বিজেপির অবিসংবাদী নেতা ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তার বক্তব্যের কোনো বিরোধিতা কেউ এখনো পর্যন্ত করেনি। কিন্তু দল যদি রাজনৈতিকভাবে বিপদে পড়ে, তবে কেউ যে ছেড়ে কথা বলবে না সেটা ভালোই জানেন নরেন্দ্র মোদী। কারণ, আগেই দলের পক্ষে মোদীকে জানানো হয়, এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হলে দেশের সাধারণ মানুষ প্রবল সমস্যায় পড়ে যাবেন।
এতোসব বিচার বিশ্লেষণ হচ্ছে সম্প্রতি টাকা বাতিলে নেয়া মোদির যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের কারণেই। কারণ কালো টাকা উদ্ধারের এ সিদ্ধান্তের ফল অন্যরকম হলেও হতে পারে। বুমেরাং হয়ে ফিরতে পারে এই কঠোর সিদ্ধান্ত।
এ ব্যাপারে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো যে বিরোধিতা করবে সেটা ভালই জানতেন নরেন্দ্র মোদী। রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করার শক্তিও রয়েছে তার। কিন্তু সেই বিপদ কখনই প্রাণের ঝুঁকি নয়। মোদী আরো বড় চাকে ঢিল মেরেছেন।
শুধু কালো টাকা উদ্ধারই কি মোদির লক্ষ্য? আর সেই টাকা উদ্ধার করতে পদক্ষেপ করে তাঁর মুখে মৃত্যুর কথা কেন? তিনি কেন বললেন, আমি জানি কারা আমার বিরুদ্ধতা করছে, তারা হয়তো আমাকে বাঁচতে দেবে না, আমার সর্বনাশ করবে, কারণ ৭০ বছর ধরে যে লুঠের সম্পত্তি তারা সঞ্চয় করেছিল, আমার জন্য সেই সম্পদের ভবিষ্যৎ এখন অন্ধকার। এই ‘তারা’ টা আসলে কারা?
ভারতে সক্রিয় শক্তিশালী সব জঙ্গি সংগঠনই এখন আর্থিক-সম্পদ শূন্য হতে বসেছে। পাক জঙ্গি সংগঠনগুলোর অবস্থাও তাই। আপাতত সন্ত্রাসবাদীদের হাত খালি। না, খালি নয়, বাতিল কাগজে ভরা। ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে এমনিতেই জঙ্গিদের টার্গেটে ছিলেন, রয়েছেন মোদী। কিন্তু এবার নতুন করে প্রতিহিংসার টার্গেট হলেন।
ভয় রয়েছে রাজনৈতিক সমর্থন হারানোরও। এই পদক্ষেপের আগে প্রধানমন্ত্রীকে দলের অনেকেই সতর্ক করেন। কিন্তু মোদী অনড় ছিলেন। অরুণ জেটলির কথা অনুসারে সেই আপত্তির জবাবে মোদী বলেন, ‘আমি কিছু করে যেতে চাই। কেবলমাত্র দুটো সেতু উদ্বোধন করার জন্য প্রধানমন্ত্রী হইনি। রাজনৈতিক ক্ষতি হলে হবে। কালো টাকার বিহিত করেই ছাড়ব।’
কালো বাজার, অপরাধ জগৎ সব সময়েই সমান্তরাল অর্থনীতি চালায়। তার মূলেও কুঠারাঘাত করতে চেয়েছেন মোদী। সেই কালো বাজার যে বড় ধাক্কা খেয়েছে তা অনস্বীকার্য। সুতরাং, সেখানেও শত্রু বাড়িয়ে ফেললেন নরেন্দ্র মোদী। সরকার সিদ্ধান্ত নিলেও এই পদক্ষেপ তাঁর ‘একক’ বলেই প্রচার নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তাই বিপদটাও অনেকাংশেই তাঁর ‘একক’।
ভারতে এমন বিপদ নতুন নয়। স্বাধীনতার পরে প্রথম রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বলি হয়েছেন মহাত্মা গান্ধী। ভক্ত সেজে কাছে গিয়ে গুলি করে মেরেছিল নাথুরাম গডসে। মোদির দলের আদিপুরুষ শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যু নিয়েও রয়েছে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার অভিযোগ।
এর পরে নিজের নিরাপত্তারক্ষীদের হাতে প্রাণ দিতে হয়েছে ইন্দিরা গান্ধীকে। ‘নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা’ শব্দকে মিথ্যা প্রমাণিত করে রাজীব গান্ধীকে হত্যা করেছে আততায়ীরা। এই সব হত্যার পেছনে ছিল একটি বা দু’টি সন্ত্রাসবাদী বিশ্বাসের প্রতিশোধ। কিন্তু, নরেন্দ্র মোদি যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তাতে বিপাকে দেশের সঙ্গে বিদেশের অপরাধ জগৎ। সেই তালিকায় ঘরোয়া বিপদ মাওবাদী থেকে দাউদ ইব্রাহিম সবাই রয়েছে। সূত্র : এবেলা
বিবার্তা/কাফী
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]