শিরোনাম
হঠাৎ খলিল (পর্ব-৭)
প্রকাশ : ২৬ নভেম্বর ২০১৬, ১৮:০২
হঠাৎ খলিল (পর্ব-৭)
পলাশ মাহবুব
প্রিন্ট অ-অ+

কি ব্যাপার! সূর্য আজকে কোন দিকে উঠছে?

খলিলকে সকাল সকাল অফিসে দেখে জানতে চায় নুপূর।

আজকে তো সূর্যই উঠে নাই। বাইরে বৃষ্টি হইতেছে। আজকাওভিজছি।

আপনার না জ্বর-কাশি। এভাবে বৃষ্টিতে ভিজলে তো অসুখ বাড়বে।

বৃষ্টিতে না ভিজলে অফিসে দেরি হইত। আর অফিসে দেরি হইলে চাকরি নাই। চাকরি গেলেও সুখ থাকবে না।

মাথাটা অন্তত ভালোভাবে মোছেন। ঠাণ্ডা বসে যাবে তো।

ঠাণ্ডা তো বইসাই আছে। ঠাণ্ডা এখন শোয়ার ধান্দায় আছে।

আপনাকে কিছু বলে লাভ নাই। তা ক্যালেন্ডার নিয়ে কি করছেন?

সামনে কবে কবে সরকারি ছুটি আছে সেইসব তারিখ মার্ক করতেছি। সামনের মাসে তো ছুটি বলতেই নাই। যে মাসে ছুটি আছে তো আছেই। আর যে মাসে নাই তো এক্কেরে নাই।

ছুটি কাটানোর জন্য আপনার আবার সরকরি ছুটি লাগে নাকি?

আপনিও খোঁচা দিয়া কথা বলেন। আমি একটা অসুস্থ মানুষ। আপনাদের খোঁচার জবাব দিতে আগামী মাসে ছুটির দিনও অফিস করার সিদ্ধান্ত নিছি। অফিসের পাওনা শোধ-বোধ।

ছুটির দিনে তো অফিস বন্ধ থাকে।

বন্ধ থাকলেও আসবো। নিজেই দরজা খুলব। আর দরজা খোলার চাবি না দিলে দরজার সামনে নয়টা-পাঁচটা দাড়াইয়া থাকবো।

কাল খুব দিয়েছে না, এমডি স্যার?

আমারে কি দেবে? এমডি স্যারের কি দেওনের মানুষের অভাব পড়ছে নাকি? কতজনকেই তো রুমে ডেকে কতকিছু দিচ্ছে।

না। বানী-টানি কিছুই দেয় নাই? মুখটা এখনো কালো হয়ে আছে তো তাই বললাম।

আমার মুখ তো কালাই। ফর্সা কবে দেখছেন? ফর্সা দেখতে চাইলে রাশেদ সাহেবের কাছে যান। উনি অনেক ফর্সা। একদম মুলার মতো। দেখেন তো হিন্দি সিরিয়াল। সব মেকাপ দিয়া থাকে। ঘুমায়ও মেকাপ দিয়া। ফর্সা ছাড়া কিছু চোখে পড়ে না।

 

খলিলের কথায় নুপুর হাসে।

মানুষটার মধ্যে অদ্ভুত সরলতা আছে।

হুমম। বুঝতে পেরেছি।

কি বুঝছেন?

ভালোই দিছে কালকে।

আমারে তো দিবোই। আমি নীরিহ মানুষ। তারও পরে পুরুষ মানুষ। আমার ঠোঁটে তো হাসি নাই। গলায় কাশি আছে। অফিসে আরও কতজন যে দেরি কইরা অফিস আসে তাগো কোনও খবর নাই। উনি লাগছে আমার পেছনে। আমি একটা অসুস্থ মানুষ। অসুস্থ মানুষের সাথে কিভাবে আচার-ব্যবহার করতে হয় সেটা জানা থাকা দরকার। আমি কি বানাইন্যা কাশি দেই। অরিজিনাল কাশি আমার।

বড় করে কাশি দেবে খলিল।

নুপূর দু’হাত দিয়ে কান বন্ধ করে।

থাক, থাক। আমাকে আর কাশি দিয়ে আসল-নকল বোঝাতে হবে না। আমি আপনার পাশে বসি তো। আমি জানি। অনেকদিন ধরেই তো কাশির শব্দ শুনছি। আপনি যখন ডেস্কে থাকেন না তখনও আমার কানে বাঁশির মতো আপনার কাশির শব্দ বাজে।

শব্দ করে হেসে ওঠে নুপূর।

শব্দ বেশি হওয়ায় নিজেই নিজের মুখ চেপে ধরে।

 

অসুস্থ মানুষ নিয়াও ফান করেন। সব ওই জিলাপি বানানো সিরিয়ালের ফল। যারা অভিনয় করে তাগোও মায়া বলতে কিচ্ছু নাই, যারা দেখে তাগোও নাই।

নুপূর আবার হাসে।

এবার খলিলের কথায়।

কি? হাসেন ক্যা . . .

কাজ নাই তো তাই।

অফিসে বইস্যা কি কাজ যে করেন সে তো জানি। খালি টিভি খুইল্যা বইসা থাকেন। আর যখন সিরিয়াল থাকে না তখন কেমিক্যাল চর্চা করেন।

কেমিক্যাল চর্চা! সেটা আবার কি?

ওই তো এখন যা করতেছেন। রঙমিস্ত্রির কাম।

কথার ফাঁকে ফাঁকে নুপুর হাতে নেইলপলিশ দিচ্ছিল।

এটা বুঝি রঙমিস্ত্রির কাজ?

ওইতো। অফিসের কাজ তো আর না। তা আপনার কূটনামী শুরু হয় নাই এখনও?

হইছে তো। কিন্তু ম্যানেজার স্যার এসে টিভি বন্ধ করে দিয়ে গেছেন একটু আগে। সঙ্গে ওয়ার্নিং নাম্বার ফোর।

টিভি বন্ধ কইরা দিলে কূটনা বুড়িগো কি হইবো? একজন দর্শক তো কইমা গেল।

হুমম। আমার ধারণা কূটনামীটা ইদ্রিস করেছে। ও গিয়ে স্যারকে খবরটা দিয়েছে।

বাম হাতের অনামিকায় নেইলপলিশ দিতে দিতে নুপুর বলে।

যদিও আপনি আমারে বুদ্ধিমান মনে করেন না তারপরও একটা বুদ্ধি আপনারে দিতে পারি।

কি বুদ্ধি?

এইটাও অবশ্য কূটনামী বুদ্ধি। তবে ইদ্রিস মার্কা কূটনামি না। এক কাজ করেন। আপনার কম্পিউটারে টিভি কার্ড লাগাইয়া নেন। তারপর কম্পিউটারে বইসা জিলাপি বানানোর সিরিয়াল দেখবেন। কেউ টের পাইবো না।

দারুণ বুদ্ধি তো। এই প্রথম আপনি কোনও কাজের বুদ্ধি দিলেন। কি খাবেন বলেন?

নাপা।

নাপা!

হ। একটা নাপা আর দুই চামচ তুশকা। অশিক্ষিত মনির ডাক্তারের প্রেসক্রিপশান। সকালের ওষুধ খাই নাই এখনও।

কাশতে কাশতে বলবে খলিল।

ধ্যাৎ। সারাক্ষন শুধু কাশি কাশি কাশি।

আমি আসি।

কই যান?

মোশতাক ভাই একটা নতুন মুভি ডাউনলোড করেছেন। নিয়ে আসি।

যান। যান। সব ভাই-ব্রাদাররাই অফিসে এই কাম করে। আর খলিলের দেরিটাই সবার চোখে পড়ে। (চলবে)

 

বিবার্তা/মৌসুমী

 

হঠাৎ খলিল (পর্ব ৬)

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com