
কুষ্টিয়ার দৌলতপুর সীমান্তে মাদক পাচারকারী জনি হত্যা মামলার প্রধান আসামি সীমান্তের শীর্ষ সন্ত্রাসী লালু সহ ২জন আসামি গ্রেফতার হয়েছে।
সোমবার (১ ডিসেম্বর) নাটোরের বড়াইগ্রাম হাইওয়ে এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করে সন্ধ্যায় দৌলতপুর থানায় সোপর্দ করা হয়। এনিয়ে জনি হত্যা মামলার ৪ আসামি গ্রেফতার হলো। গ্রেফতার হওয়া আসামিরা উপজেলার প্রাগপুর ইউনিয়নের সীমান্ত সংলগ্ন জামালপুর গ্রামের ছামুর ছেলে সীমান্তের শীর্ষ সন্ত্রাসী লালু (৪৬) এবং তার অন্যতম সহযোগি একই এলাকার কাবের আলীর ছেলে নাজমুল (৩৫)। হত্যাকান্ড ঘটিয়ে তারা বাসযোগে ঢাকার উদ্দেশ্যে পালিয়ে যাচ্ছিলো বলে কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার দেলোয়ার হোসেন জানিয়েছেন।
মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) দুপুরে তাদের আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। গ্রেফতার হওয়া সন্ত্রাসীরা সীমান্ত এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে অস্ত্র ও মাদক ব্যবসার পাশাপাশি অপরাধ জগতের সিন্ডিকেট গড়ে তোলে সীমান্তে নির্বিগ্নে অপরাধ কর্মকান্ড চালিয়ে আসছিল। শুধুমাত্র মাদক পাচারকারী জনি হত্যাকন্ডের মামলা নয়, এদের বিরুদ্ধে হত্যা, সন্ত্রাসী কর্মকান্ড, ছিনতাই, চাঁদবাজি, অস্ত্র ও মাদক ব্যবসার একাধিক মামলা রয়েছে। প্রভাশালীদের ছত্রছায়ায় দীর্ঘদিন ধরে এরা অপরাধ কর্মকান্ড চালিয়ে আসছে বলে এলাকাবাসী জানিয়েছে।
এদিকে সীমান্তের শীর্ষ সন্ত্রাসী লালু ও তার সহযোগি নাজমুল গ্রেপ্তার হলে তাদের ছাড়িয়ে নিতে মঙ্গলবার রাতে প্রভাবশালীরা থানায় গিয়ে তদবির চালিয়েছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে।
এর আগে শনিবার (২৯ নভেম্বর) রাতে জনি হত্যা মামলার আরও দুই আসামি জামালপুর গ্রামের মৃত দুল্লোর আলীর ছেলে সিকান্দার আলী (৬০) এবং জাহিদুল ইসলামের ছেলে আসিফ হোসেনকে (১৫) গ্রেফতার করে দৌলতপুর থানা পুলিশ। একইদিন দৌলতপুর উপজেলার প্রাগপুর ইউনিয়েনের মহিষকুন্ডি মাঠপাড়া এলাকায় কবরস্থানের পাশে দুপুরে মাদক পাচারকারী জনি (৩০) কে কুপিয়ে ও পায়ের রগ কেটে হত্যা করা হয়।
জামালপুর সীমান্তের চিহ্নিত শীর্ষ সন্ত্রাসী, অস্ত্র ও মাদক ব্যবসায়ী সোহান, সুমন, লালু, নাজমুল সহ ৪০-৪৫ জন সন্ত্রাসী এ হত্যাকান্ডে অংশ নেয়।
নিহত জনি দীর্ঘদিন ধরে জামালপুর সীমান্তের সোহান ও সুমনের অস্ত্র এবং মাদক বহনের কাজে জড়িত ছিল। মাদক পাচারের পাওনা টাকা নিয়ে তাদের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হয়। এর জের ধরে গত শুক্রবার (২৮ নভেম্বর) সন্ধ্যায় সোহান ও সুমনের লোকজন জনিকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুিপয়ে জখম করে। এতে সে গুরুতর আহত হয় এবং তার পিঠে একাধিক সেলাই দিতে হয়। হামলার ভয়ে জনি শুক্রবার রাতে মহিষকুন্ডি মাঠপাড়া এলাকায় অবস্থান করে। পরদিন শনিবার দুপুর দেড়টার দিকে জনি নিজ বাড়ি জামালপুর গ্রামে ফেরার পথে পূর্ব থেকে ওৎ পেতে থাকা সন্ত্রাসীরা তার ওপর হামলা চালায় এবং ধারালো অস্ত্র দিয়ে জনির দুই পায়ের রগ কেটে ও কুপিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে লাশ ঘটনাস্থলে ফেলে রাখে। খবর পেয়ে দৌলতপুর থানা পুলিশ নিহত যুবকের লাশ উদ্ধার করে
কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করে। নিহত জনি একই ইউনিয়নের সীমান্ত সংলগ্ন জামালপুর গ্রামের মৃত জাকির হোসেনের ছেলে এবং সে সীমান্ত এলাকার মোহন হত্যা মামলার প্রধান আসামি।
জনি হত্যার প্রধান আসামি গ্রেফতার হওয়ার বিষয়ে দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সোলায়মান শেখ বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে কুষ্টিয়া জেলা পুলিশের একটি টিম নাজমুল ও লালুকে নাটোরের বড়াইগ্রাম হাইওয়ে এলাকা থেকে গ্রেফতার করে সোমবার সন্ধ্যায় দৌলতপুর থানায় হস্তান্তর করে। পরে আইনি প্রক্রিয়া শেষে আজ (মঙ্গলবার) দুপুরে তাদের আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।
কুষ্টিয়া অতিরিক্ত পুলিশ সুপার দেলোয়ার হোসেন জানান, জনি হত্যা মামলার ১ ও ৫ নম্বর আসামি ঢাকায় পালিয়ে যাচ্ছিল। গোপন তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশের একটি টিম তাদের গ্রেপ্তার করে দৌলতপুর থানায় সোপর্দ করে। বাঁকী আসামিদের ধরতে এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
বিবার্তা/শরীফুল/এমবি
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]