মিয়ানমারের একটি গ্রামের প্রায় দুই হাজার রোহিঙ্গা মুসলমানকে তাদের ঘরবাড়ি থেকে উচ্ছেদ করেছে দেশটির সেনাবাহিনী। বর্তমানে তারা পার্শ্ববর্তী বন ও ধানক্ষেতে লুকিয়ে দিনযাপন করছেন। রয়টার্সের বরাত দিয়ে আলজাজিরার অনলাইন ভার্সনে এ খবর জানানো হয়।
আলজাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘চার রোহিঙ্গা সূত্র রয়টার্সকে টেলিফোনে জানায়, মিয়ানমারের সেনারা রবিবার দেশটির মধ্যাঞ্চলীয় মান্দালাই প্রদেশের ‘কি কান পিন’ গ্রামে ঢুকে সেখানকার সব মুসলমান অধিবাসীকে গ্রামটি ত্যাগ করার নির্দেশ দেয়। এ সময় জরুরি প্রয়োজনীয় সামগ্রী ছাড়া তাদের অন্য কিছু নিতে দেয়া হয়নি।’
সোমবার উচ্ছেদ হয়ে যাওয়া এক রোহিঙ্গা জানান, ‘রবিবার বিকেলে আমাকে আমার বাড়ি থেকে বের করে দেয়া হয়েছে। বর্তমানে আমার পরিবারের সব সদস্যসহ প্রায় ২০০ মানুষ ধানক্ষেতে অবস্থান করছি। আমরা নিঃস্ব হয়ে গেছি।’
তিনি আরো বলেন, ‘সৈন্যরা গ্রামে ঢুকে আমাদেরকে দ্রুত ঘরবাড়ি ত্যাগ করার নির্দেশ দিয়ে বলে, কথা না শুনলে তারা আমাদের গুলি করবে।’
দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনীর ওপর সাম্প্রতিক হামলার জের ধরে সংখ্যালঘু মুসলমানদের বিরুদ্ধে এ পদক্ষেপ নেয়া হলো বলে ধারণা করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, গত ৯ অক্টোবর মিয়ানমারের বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী তিনটি পুলিশ পোস্টে সশস্ত্র হামলা হয়। ধারাবাহিক এ হামলায় দুই পুলিশ নিহত ও ছয় পুলিশ নিখোঁজ আছে বলে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী দাবি করেছে। তাদের অভিযোগ, রোহিঙ্গা মুসলমানরা এ হামলা চালিয়েছে।
জাতিসংঘের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্বের সবচেয়ে নির্যাতিত জনগোষ্ঠীর একটি মিয়ানমারের রোহিঙ্গা সম্প্রদায়। প্রায়ই দেশটির বৌদ্ধদের হাতে নির্যাতনের শিকার হন মুসলিম ধর্মাবলম্বী এ সম্প্রদায়ের লোকেরা। দেশটির রাখাইন প্রদেশে তাদের বাস, যারা পৃথিবীর কোনো দেশেরই নাগরিক নয়। দেশটি রোহিঙ্গাদেরকে তার নাগরিক মনে করে না। বরং মিয়ানমার মনে করে তাদের আদি আবাস বাংলাদেশ। এমনকি রোহিঙ্গা শব্দটি ব্যবহারেও দেশটির সরকারের আপত্তি রয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, বিভিন্ন সময় সহিংসতার মুখে পালিয়ে সীমান্ত পার হয়ে তাদের অনেকেই বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। কক্সবাজার এলাকাতেই তাদের একটি বড় অংশ বাস করেন। এছাড়া চট্টগ্রাম, বান্দরবান, খাগড়াছড়িতেও কিছু রোহিঙ্গা বসবাস করছেন। সরকারের রেজিস্টার্ড ক্যাম্পগুলোতে ৩৩ হাজারের মতো রোহিঙ্গা বাস করে। কিন্তু বলা হয়, বাংলাদেশে তাদের মোট সংখ্যা পাঁচ লাখের মতো।
বাংলাদেশে তাদের শরণার্থী হিসেবে স্বীকৃতি নেই এবং পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়ার প্রসঙ্গটি বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে বহুদিন যাবত একটি বিতর্কিত ইস্যু হয়ে আছে। সূত্র: আলজাজিরা ও বিবিসি
বিবার্তা/নিশি
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]