শিরোনাম
হঠাৎ খলিল (পর্ব- ১০)
প্রকাশ : ২৬ ডিসেম্বর ২০১৬, ১৫:৪৬
হঠাৎ খলিল  (পর্ব- ১০)
পলাশ মাহবুব
প্রিন্ট অ-অ+

কি মনির মিয়া। বুয়া আজকে কি আবিষ্কার করছে? পেঁপে দিয়া গুড়া মাছ নাকি ঢেড়স দিয়া মুরগি? বুঝলা, আমাগো বুয়া কিন্তু একটা জিনিস। ক্রিয়েটিভিটি আছে। পড়ালেখাটা জানলে নির্ঘাত বিজ্ঞানী হইত। হা হা হা।

 

ভাই, আপনার অসুস্থতা উপলক্ষে আজকে ভালো আয়োজন আছে।

 

আমার অসুস্থতা উপলক্ষে ভালো খানা হইলে তো প্রায় প্রত্যেকদিনই ভালো খানার আয়োজন করতে হবে। যাক, তারপরও বুয়াকে ধন্যবাদ, সে অন্তত আমাদের এমডি স্যারের মতো না। অসুস্থ মানুষের সাথে কিভাবে ব্যবহার করতে হয় সে সেইটা জানে। মূর্খ হইলেও মানবতার মাথা খায় নাই।

 

প্লেট উল্টিয়ে ঢেকে রাখা খাবার দেখে খলিল, আইটেম তো ভালোই। আমার শরীল যে আজকে বেশি খারাপ, জানলো কেমনে?

 

জ্বর বাড়ছে নাকি ভাই?

 

হুমম। জ্বর বাড়ছে। কাশি বাড়ছে। সাথে আমিও বাড়ছি। আজকে তো একটা ইতিহাস কইরা ফালাইলাম। ডাক্তারের কাছে গেছিলাম।

 

ডাক্তারের কাছে! আপনি?

হ। তোমার মতো অশিক্ষিত ডাক্তার দিয়া আর কয়দিন।

 

খলিলের কথায় মনির হাসে, তা ডাক্তার কি বললো?

 

বললো, এতদিন ধরে সমস্যা অথচ কোনও ডাক্তার দেখাননি! আপনি তো ডাক্তারদের ভাতে মারবেন।

 

আর কি বললো?

 

আরও অনেক কিছু বলছে। তবে তোমার মতো ঘুমের ওষুধ খাইতে বলে নাই। কিছু টেস্ট-ফেস্ট করাইলো।

 

রক্ত নিছে?

 

নিছে তো। এত্তবড় ইনজেকশন দিয়া মিনিমাম আধা কেজি রক্ত নিছে। এমনিতেই শরীলে নাই বল। পরীক্ষা করাইতে এত রক্ত লাগে?

 

কয়েকটা পরীক্ষা করবে তো। সেজন্য। এমনি এমনি বেশি রক্ত নিয়ে কি করবে।

পলিটিক্স করলে করলে ভালো হইতো বুঝলা।

পলিটিক্স! ক্যান?

তাইলে পোলাপান আমারে নিয়া মিছিল করতো। খলিল ভাইয়ের রক্ত বৃথা যেতে দেবো না। তাইলে ডাক্তাররাও আমার রক্ত নেয়ার ব্যাপারে হুঁশিয়ার থাকত।  হা হা হা।

 

খলিলের কাণ্ড দেখে অবাক হয় মনির। লোকটা পারেও। অসুখ নিয়ে সমানে ফান করছে।

 

আর কি টেস্ট দিলো ভাই?

 

ওই যে কি জানি বলে। মেশিনের সামনে জামা খুইল্যা দাঁড়াইতে হয়। ছবি তোলে।

 

এক্স রে।

 

হ। এক্সরে। জামা খুলবেন ঠিক আছে। তাই বইল্যা মেয়ে মানুষ দিয়া? এক মহিলা আইসা আমারে কি বলে জানো? দেখি জামা খোলেন তো। আমি তো লজ্জায় শেষ। স্যান্ডো গেঞ্জিডা রাখছিলাম গায়। খাইলাম এক ধমক। আইচ্ছা, আমি ব্যাচেলর মানুষ। মেয়ে মানুষের সামনে জামা খুলছি কোনওদিন? তার ওপরে এসি রুমে যে ঠাণ্ডা!

 

ভাগ্যিস, আপনার সমস্যাটা ওপরে, তাই জামার ওপর দিয়ে গেছে। নইলে তো . . .  হাসতে হাসতে বলে মনির।

 

একটা জিনিস দেখলাম আজকে, বুঝলা মনির! হাসপাতালে যারা এইসব টেস্টের কাম করে তাগো মেজাজ সবসময় আমাগো ম্যানেজার স্যারের মতো হইয়া থাকে। ম্যানেজার স্যারেরটা তাও ঠাণ্ডা হয়। এদেরটা হয় না।

 

ক্যান আপনারে কিছু বলছে নাকি?

 

আরে, সারাক্ষণ তো বলার ওপরেই রাখছে। ধমক ছাড়া কথা কইতে পারে না। আমার টাকা খরচ কইরা টেস্ট করামু ওগো ধমক খাইতে!

 

ওরা ওরকমই। তা আপনার টেস্ট রিপোর্ট দেবে কবে?

 

কালকে সন্ধ্যায়। রিপোর্ট নিয়া আবার ডাক্তারের কাছে যাইতে হবে। একটা সিস্টেমের মইধ্যে পইড়া গেলাম। হাসপাতালে যাওয়াটা বারে যাওয়ার মতো। একবার নেশায় ধরলে বারবার যাইতে হয়।

 

দেইখেন কালকে যেন আবার আপনার নেশা ছুইটা না যায়। একটু ভালো লাগলে তো আপনি সব ভুলে যান। ডাক্তারের কাছে যেহেতু গেছেন এবার কোর্স কমপ্লিট করবেন। রোগ পালা ভালো না।

 

আচ্ছা, ঠিকাছে। আপাতত খাওয়ার কোর্সটা কমপ্লিট করি। বুয়ার রান্না খাইতে হয় গরম গরম। ঠাণ্ডা হইলে মুখেও দেয়া যায় না।

 

আপনি খান তাইলে। আমি নিচ থিকা আসতেছি।

 

এই রাতে কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসে খলিলের। জ্বরের ঘোরে উল্টা-পাল্টা বলতে থাকে সে, আমার সত্য সত্য জ্বর হইছে স্যার। আল্লার কিরা। আমার গায়ে হাত দিয়া দেখেন স্যার। শরীরডা জ্বরে পুইড়া যাইতেছে স্যার। দেহেন স্যার দেহেন . . .

 

কিছুক্ষণের মধ্যে মনিরের ঘুম ভেঙে যায়। সে উঠে বসে। লাইট জ্বালায়। ঘড়ি দেখে। রাত তিনটার ওপরে বাজে।

আমার চাকরিডা খাইয়েন না স্যার। আমার সত্য জ্বর স্যার। আমার সত্য জ্বর। আমার সত্য জ্বর।

 

খলিলের গায়ে হাত দিয়ে জ্বর দেখে মনির, ইশশ, অসম্ভব জ্বর! জ্বরের ঠেলায় উল্টা-পুল্টা কইতেছে। মাথায় পানি ঢালতে হইবো।

 

মনির দৌড় দিয়ে বাথরুমে যায়। খলিলের প্রলাপ চলতে থাকে, আমি আর অফিস কামাই দিমু না। আমি আর অফিস কামাই দিমু না . . .আমার চাকরিটা খাইয়েন না স্যার। (চলবে)

 

বিবার্তা/মৌসুমী/হুমায়ুন

 

হঠাৎ খলিল (পর্ব- ৯)

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com