শিরোনাম
হঠাৎ খলিল পর্ব-২
প্রকাশ : ২০ অক্টোবর ২০১৬, ১৮:৩৪
হঠাৎ খলিল  পর্ব-২
পলাশ মাহবুব
প্রিন্ট অ-অ+

পিয়ন ইদ্রিস এসেছে তলবি বার্তা নিয়ে।

ম্যানেজার সাহেব গ্যাসের চুলার মতো খেইপে আছে। যেকোনও সময় আগুন ছড়ায়া পড়বে। আপনারে ডাকতাছে।

ডাক যে আসবে সেটা জানাই ছিল।

কিন্তু সেটা যে কুরিয়ার সার্ভিসে দ্রুত চলে আসবে বোঝেনি।

মুখটাকে যতটা কালো করা যায় ঠিক ততটাই করল খলিল।

সাথে খানিকটা বেদনাও যোগ করেছে।

পরিপূর্ণ রোগি রোগি চেহারা নিয়ে ম্যানেজার সাহেবের রুমে ঢোকে সে।

ম্যানেজার সাহেব একবার চোখ তুলে খলিলকে দেখলেন।

কোনও কথা বললেন না।

চোখ নামিয়ে যা করছিলেন তাতে মন দিলেন।

 

ম্যানেজার সোলায়মান সাহেবের বয়স পঞ্চাশের ঘরে।

তবে বয়েসের তুলনায় তাকে বুড়ো মনে হয়।

হয়তো সেটা টেনশনের কারণে।

তার মধ্যে টেনশন রোগ আছে। অল্পতেই অস্থির।

আর আছে হঠাৎ গরম হওয়া এবং হঠাৎ নরম হওয়া স্বভাব।

তবে সবই সাময়িক। এই আছে এই নাই।

এখন আছেন গরম হয়ে।

ইদ্রিসের ভাষায় চুলা গরম।

গরমের কারণ যে খলিল সেটা বোঝা যাচ্ছে।

কিন্তু প্রথম ধাক্কাটা গেল এডমিনের এনামের ওপর দিয়ে।

এনাম একটা ফাইল নিয়ে এসেছিল সিগনেচারের জন্য।

ম্যানেজার সাহেব লাগলেন বানানের পেছনে।

এক পৃষ্ঠা বাংলা লেখার মধ্যে একশটা বানান ভুল। বাড়ি বানান লিখছো ছোট ‘র’ দিয়ে। নিজের মাথায় বাড়ি দিতে ইচ্ছে করছে আমার। এ্যাই তুমি কি ইংলিশ মিডিয়ামে পড়েছ নাকি?

এনাম কোনও জবাব দেয় না।

পুরোটাতো আমিই লিখলাম। পুরোটা যদি আমাকেই লিখতে হয় তাহলে তোমাকে রাখা হয়েছে কেন?

সরি স্যার।

এরপর যা লিখবে ডিকশনারি দেখে দেখে লিখবে। ব্যবহারিক বাংলা অভিধান। তোমার বানান ঠিক করার জন্য আমি এখানে বসিনি। আমি প্রুফ রিডার না।

ঝাড়ি খেল এনাম।

কিন্তু কাঁশি পেল খলিলের।

খুক করে কেশে উঠল সে।

ম্যানেজার সাহেব খলিলের দিকে ফিরলেন।

তোমার সাউন্ড বক্সটা দয়া করে বন্ধ করবে? একটা শিশুর পৃথিবীতে আগমন ঘটে কান্না দিয়ে। আর তুমি পৃথিবীতে এসেছো কাঁশি দিয়ে। সেই কাঁশি এখনও চলছে। আশি বছরের বুড়ার মতো এভাবে কাশবে না। এইটা হাসপাতাল না। অফিস।

কালকে রাত থেকে কাশিটা আবার বাড়ছে স্যার।

এক কাঁশির ওপর দিয়ে আর কতদিন? অফিসে যেদিন জয়েন করেছো সেদিন থেকে কাঁশছো। তাছাড়া তোমার কাশি তো আর্টিফিসিয়াল মনে হয়। খবরদার আমার সামনে বানিয়ে কাঁশবে না। এটা বেইলি রোডের নাটকপাড়া না। একদম অভিনয় করবে না।

না স্যার। একদম রিয়েল অসুখ স্যার।

বাড়তি দুটো কাশি দিয়ে সত্যতা যাচাইয়ের সুযোগ করে দেয় খলিল।

তোমার তো দুদিন পরপর হঠাৎ করে হয় জ্বর-ঠাণ্ডা নয়তো ডেঙ্গু-ডিসেন্ট্রি হয়। হঠাৎ করে কোনদিন তো দু ঘন্টা বেশি অফিস করতে দেখলাম না। হোয়াট ইট দিজ! এভাবে অফিস চলে না।

কালকা রাতে স্যার জ্বর উঠছিলো একশর ওপরে।

আজকে কত উঠেছিলো জ্বর?

আজকা জ্বর কম। ছাইড়া যাইতেছে মনে হয়।

জ্বর ছাইড়া যাইতেছে। তুমি বাবা অফিসটা ছেড়ে যেত পারো না? জ্বর ছাইড়া গেছে তো আজ দেরি হলো কেন?

খলিল চুপ করে থাকে।

ঘুমের ওষুধ খাওয়ার কথা তো আর স্যারকে বলা যায় না।

তাহলে সব দোষ ঘুমের ওষুধের ওপর গিয়ে পড়বে। স্যার ভাববেন খলিল নেশা-টেশা করে। তাই অফিসে আসতে দেরি হয়।

কি হলো কথা বলছো না কেনো? জবাব দাও?

ম্যানেজার সাহেবের রাগের সাথে তাল রেখে খলিলের কাঁশিও বেড়ে যায়।

এই কাশি বন্ধ। কাশি বন্ধ।

আচ্ছা, আজকে যে তোমার দেরি হবে সেটা কি অফিসকে জানিয়েছিলে?

স্যার, মোবাইলটা নষ্ট হইয়া গেছে। ব্যাটারি ডাউন। সেইজন্য কাউরে জানাইতে পারি নাই।

আজকে না হয় মোবাইল নষ্ট। প্রতিটা দিনই তুমি এই কাজ করো। হয় তোমার মোবাইলের ব্যাটরি ডাউন। নয়তো নিজের ব্যাটারি ডাউন। এরকম ডাউন মার্কা লোক দিয়ে তো অফিস চলবে না। এটা সরকারি অফিস না যে নচিকেতার গানের মতো অফিস করবে। এখানে প্রতিটি কানা পয়সার হিসেবে হয়। এভরি ব্লাইন্ড পেনি।

সরি স্যার।

অসুস্থতার ভাবটা ধরে রেখে নিচু গলায় বলে খলিল।

শোনো খলিল, আমাকে সরি বলে কোনও লাভ নেই। এ নিয়ে তোমাকে অনেকবার সতর্ক করা হয়েছে। চিঠিও খেয়েছো। কিন্তু কোনও লাভ হয়নি। এখন বিষয়টা আমার হাতে আর নেই। এমডি স্যার ভীষণ ক্ষেপে। তোমার নামই উনি শুনতে পারেন না। তোমার কারণে আমার চাকরিও হালকা হয়ে যাচ্ছে। এমডি স্যার তো মনে হচ্ছে এখন একঢিলে দুই পাখি মারবেন। কস্ট কার্টেল। তোমার কারণে আমার চাকরিটাও যাবে। তোমার না হয় ঘর সংসার নাই। কিন্তু ছেলে-মেয়ে নিয়ে আমি পড়ব অথৈ নদীতে। ডিপ রিভার। এখনকার চর পড়া নদী না।

আমি তো স্যার দেরি করতে চাই না। কিন্তু আমার কপালডাই খারাপ। গত সপ্তায় একদিন দেরি হইলো সিগন্যালে পইড়া। পাক্কা পয়তাল্লিশ মিনিট বাসে বইসা ছিলাম। পয়তালি¬শ মিনিট কোনও দিন সিগন্যাল হয়? আপনিই কন স্যার? আমার দেরি কপাল তাই ধরা খাইলাম।

ওসব সিগন্যালের গল্প শুনিয়ে কোনও লাভ নেই। তুমি অলরেডি রেড সিগন্যালে পড়ে গেছ। তোমার বাড়ি আর আমার বাড়ি এক এলাকায় হওয়ায় আরেক সমস্যা হয়েছে। এমডি স্যারের ধারণা আমি তোমাকে প্রশ্রয় দেই। কিন্তু আমি তো ওইসব ভিলেজ পলিটিক্সের মধ্যে নাই।

সরি স্যার। আর এরকম হবে না।

আর হবে না স্যার। দয়া করে এই কথাটা আর বলবে না। এরকম কথা না হলেও তুমি বিশ বার বলেছ। বি কেয়ারফুল। আই রিপিট- বি কেয়ারফুল। বারবার তুমি সরি বলছো। অফিস কিন্তু সরি বলবে একবার। তখন করার কিচ্ছু থাকবে না। কাশতে কাশতে বাড়ি চলে যাবে।

জ্বি স্যার . . .সরি স্যার . . .

খলিলের কাঁশি বেড়ে যায়।

কাশি বন্ধ করে ডেস্কে যাও। আর যা বললাম মাথায় রেখো। কাশির আওয়াজ আর শুনতে চাই না।

দুনিয়ায় কত টাইপ কাঁশি আছে। শুকনা কাঁশি, হুপিং কাঁশি। কিন্তু মিউট কাঁশি নাই। মিউট কাঁশি থাকলে খুব ভালো হইতো। শব্দটা কেউ শুনত না।

নিজে নিজে কথাটা বলে বেরিয়ে যায় খলিল। (চলবে...)

 

বিবার্তা/পলাশ/মৌসুমী

হঠাৎ খলিল পর্ব-১

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com