সংযুক্ত আরব আমিরাতের শারজাহ কারাগারে বন্দী ১৬ বিদেশির জীবনে গত সপ্তাহের এক দিন যেন 'হঠাৎ আলোর ঝলকানি' দেখা যায়। এদিন শারজাহ পুলিশের উদ্যোগে তাদের স্বজনদের নিয়ে আসা হয় বিভিন্ন দেশ থেকে। আচমকা তাদের কাছে পেয়ে কারাগারটিতে সৃষ্টি হয় এক আবেগময় দৃশ্যের।
যুক্তরাষ্ট্র, মরক্কো, মিসর, ভারত, শ্রীলঙ্কা, ওমান, নাইজেরিয়া, ইথিওপিয়া ও ইউক্রেন থেকে আগত এসব মানুষকে কারাবন্দী স্বজনদের সঙ্গে রাতের খাবার খাওয়াসহ পাঁচ ঘণ্টা কাটানোর সুযোগ দেয় শারজাহ পুলিশ। যাবজ্জীবন অথবা দীর্ঘ মেয়াদে কারাদণ্ড পাওয়া বন্দীরা স্বজনদের কাছে পেয়ে অভিভুত হয়ে পড়েন।
ভারতের কেরালা রাজ্যের ফাতিমা নামের এক নারী ছেলেকে কাছে পেয়ে কান্না সামলাতে পারেননি। ছেলেকে বুকে জড়িয়ে ধরে তিনি তাকে চুমু দিতে থাকেন। তাঁর ছেলে আনোয়ার সালিম (২৯) এক ভারতীয় সহকর্মীকে হত্যার দায়ে নয় বছর আগে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পায়।
আনোয়ার সালিম দশ বছর আগে কাজের খোঁজে আমিরাত আসে। কারণ, বাবা নেই, সংসারের দায়িত্ব তার কাঁধে। কিন্তু দুর্ভাগ্য, এখানে এসে সে এই ঘটনায় জড়িয়ে পড়ে। অথচ সে কখনো কল্পনাও করেনি যে তার জীবনটা এমন হয়ে যাবে।
খুনের দায়ে সাজাপ্রাপ্ত শ্রীলংকান রাজেশ বিজয়সিংহ ছাড়া পেয়েছে। তাকে নিতে এসেছে তার ভাই দানেশ ও মা। টাকাপয়সা নিয়ে বিরোধে এক ভারতীয়কে খুন করেছিল রাজেশ। তার মা বলেন, ছেলে ১১ বছর ধরে জেলে। এই ১১ বছর তিনি ভালোভাবে ঘুমাতে পারেননি। প্রায়ই স্বপ্ন দেখতেন ছেলে বলছে, মা, চিন্তা করো না। আমি ভালো আছি।
ছেলে এখন মুক্ত। দুঃখিনী মা এবার শান্তিতে ঘুমাতে যাবেন। তাঁর স্বপ্নও সত্যি হয়েছে, ছেলে ভালো আছে।
কীভাবে জেলে এলো জানতে চাইলে রাজেশ জানায়, সে ওই লোককে খুন করেনি, তবে তার বন্ধু যখন লোকটিকে ছুরি মেরে খুন করছিলো, তখন পুরো ঘটনাই সে দেখছে। রাজেশ বলে, কোনোদিন ছাড়া পাবো একথা চিন্তাও করিনি। কেননা, ভিক্টিমের পরিবার রক্তঋণ বাবদ ৩০ লাখ রুপী চেয়েছিল।
মাদক পাচার মামলায় আটক এক ইউক্রেনীয় দম্পতির সঙ্গেও কথা হয়। তারা জানান, এদেশে আসার জন্য বিমানে ওঠার আগে এক লোক তাদের হাতে একটি প্যাকেট দিয়ে বলে, এখানে কিডনি চিকিৎসার কিছু ওষুধ আছে, আমাদের লোক এসে আপনাদের কাছ থেকে নিয়ে যাবে।
১০ দিন আগে তারা গ্রেফতার হন, এখন বিচারের অপেক্ষায় আছেন।
আলিয়া নামের এক মা এসেছেন মরক্কো থেকে। তাঁর মেয়ে সানা (২৪) এখানে বন্দী। মেয়ের দেখা পেয়ে খুব খুশি তিনি। তাঁর মেয়েকে পতিতাবৃত্তিতে জড়িত থাকার দায়ে এক বছর কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, আমার সানা তো পতিতা নয়! সূত্র : খালিজ টাইমস
বিবার্তা/হুমায়ুন/মনোজ
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]