতে দাঁড়িয়ে আছে। (চলবে)
বিবার্তা/মৌসুমী/হুমায়ুন
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]