শিরোনাম
হঠাৎ খলিল পর্ব-৪
প্রকাশ : ০২ নভেম্বর ২০১৬, ১৬:০১
হঠাৎ খলিল  পর্ব-৪
পলাশ মাহবুব
প্রিন্ট অ-অ+

একটু পরপর কাউছার সাহেবের ভুড়ি দুলে উঠছে।

তার পুরো মুখ পেপারে ঢাকা।

ভুড়ির কিছুটা অংশ দেখা যাচ্ছে।

দুলুনির সময় পাওয়া যাচ্ছে ভুড়ির আসল চেহারা।

সোলায়মান সাহেবের রুমে বসে রাশিফল পড়ছেন কাউছার সাহেব।

এক চেয়ারে বসে আরেক চেয়ারে পা তুলে দিয়েছেন ছোটখাটো মানুষটা।

দুই চেয়ারের মাঝে ভুড়ির জন্য পর্যাপ্ত জায়গা রেখেছেন, যাতে দুলতে অসুবিধা না হয়।

কাউছার সাহেবের মধ্যে অদ্ভুত বৈপরীত্য আছে।

তিনি কথা বলেন উচ্চস্বরে।

আর হাসেন শব্দহীন।

শব্দ ছাড়াও যে জানান দিয়ে হাসা যায় সেটা কাউছার সাহেবকে না দেখলে বোঝা যাবে না।

অফিসে কাউছার সাহেবের কোনও পদবি নেই।

সে কারণে কাজও নেই।

কাজ একটাই।

সারাদিন সারা অফিস ঘুরে বেড়ানো।

এর-ওর রুমে আড্ডা দেয়া।

আর মানুষ বুঝে খবরদারি করা।

জায়গা বুঝে আওয়াজ দেয়া লোক তিনি।

তার আওয়াজের উৎস এমডি সাহেব।

কাউছার সাহেব এমডি সাহেবের দূর সম্পর্কের আত্মীয়।

এই যোগ্যতায় অফিস থেকে নিয়মিত একটা বেতন পান।

আর এমডির হয়ে খবরাখবর রাখেন।

এ ধরনের লোকজন সাধারণত বেশ ক্ষমতাধর আর বিরক্তিকর হয়ে থাকে। তাদের নাকটা হয় লম্বা, যে নাক তারা সব বিষয়েই গলান।

কাউছার সাহেব দুটোর কোনটিই নন।

এমডি সাহেব আত্মীয় কোটায় চাকরি দিয়েছেন ঠিকই, কিন্তু ক্ষমতা দেননি।

কাউছার সাহেবের তাই ডোরাকাটা দাগ আছে ঠিকই, কিন্তু দাঁত নেই।

উচ্চস্বরে কথা আর শব্দ ছাড়া হাসিই তার সম্বল।

টেনশন মাস্টার সোলায়মান সাহেবের সাথে কাউছার সাহেবের খাতির ভালো।

মানুষটাকে তার পছন্দ।

পছন্দের একটা কারণ দুজনই পত্রিকার মনযোগী পাঠক।

কাউছার সাহেব রাশিফল পাতা।

সোলায়মান সাহেব ক্রয়-বিক্রয়ের পাতা।

এখন যেমন সোলায়মান ক্রয়-বিক্রয়ের পাতা দেখছেন।

তার দুই কাঠার একটা জমি আছে। বিক্রির জন্য উপযুক্ত গ্রাহক খুঁজছেন।

খোঁজাখুঁজি করছেন তাও কয়েক বছর হয়ে গেল।

তবে এখন পর্যন্ত যোগ্য গ্রাহকের সন্ধান পাননি।

 

ঠ্যা . . . ঠ্যা . . . ঠ্যা . . .

আবারও দোল দিয়ে কেঁপে ওঠেন কাউছার সাহেব।

কি, রসালো কিছু পেয়েছেন নাকি? ভুমিকম্প তো মৃদু থেকে জোরালো হচ্ছে।

টেবিলের অন্যপাশে থাকা সোলায়মান সাহেব জানতে চান।

দাঁড়ান। দাঁড়ান। মনভরে একটু হেসে নেই। তারপর বলছি।

কাউছার সাহেবের দুলুনি দেখে যে কেউ ভাবতে পারে তিনি কৌতুকের বই পড়ছেন।

তিনি আসলে পড়ছেন রাশিফল।

পত্রিকার পাতার প্রতিদিনের রাশিফল পড়া তার স্বভাব।

তিনি রাশিফল একদমই বিশ্বাস করেন না।

রাশিফলে দেয়া ভুলগুলো ধরে হাসাহাসি করতে ভালো লাগে।

আজকের রাশিফলে হাসাহাসির আইটেম বেশি।

তিনি শব্দ করে পড়া শুরু করেন।

ধনু রাশির জাতকের জন্য আজকের দিনটি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। দিনটি শুরুই হতে পারে কোনও ভালো সংবাদের মাধ্যমে।

ভালো সংবাদ? ভালো সংবাদ তো পেয়েছি। ছোট শ্যালক বিদেশ যাবে। সেজন্য চাঁদা দিতে হবে এক লাখ টাকা। ঠ্যা. ঠ্যা.. ঠ্যা . . .

বুঝলেন সোলায়মান সাহেব, এরকম তাজা বিনোদন আর পাবেন না।

আবার দেখেন কি লিখেছে।

মামলা-মোকাদ্দমার ফলাফল অনুকূলে আসতে পারে। স্ত্রীর স্বাস্থ্য নিয়ে দুশ্চিন্তা বাড়বে।

আচ্ছা, আপনিই কন তো, দূর থেকে হাইকোর্ট ছাড়া যে কোনও আদালত দেখেনি তার জীবনে মামলা আসবে কোত্থেকে? আর স্ত্রীর স্বাস্থ্য? ওটা নিয়াও দুশ্চিন্তার  কিছু নাই। উনি মাশাল্লাহ স্বাস্থ্যমন্ত্রী। ঠ্যা. ঠ্যা.. ঠ্যা . . . কিসব যে এরা লেখে না। পত্রিকাওয়ালাদের ওপর থেকে বিশ্বাসটা ধুয়ে মুছে যাচ্ছে।

কেন? বিশ্বাস উঠে যাওয়ার কারণ কি?

পেপার থেকে একটা ফোন নাম্বার টুকে নিয়ে বললেন সোলায়মান সাহেব।

আরে কালকের কথাই বলি। সকালে এক পত্রিকায় পড়লাম, কর্মস্থল থেকে সুসংবাদ আসতে পারে। দুপুরে আরেক পত্রিকা হাতে নিয়ে দেখি সেখানে বলছে, কর্মস্থলে সিদ্ধান্ত গ্রহণে সতর্ক থাকুন, নতুবা বিপদ হতে পারে।

একই দিনের রাশিফল একেক পেপার একেকভাবে লিখেছে। বিশ্বাস থাকে বলেন?

হুমম। তবে এক্ষেত্রে পত্রিকার চেয়ে যারা রাশিফল লিখছে দোষটা তাদের বেশি।

আরে আসল রস তো এখনও দেই-ই নাই। রাখেন . . .

পাতা উল্টিয়ে আসল রসের দিকে যাচ্ছিলেন কাউছার সাহেব।

চা নিয়ে ইদ্রিস ঢোকে রুমে।

এই ব্যাটা ইদ্রিস আসলেই একটা আধপাকা ঝুনা মাল। বয়স বাইশ অথচ নাম হইলো পঞ্চাশ বছরি ইদ্রিস। সময়জ্ঞানের কিচ্ছু নাই।

আসল রসের খবর বলতে না পেরে ইদ্রিসের ওপর মেজাজ খারাপ হয় তার।

শেষ পর্যন্ত যা লেবু চায়ে গিয়ে ঠেকে।

এটা কি চা বানিয়েছিস?

লেবু চা স্যার . . .

লেবু চা! চায়ের মধ্যে এতবড় লেবু কেউ দেয়? বাঁশের চেয়ে তো কঞ্চি বড় হয়ে গেছে। ব্যাটা মুরুক্ষের ভাই গর্দভ। এতদিন ধরে আছিস একটা চা ঠিকমতো বানাতে পারিস না। তোর বিষয়টা নিয়ে ভাবতে হবে।

চামচ দিয়ে ভাসমান লেবু ওঠাতে ব্যস্ত হয়ে পরে ইদ্রিস।

আজ তার রাশিটাই খারাপ।

একটু আগে এমডি সাহেবের ঝাড়ি খেয়েছে। (চলবে)

 

বিবার্তা/মৌসুমী/হুমায়ুন

 

হঠাৎ খলিল পর্ব-৩

 

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com