শিরোনাম
গানের সাত-সতেরো জানুন
প্রকাশ : ০৬ অক্টোবর ২০১৬, ১৪:২৪
গানের সাত-সতেরো জানুন
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

আমরা সকলেই কমবেশি গান শুনতে পছন্দ করি। জীবনের সুখে, দুঃখে, আনন্দে যে কোনও অনুভূতিতে হৃদয় হতে উৎসারিত হয় এই গান। কারণ সুরের সঙ্গে যুগ যুগ ধরে অবিচ্ছেদ্য সম্পর্কে বাঁধা পড়েছে সাধারণ মানুষ। সে ছোট হোক কিংবা বৃদ্ধ গানের প্রেমে মজেননি এমন ব্যক্তি খুঁজে পাওয়া সত্যিই দুষ্কর। তবে সকলেই সব ধরনের গান পছন্দ করে তা কিন্তু নয়। একেক জন মানুষ একেক রকম রুচির গান পছন্দ করে।


কারো হয়তো রোমান্টিক গান পছন্দ, কারো হয়তো লাউড ‍মিউজিক, করো হয়তো ক্লাসিক্যাল গান, কারো বা ব্যান্ড সঙ্গীত ইত্যাদি বিভিন্ন আঙ্গিকের গান ভাল লাগে। বিভিন্ন ঘরানার গান মানুষ তার বয়স, রুচি অনুসারে শোনে। কিন্তু এই গান সম্বন্ধে এমন কিছু আজব তথ্য আছে যা শুনে অনেকেই হয়তো তাজ্জব হয়ে যেতে পারেন। আসুন জেনে নেয়া যাক সেই আজব তথ্য-


কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি: গান শুনতে শুনতে শারীরিক কাজ করলে শরীরের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। মনোবিদ্যার এক জার্নাল থেকে জানা যায়, যাদের একই ধরনের কাজ করতে করতে একঘেয়েমি চলে আসে, গান তাদের জন্য টনিকের মতো কাজ করে। এক্ষেত্রে রিদমিক মিউজিক বা ডান্স মিউজিক শুনলে শরীরে এক্সট্রা এনার্জি অনুভুত হয় যা কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করতে প্রভূত সাহায্য করে।


স্ট্রেস ও অবসাদ কাটিয়ে সুস্থ জীবনযাপনে: স্ট্রেস কাটিয়ে সুস্থ জীবনযাপনে খুব সাহায্য করে গান। তাই হাজার কাজের চাপে মনে বাড়তি স্ট্রেস ভিড় জমলেই পছন্দের গান শুনুন। দেখবেন অনেক রিল্যাক্স লাগবে। যদি কোনো কারণে মন খারাপ থাকে বা অবসাদে ভোগেন তাহলে গলা ছেড়ে গান গেয়ে উঠুন। আপনার মন ভাল হতে বাধ্য। একঘেয়েমি জীবন, মানসিক দুশ্চিন্তা, কর্মক্ষেত্রের চাপ, ইত্যাদি নানা কারণে মানুষ অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়ে। এ থেকে মুক্তি পেতে গান খুব সাহায্য করে।


হার্টবিট: গান শোনার সময় গানের ছন্দের সঙ্গে প্রায় মিলে যায় আমাদের হৃদপিণ্ডের ছন্দও। উদ্বেগ, মানসিক চাপমুক্ত রেখে করোনারি হার্ড ডিজিজ থেকে রক্ষা পেতে কাজ করে গান। ১৫০০ রোগীদের নিয়ে এক গবেষণায় দেখা যায়, যারা প্রতিনিয়ত গান শুনেছেন তাদের রক্ত চাপ, হার্ট রেট এবং হৃদরোগ রোগীদের উদ্বেগ কমাতে সাহায়তা করেছে।


ব্যায়াম: অনেক সময় দেখা গেছে, যারা প্রতিনিয়ত ব্যায়াম করে তাদের একঘেয়েমি ব্যায়াম করতে করতে বিরুক্তি ‍ও ক্লান্তি চলে আসে। এক্ষেত্রে গান কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। যদি আপনি গান শুনতে শুনতে ব্যয়াম করেন তাহলে সহজে ক্লান্তি আসে না। শারীরিক অবসাদ ও ক্লান্তি দূর করতেও খুব সাহায্য করে গান।



উদার: শুনতে আশ্চর্যজনক হলেও ফ্রন্টিয়র সাইকোলজির একটি সমীক্ষা জানাচ্ছে, যারা তাদের পছন্দের গান বেশি শোনেন তারা তুলনামূলক বেশি উদার হন।


গাছের বৃদ্ধি: এটাই সত্যি যে গাছেদেরও অনুভূতি রয়েছে। দেখা গেছে, মিউজিক্যাল পরিবেশের মধ্যে যদি গাছ রাখা হয় তাহলে তার বৃদ্ধি হয় অনেক তাড়াতাড়ি।


মুখমণ্ডলের অভিব্যক্তি পরিবর্তনে: গান আপনার মুখমণ্ডলে সুখি এবং দুঃখী মনের অভিব্যক্তি প্রকাশে সাহায্য করে। যখন আমরা ‍খুব আনন্দিত থাকি তখন লাউড মিউজিক বা রিদমিক মিউজিক শুনতে পছন্দ করি। দুঃখী মনের ভাব প্রকাশে স্যাড মিউজিক যথেষ্ট প্রভাব ফেলে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, বিভিন্ন মিউজিকের ধরনের উপর মানুষের মুখমণ্ডলের অভিব্যক্তি প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হতে থাকে।


মস্তিষ্কের ব্রেনের কার্যকারিতা বৃদ্ধিতে: গান মস্তিষ্ক উদ্দীপক। ব্যায়াম বাদে সমগ্র মস্তিষ্ককে উদ্দীপ্ত করতে ‍গানের তুলনা মেলা ভার। নিয়মিত গান শুনলে মস্তিষ্কের ব্রেনের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। দেখা গেছে, প্রধানত বয়স্ক মানুষদের ব্রেন হেলদি রাখার জন্য কার্যকরী প্রভাব রয়েছে গানের।


থেরাপি হিসেবে ব্যবহার: মিউজিক রোগীর শারীরিক ব্যথা উপশমে ইতিবাচক ভূমিকা রাখে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক অ্যাডভান্স নার্সিংয়ের উপর প্রকাশিত এক জার্নাল থেকে জানা যায়, থেরাপি হিসেবে মিউজিক ব্যবহারের মাধ্যমে আর্থারাইটিস আক্রান্ত রোগীদের ২১ শতাংশ ব্যথা উপশমে এবং ২৫ শতাংশ বিষণ্নতা কমাতে সাহায্য করে।


লাউড মিউজিক: জানেন কি বার বা ডিস্কোতে কেন লাউড মিউজিক বাজানো হয়? যাতে আপনি বেশি পানীয় খেতে পারেন। দেখা গেছে, স্লো মিউজিকের তুলনায় লাউড মিউজিকে মানুষ বেশি পান করে।


মনঃসংযোগ বৃদ্ধিতে: মনঃসংযোগ বৃদ্ধিতে শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের তুলনা নেই। গান শোনা এমনই একটি কাজ যাতে আমাদের সম্পূর্ণ মস্তিষ্ক একসঙ্গে কর্মক্ষম হয়ে ওঠে। এক পরীক্ষায় দেখা গেছে, স্ট্রোকে আক্রান্ত রোগীদের শাস্ত্রীয় সঙ্গীত শোনানো হলে তারা দ্রুত শারীরিক অসুস্থতা হতে বেরিয়ে আসতে পারে।


স্মৃতিশক্তির কর্মক্ষমতা বৃদ্ধিতে: গান মানুষের স্মৃতিশক্তির উন্নতি ঘটাতে যথেষ্ট সাহায্য করে। ব্রেন যেমন স্মৃতি সংরক্ষণ করতে পারে, ঠিক তেমনি গানও আমাদের স্মৃতিশক্তিকে বিকশিত করে। আমরা যখন কোন পরিচিত গান শুনি, তখন তার সাথে সাথেই অতীতের কোনো মুহূর্ত আমাদের স্মৃতিকে উসকে দেয়। মনের অজান্তেই গানের লিরিক্স আমাদের চোখের সামনে ভাসতে থাকে। সুরের তালে তালে গাইতে থাকি সেই পরিচিত গানটি। এই গানের সাথে জড়িত অনেক পুরনো মুহূর্তগুলো আমাদের মানসপটে ভেসে উঠতে থাকে। এভাবে গান স্মৃতিশক্তির কর্মক্ষমতাকে বিস্তৃত করে।


শিশুদের শান্ত রাখতে: শিশুদের শান্ত রাখার এক অব্যর্থ ঔষধ হলো গান। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, শিশুদেরকে কিছু বলে শান্ত করার চেয়ে তাদের যদি পরিচিত কোন গান শুনানো হয় তাহলে তারা দ্রুত সাড়া দেয় এবং শান্ত হয়ে পড়ে।


ব্যক্তিত্বের পূর্বাভাস: আপনি কি ধরনের গান পছন্দ করেন তার উপর ভিত্তি করে আপনার ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে এক ধরনের ধারণা পাওয়া যায়। এই যেমন ধরুন:


● ব্লুজ ও জাজ ভক্তরা উন্নত রুচির, উচ্চ আত্মসম্মানবোধ এবং সৃজনশীল ক্ষমতার অধিকারী।


● শাস্ত্রীয় গানের ভক্তরা অন্তর্মুখী, উন্নত রুচির, উচ্চ আত্মসম্মানবোধ এবং নিশ্চিন্ত জীবনের অধিকারী।


● অপেরা ভক্তরা ভদ্র, সৃষ্টিশীল এবং আভিজাত্যের অধিকারী।


● পপ ভক্তরা পরিশ্রমী কিন্তু সে পরিমাণে সৃষ্টিশীল নয়, বহির্মুখী এবং আত্মসম্মানবোধ সম্পন্ন।


● দেশাত্মকবোধের গানের ভক্তরা বহির্মুখী, পরিশ্রমী এবং দেশের প্রতি অনুরক্ত।


● হেভি মেটাল ও ব্যান্ড সঙ্গীত ভক্তরা কম পরিশ্রমী, কম সৃষ্টিশীল, কম আত্মসম্মানবোধ সম্পন্ন এবং আরামপ্রিয়।


গান আমাদের দৈনন্দিন জীবনের বেঁচে থাকার ফুয়েল। শারীরিক, মানসিকভাবে নিজেকে ফিট রাখতে গান শুনুন। প্রাত্যহিক কর্মচঞ্চলাতাকে রিলিফ দেয়ার এক মহা ঔষধ হচ্ছে মিউজিক।


মিউজিক ছাড়া একটা দিন কল্পনা করুন তো! মনে হবে জীবনটা একঘেয়ে, পানসে, যাচ্ছেতাই। কাজেই নিজের পছন্দমাফিক গান শুনুন।বিন্দাস থাকুন। আর গানের মাধ্যমে জীবনকে উপভোগ করতে একদম ভুলবেন না।


বিবার্তা/জিয়া


সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com