শিরোনাম
হঠাৎ খলিল (পর্ব ৬)
প্রকাশ : ১৬ নভেম্বর ২০১৬, ২০:০১
হঠাৎ খলিল (পর্ব ৬)
পলাশ মাহবুব
প্রিন্ট অ-অ+

আমি কিন্তু অন্যদের মতো না।

আমি একজন মানবিক বাড়িওয়ালা।

ঢাকা শহরে অনেক ধরনের বাড়িওয়ালা পাইবেন, তবে আমার মতো মানবিক বাড়িওয়ালা পাইবেন না। আমি ভাড়াটিয়াদের দিলটা বুঝি, ফিলটাও বুঝি। নিজেকে সব সময় মনে করেন ভাড়াটিয়ার জায়গায় বসাইয়া চিন্তা করি, বুঝলেন?

পানখাওয়া লাল দাঁত বের করে হাসেন আইয়ুব মোল্লা।

এই লোক পুরো শরীর দিয়ে পান খান।

যখন পান চাবান তখন মনে হবে দুনিয়া চাবাচ্ছেন।

এখন তিনি সেই কাজটা করছেন।

শালা, হারামির হেডমাস্টার।

খলিল মনে মনে গালি দেয়।

এই লোককে গালি দিয়েও যুইত নাই। আরাম লাগে না।

আইয়ুব মোল্লা না হয়ে হারামির নাম আইয়ুব খান হওয়া দরকার ছিল।

গালি দিয়াও শান্তি, আবার দেশপ্রেমও হইতো।

 

খলিলের সকালটা শুরু হয়েছিল কুফা দিয়ে।

মনিরের দেয়া ঘুমের বড়ির থেকে যার সূত্রপাত।

এজন্য খলিল ওষুধ খেতে চায় না।

ওষুধের একটা সাইডে এফেক্ট থাকেই। প্রত্যেকটা ঠেলার যেমন থাকে পাল্টা ঠেলা। এজন্যই বলে ঠেলার নাম বাবাজি।

ঠেলা খেয়ে আজ বাবাজিকে দেখেছে খলিল।

অফিসে তার মাঝে মাঝেই দেরি হয়। কিন্তু আজকে কুফা দিবস বলে একসাথে ম্যানেজার আর এমডি দুই স্যারের জেরার মুখে পড়তে হয়েছে তাকে।

ম্যানেজার স্যার সমস্যা না, তিনি ফ্রাইপ্যান মানব।

দ্রুত গরম। দ্রুত ঠাণ্ডা।

কোনও কিছু মনেও রাখেন না।

সমস্যা হলো এমডি স্যারকে নিয়ে।

তিনি একদম উল্টো মানুষ।

মুখ দিয়ে যা বলেন সেটাই করেন।

আজ যেমন খলিলের আগের সব বকেয়া দেরির হালখাতা করেছেন।

তা তিনি করতেই পারেন। এমডি মানুষ। কিন্তু সমস্যা হলো তিনি যা করেন সবসময় মানুষের সামনে করেন। রুমে কেউ না থাকলে বেল বাজিয়ে মানুষ ডাকেন।

বেশির ভাগ সময় সেই মানুষটা হন মেয়েমানুষ।

আজকে অবশ্য লোক ডাকতে হয়নি, আইরিন ম্যাডাম আগে থেকেই ছিল।

এই মহিলা কাউছার সাহেবের যমজ বোন।

কাউছার সাহেব ম্যানেজার সাহেবের রুমে বসে থাকেন। আর আইরিন ম্যাডাম এমডি স্যারের রুমে। দুইটার কোনটারই কোনও কাজ নাই। কিন্তু বছর শেষে প্রমোশান আর ইনক্রিমেন্টে সবার ওপরে।

মনে মনে আইরিনকে একটা গালি দিয়ে বাড়িওয়ালার দিকে তাকায় খলিল।

কিছু মানুষ থাকে যাদের সঙ্গে বেহেশতে যাওয়াটাও বিপদজনক।

আইয়ুব মোল্লা হচ্ছে সেই টাইপ মানুষ।

টাকা ছাড়া কিছু চেনে না, কাউকে চেনে না।

এই লোকের সাথে দেখা হওয়া মানে দিনটাই মাটি।

ভাগ্যিস রাতে দেখা হয়েছে।

কুফায় শুরু। কুফায় শেষ।

খলিল বাড়িওয়ালার মতিগতি বোঝার চেষ্টা করছে।

উদ্দেশ্য ছাড়া এই লোক এত কথার মানুষ না।

পান চাবানোর শেষ ধাপে আছেন আইয়ুব মোল্লা।

ঠোঁটের দুই কোণা দিয়ে রস চুইয়ে পড়ছে।

চাচা কি কিছু বলবেন?

আইচ্ছা খলিল সাহেব, এতদিন ধইরা আমার বাড়িতে ভাড়া আছেন, একটা জিনিস নিশ্চয়ই টের পেয়েছেন?

একটা বিষয় না, অনেক বিষয়ই টের পাইছি। আপনি যে হারামি নাম্বার ওয়ান সেইটা টের পাইছি সবার আগে।

মনে মনে বলে খলিল। তবে মুখে শুকনা হাসিটা ঝুলিয়ে রাখে।

আমার মধ্যে বাড়িওয়ালার ভাব-সাব কিন্তু নাই। আমি মনে করি বিষয়টা নদীর এই পাড় আর ওই পাড়। মাঝখানে খেয়া পার। এই খেয়া পারাপারের দায়িত্ব হচ্ছে আমার। আর খেয়া পার হচ্ছে মানুষকে বিপদ থেকে উদ্ধার। বাড়িভাড়াও তাই। ক্ষণিকের অতিথি। মানুষকে জিম্মি করে টাকা কামাই করবো, তওবা তওবা...

দুই গালে হাত দিয়ে তওবা করেন আইয়ুব মোল্লা।

জ্বি, তা তো অবশ্যই, তা তো অবশ্যই!

কিন্তু ওই যে কথায় আছে, বিপদে পড়লে বাঘেও ঘাস খায়। আমার অবস্থা বাঘের চেয়েও খারাপ। আমি খাচ্ছি আগাছা। মাটিওয়ালা আগাছা। বাড়ি করে পড়েছি মহাবিপদে। সবার চোখ টাটায়। বুঝেনই তো কিভাবে চলে দ্যাশ? সব জায়গায় সিস্টেম- ওয়াসা, বিদ্যুত, গ্যাস।

আঙুল গিয়ে ঘুষ দেয়ার বিষয়টি বোঝাবেন তিনি।

কই দিকে দেবো বলেন? টাকা দিয়ে তো কুলাতে পারছি না। কমার্শিয়ালি ভাড়া দিলে ভাড়া পেতাম ডাবল।

এতটুকু বলে গলায় ঝোলানো রূপার দাঁত খিলানি দিয়ে মাড়ির দাঁত খোঁচেন আইয়ুব মোল্লা।

জিহ্বাটা সব দাঁতের ওপর দিয়ে একবার ঘুরিয়ে এনে আবার শুরু করেন, কিন্তু আমার ওই এক স্বভাব। মানুষের উপকার করতে চাই।

সেটাই। আপনার মতো কিছু মানুষ আছে বলেই আমরা আছি।

মেকি হাসি মিশিয়ে মিথ্যাটা বলে খলিল।

কিন্তু আমার দিকটাও তো দেখতে হবে। আর সেটা দেখার দায়িত্ব আপনাদের। কারণ আমি টিকে থাকলে আপনারাও টিকবেন।

এতক্ষণে বাড়িওয়ালার আসল উদ্দেশ্য ধরতে পারে খলিল।

চাচা, আবারও!

বেশি না, আগামী মাসের পরের মাস থেকে এক হাজার টাকা ভাড়া বাড়িয়ে দিতে হবে। বোঝেনই তো চারদিক দিয়া নানান চাপ। টিকে থাকা টাফ।

কিন্তু চাচা, আমাদের তো বেতন বাড়েনি এক বছরেও। এর মধ্যে দুই দফা ভাড়া বাড়লে আমরা কোথায় যাবো!

আমারে কি আপনার অমানবিক মনে হয়? মানবিক বইল্যাই তো দুম কইরা একসাথে ভাড়া বাড়াই না। আস্তে আস্তে বাড়াই। তার ওপরে এক মাস বাকি থাকতেই জানাই দিলাম যাতে আপনাদের ওপর চাপ না পড়ে।

কিন্ত চাচা, আমাদেরও তো দেয়ার মতো টাকা থাকতে হবে। এই বাড়তি টাকা আমরা কোথায় পাবো?

শোনেন খলিল সাহেব, মাথা গোঁজার ঠাঁইটা হচ্ছে ইম্পর্টেন্ট। এই শহরে খাইতে দেবে অনেকেই, কিন্তু থাকতে দেবে না। অন্য খরচাপাতি কমান। তাছাড়া আমার এই বাসা এরচে বেশি ভাড়ায় লোকজন নিতে চায়। আমি মানবিক লোক বলে বাসা ছাড়তে বলছি না। অন্য বাড়িওয়ালা হলে কথা বলত স্ট্রেট- হয় বেশি ভাড়া দাও, নয়তো বাড়ি ছাড়ো। মানবিক লোক হয়ে আমার হইছে বিপদ। কঠিন কথাও বলতে পারি না।

চলবে . . .

 

বিবার্তা/মৌসুমী/হুমায়ুন

 

হঠাৎ খলিল (পর্ব-৫)

 

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com