শিরোনাম
যুক্তরাষ্ট্রে বাড়তি নজরদারিতে বিরক্ত মুসলিম জনগোষ্ঠী
প্রকাশ : ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৬, ১৩:২৫
যুক্তরাষ্ট্রে বাড়তি নজরদারিতে বিরক্ত মুসলিম জনগোষ্ঠী
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

গত রবিবার যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটায় সোমালি এক মুসলিম ব্যক্তির চালানো হামলার পর নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে, দেশে মুসলমানদের চালানো সন্ত্রাসী হামলা কিভাবে ঠেকাবে কর্তৃপক্ষ?
ইউরোপের অনেক দেশের মতো যুক্তরাষ্ট্রেও এখন অভিবাসী মুসলমান জনগোষ্ঠীর জন্য নেয়া হচ্ছে বিভিন্ন কর্মসূচি। তাদের ওপর নজরদারি যেমন বাড়ছে, তেমনি আলাদা কর্মসূচি নেয়া হচ্ছে। যাতে এই কম্যুনিটির মানুষের মধ্যে শিক্ষা-সচেতনতা বাড়ে এবং প্রবঞ্চনার বোধ না বাড়ে। কিন্তু কর্তৃপক্ষের এ ধরণের কর্মকাণ্ডে বেশ বিরক্ত সেখানকার স্থানীয় লোকজন।
যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটায় লাখ খানেক সোমালি বাস করেন। তাদের বেশিরভাগই মুসলমান। সংঘাত ও সহিংসতা থেকে বাঁচতে নিজ দেশ থেকে পালিয়ে সেখানে আশ্রয় নিয়েছেন তারা।
তাদেরই একজন স্থানীয় সংগঠক বুরহান মাহমুদ। তিনি কর্তৃপক্ষের নেয়া নতুন উদ্যোগের কঠোর সমালোচনা করে বলেন, ‘একজন খুনি বা ধর্ষককে ধরতে কি কর্মসূচি নেয় কর্তৃপক্ষ? এখন একটি কম্যুনিটির মানুষকে উদ্দেশ্য করে ন্যাশনাল প্রোগ্রাম চালু করা হয়েছে, কেন? ব্যাপারটা এমন যে আপনি গুটিকয়েক সন্ত্রাসীকে ধরার জন্য পুরো কম্যুনিটির মানুষকে টার্গেট বানাচ্ছেন। অল্প কয়েকজনের জন্য আমাদের সবাইকে অপরাধী হিসেবে দেখানো হচ্ছে।’
বুরহানের মতোই ক্ষুব্ধ ও বিরক্ত এখানকার অনেক কিশোর শিক্ষার্থী। সোমালি শিক্ষার্থীরা স্কুলগুলোতে রীতিমত বৈষম্যের শিকার হয় বলে অভিযোগ করছে। তাদের বেশিরভাগকেই সরকারের বিভিন্ন নজরদারি কর্মসূচির অংশ হিসেবে নিয়মিত পুলিশের কাছে হাজিরা দিতে হয়। সহযোগিতা না পেলে আবার ব্ল্যাকলিস্টেড হওয়ার আশংকা রয়েছে। সেই সঙ্গে রাজনৈতিক অঙ্গনেও এখন মুসলমানবিরোধী নানা ধরনের বক্তব্য উঠে আসছে।
বুরহান মাহমুদ বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে মুসলমানদের প্রতি তাদের যে মনোভাব, সেটি আপনাকে যত বেশি সম্ভব নন-মার্কিনি করে তুলবে। কারণ এর মাধ্যমে ভয় ছড়ানো হচ্ছে। আইএসও ঠিক এই কাজটাই করছে। তারা বলছে, তুমি যুক্তরাষ্ট্রের কেউ নও, তারা তোমাকে এখানে দেখতে চায় না। ’
ঠিক একই মনোভাবের কথা জানিয়েছেন স্থানীয় রেস্তরাঁগুলোতে আড্ডা দিতে আসা কয়েকজন তরুণ।
তাদের মধ্যে একজন হাইস্কুলের বাস্কেটবল দলের খেলোয়াড় বলেন, দলের বাকি খেলোয়াড়েরা এমন ব্যবহার করে যেন, তারা একজন অপরাধীর সাথে খেলছে।
তার মতে, ‘সমস্যা হলো কর্তৃপক্ষের নানা কর্মসূচি আমাদের মধ্যে ভিন্নতার বোধ বাড়াচ্ছে। অর্থাৎ এর মাধ্যমে আরো স্পষ্ট করে বুঝিয়ে দেয়া হয় আপনি বাইরে থেকে এসেছেন। সেকারণে আমাদের বেশিরভাগই এটিকে হুমকি হিসেবে দেখে। কম্যুনিটির লোকজন এটা পছন্দ করে না।’
কিন্তু এর বাইরে কর্তৃপক্ষের উদ্বেগের যথেষ্ট কারণও আছে। গত এক বছরে সোমালি মুসলমানদের একটি দল কেনিয়ার জঙ্গি সংগঠন আল-শাবাবে যোগ দিতে দেশ ছেড়েছে। এছাড়া আইএসে যোগ দিতে দেশ ছাড়ার আগে গ্রেফতার হয়েছে নয়জন সোমালি-মার্কিন মুসলমান।
ফলে কর্তৃপক্ষ জঙ্গিবাদ ঠেকাতে পরিকল্পনা অনুযায়ী তাদের কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে একটি এই কম্যুনিটির মানুষের মধ্যে জঙ্গিবিরোধী বার্তা পৌঁছে দেয়া। আর এ কাজে যুক্ত হচ্ছেন এই জনগোষ্ঠীর মানুষেরাই।
তাদের একজন সুশিডো শাই বলেন, গত ২৩ বছর তিনি যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছেন। কিন্তু মুসলমান হওয়ার কারণে এখনকার মতো কখনোই তাকে অসম্মান ও অনিশ্চয়তায় পড়তে হয়নি।
তিনি বলেন, ‘গত ২৩ বছরে আমাকে কোনোদিনই মুসলমান হওয়ার জন্য হুমকির মুখে পড়তে হয়নি, এখন যেমনটা পড়তে হচ্ছে। আমি কল্পনাই করতে পারি না, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী এমন একজন ব্যক্তি, যে অন্যকে তার ধর্মের কারণে হুমকি দিচ্ছে। বলছে, মুসলমানেরা এ দেশে আসতে পারবে না, অথবা তাদের ফিরে যেতে হবে।’
সুশিডো বলেন, সরকারি কর্মসূচিতে যারাই কাজ করছেন, তাদের কেউই কাউন্টার টেররিজম কর্মসূচির ট্যাগ পছন্দ করে না। কারণ অন্যরা তখন তাকে ভিন্ন চোখে দেখতে শুরু করে। অবশ্য সেখান থেকে টাকা পাওয়া যায় বলে অনেকেই আগ্রহী হয়। সূত্র: বিবিসি
বিবার্তা/নিশি

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com