ভোর, ১৫ আগস্ট, ১৯৭৫। ধানমন্ডির বত্রিশ নম্বরের বাড়িটিতে কিছুক্ষণের জন্যে নরকের দরজা খুলে গেল। অস্ত্রধারীরা হত্যা করলো মহামানব বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। বেগম মুজিব, শেখ জামাল, শেখ কামাল, পুত্র বধুরা কেউ রেহাই পায়নি।
খুনি মেজরদের ছোড়া বৃষ্টির মত অবিরাম বুলেটে ঝাঁঝরা হয়ে যায় এতটুকু ছোট্ট রাসেলের বুক অথচ একটু আগেই মায়ের কাছে যাওয়ার জন্য কাঁদছিলো সে। সে কান্না থেমে যায় লাশ হয়ে। কি অপরাধ ছিলো ছোট্ট রাসেলের? সে বঙ্গবন্ধু পুত্র এটাই কি তার অপরাধ?
হ্যাঁ, এটাই ছিলো তার অপরাধ। একই অপরাধ ছিলো বঙ্গবন্ধুর পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের। আর দেশকে স্বাধীন করাই ছিলো বঙ্গবন্ধুর অপরাধ। এই অপরাধে শেষ পর্যন্ত পরিবার নিয়ে জীবন দিতে হলো হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গপিতা শেখ মুজিবকে।
সেদিন দেশের বাইরে থাকায় ভাগ্যের জোরে বেঁচে গেলেন জাতির পিতার দুই আত্মজা শেখ হাসিনা, শেখ রেহেনা, সঙ্গে জয় এবং পুতুল। প্রখ্যাত পরমানু বিজ্ঞানী বঙ্গবন্ধুর জামাতা ওয়াজেদ মিয়া সেদিন বট বৃক্ষের ছায়ার মত দাঁড়িয়েছিলেন পরিবার-পরিজন হারা মানুষগুলো উপর। তাদেরও বাঁচার কথা ছিলো না। তারা বেঁচে গেলেন সৃষ্টিকর্তার কৃপায়। কিন্তু শুরু হয় পরভূমে পরিবার হারা কষ্টের জীবন।
অবশেষে সেই দুঃখের অবসান ঘটে। বাঙালির জীবনে আসে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। ৬ বছর পর ১৭ মে, ১৯৮১ সালে বঙ্গবন্ধু তনয়া শেখ হাসিনা অশ্রুসিক্ত নয়ণে ফিরে আসে নিজ ভূমে। বাবার স্বপ্ন পূরণে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ মেয়ে শোকের কাছে মাথা নত করেন নি। শুরু হয় নতুন যুদ্ধ। সেই যুদ্ধ ন্যায়ের শাসন ও গণতন্ত্র ফেরানোর যুদ্ধ, সেই যুদ্ধ বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার যুদ্ধ। আজ সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয় নিয়ে দেশ এগিয়ে চলছে দুর্বার গতিতে। বিশ্ব অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে আমাদের দিকে।
৫৬ হাজার বর্গমাইলের আমার এই স্বাধীন, সার্বভৌম ভূ-খন্ডটি উপহার দিয়েছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আর সেই ভূমিকে স্বর্গ ভূমি করতে দিন রাত নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনা।
আজ থেকে ৩৫ বছর আগে, গরীব-দুঃখী, ভাগ্যবিড়ম্বিত মানুষগুলোর দুর্দশার কথা চিন্তা করে, মৃত্যু ভয়কে উপেক্ষা অশ্রুসিক্ত চোখে দেশের মাটিতে ফিরে এসেছিলেন; পিতা-মাতা, ভাই-বোন আর স্বজন হারা মুজিব কন্যা। তাকেও হাটতে হয়েছে বিস্তর বন্ধুর পথ। স্বজন হারানোর শোককে শক্তিতে পরিণত করে আজ তিনি দেশকে নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়। তার নেতৃত্বগুনেই বিশ্ব দরবারে নতুন ভাবে পরিচিতি পাচ্ছে যে দেশ; সে এক নতুন বাংলাদেশ।
তিনি না ফিরলে হয়তো এদেশের ইতিহাসটা অন্ধকারেই পাক খেতে থাকতো। তিনি ফিরেছিলেন বলেই হয়তো আজ বাঙালির কুঁড়ে ঘরে দুমুঠো ভাত আর একটুখানি সুখ খেলা করে। আমাদের সামনে হাতছানি দিয়ে ডাকছে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ।
বঙ্গবন্ধুর পরিবারের বিরুদ্ধে এখানো ষড়যন্ত্র থেমে নেই। বঙ্গবন্ধু কন্যাকে হত্যা করতে ১৯ বার হামলা চালানো হয়েছে। ২০০৪ সালের ২১শে আগস্ট গ্রেনেট হামলার ক্ষত এখনো বয়ে বেড়াচ্ছেন মুজিব তনয়া। সর্বশেষ বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ ও হত্যার চেষ্টাও ৭৫’র ষড়যন্ত্রেরই অংশ। সুতরাং আমাদের সর্তক দৃষ্টি রাখতে হবে। অতন্ত্র প্রহরীর মত জেগে থাকতে হবে সব সময়।
কবিতা দিয়ে শেষ করি-
সকালের কাঁচা সোনা রোদ খেলা করে মাটির কোলে,
কচি পাতায় ঠিকরে পড়ে কমল আলো,
রোদের গন্ধ লেগে যায়-পাখির নরম পালকে,
নতুন প্রভাতের ঝলমলে আলোয় মানুষের নিত্য ব্যস্ততা বাড়তে থাকে,
আকাশ বেয়ে সূর্য চলে আসে মধ্য গগণে,
জাম-কাঁঠাল ছায়ায় দাঁড়িয়ে ভাবি,
এত সুন্দর কেন আমার জন্মভূমি?
পরক্ষণেই মনে পড়ে কবিতার লাইনগুলো, ‘জননী জন্মভূমি তুমি তো স্বর্গের চেয়েও সুখোময়’ ‘ধনধান্যে পুষ্পে ভরা আমাদের এই বসুন্ধরা।’ কিংবা ‘আবার আসিব ফিরে ধান সিঁড়িটির তীরে, এই বাংলায়। আমার এই ভালো লাগার সবটুকু অবদান দেশরত্ন শেখ হাসিনার। জয় হোক আপনার ‘শেখ হাসিনার জন্য বাংলাদেশ ধন্য।’ জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু।
-লেখক: সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় সংসদ।
বিবার্তা/এম হায়দার
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]