
ভারতের বিরোধীদলীয় নেতা ও ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সাবেক সভাপতি রাহুল গান্ধীকে আটক করেছে দেশটির পুলিশ। তার সঙ্গে তার বোন ও লোকসভার সদস্য প্রিয়াঙ্কা গান্ধীকেও আটক করা হয়েছে।
বিজেপির সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের আঁতাতের অভিযোগে রাজধানী দিল্লিতে বিক্ষোভ চলাকালে অন্যান্য নেতার সঙ্গে তাদেরকে আটক করে পুলিশ।
সোমবার (১১ আগস্ট) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, দিল্লি পুলিশ সোমবার সকালে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী, প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ভদ্রা, শিবসেনা (উদ্ধব ঠাকরে গোষ্ঠী) নেতা সঞ্জয় রাউতসহ বিরোধী দলের বেশ কয়েকজন এমপিকে আটক করেছে। শাসকদল বিজেপির সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের আঁতাতের অভিযোগে বিরোধীদের আন্দোলন সংসদ ভবনের বাইরে থেকে মধ্য দিল্লির রাস্তায় ছড়িয়ে পড়লে তাদের আটক করা হয়।
প্রতিবাদস্থলের ফুটেজে দেখা যায়, সংসদ ভবনের বাইরে বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী প্ল্যাকার্ড হাতে স্লোগান দিচ্ছেন, পুলিশের ব্যারিকেডে ধাক্কা দিচ্ছেন এবং কেউ কেউ তা টপকানোর চেষ্টা করছেন। এসময় তৃণমূল সংসদ সদস্য মিতালি বাগ হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে পড়েন এবং রাহুল গান্ধী তাকে সহায়তা করেন।
এনডিটিভি বলছে, কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ‘ইন্ডিয়া’ জোট এদিন সকালে নির্বাচন কমিশনের দপ্তরে মিছিল করার পরিকল্পনা করেছিল। তবে পুলিশ আগেই সংসদ ভবনের চারপাশের সড়ক বন্ধ করে ব্যারিকেড বসায় ও বিপুলসংখ্যক নিরাপত্তাকর্মী মোতায়েন করে বিক্ষোভকারীদের ঘেরাও করে রাখে। এর ফলে সংসদের উভয় কক্ষই দুপুর ২টা পর্যন্ত মুলতবি করা হয়।
বিরোধীরা অভিযোগ করেছে, বিজেপি এবং নির্বাচন কমিশন ভোটার তালিকা জালিয়াতি ও প্রভাবিত করার মাধ্যমে নির্বাচনে কারচুপির চেষ্টা করছে। এই অভিযোগ প্রথম জোরালো হয় গত বছরের মহারাষ্ট্র নির্বাচনের পর। কংগ্রেস, শিবসেনা (উদ্ধব ঠাকরে গোষ্ঠী) ও এনসিপি (শরদ পওয়ার গোষ্ঠী) নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে ভোটার তালিকা বদলে বিজেপির জয় নিশ্চিত করার অভিযোগ এনেছে।
তারা বলছে, মহারাষ্ট্রে কেন্দ্রীয় নির্বাচনের মাত্র ছয় মাসের মধ্যে অস্বাভাবিক সংখ্যক নতুন ভোটার যুক্ত হয়েছে। পরে কর্নাটকের লোকসভা নির্বাচন নিয়েও একই ধরনের অভিযোগ ওঠে।
গত সপ্তাহে ‘ইন্ডিয়া’ জোটের বৈঠকে রাহুল গান্ধী উপস্থাপনায় তথ্য-প্রমাণ দেখিয়ে বলেন, দেশে ব্যাপক ভোটার জালিয়াতি হচ্ছে। তিনি নির্বাচন কমিশনের কাছে দাবি জানান, ভোটার তালিকার খসড়া অনলাইনে সার্চযোগ্য আকারে প্রকাশ করতে, যাতে ভুলত্রুটি যাচাই করা যায়।
এছাড়া বিহারের ভোটার তালিকা নিয়ে নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত ‘বিশেষ নিবিড় সংশোধনী’ প্রক্রিয়া নিয়ে বিরোধীদের ক্ষোভ আরও বেড়েছে। নির্বাচন সামনে রেখে কয়েক মাস আগে এই প্রক্রিয়ার ঘোষণা দেয় কমিশন, যা সুপ্রিম কোর্টে চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে।
আবেদনকারীরা দাবি করেছেন, এই পদক্ষেপ বেআইনি এবং কমিশনের এখতিয়ারের বাইরে। এছাড়া সময় নির্ধারণ নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে, কারণ এতে বাদ পড়া ভোটারদের আপিল করার যথেষ্ট সময় নাও থাকতে পারে। বিরোধীদের অভিযোগ, বিজেপি ভোট ব্যাংক হ্রাসের উদ্দেশ্যে এই প্রক্রিয়া চালু করিয়েছে।
এছাড়া ভোটার যাচাইয়ের জন্য সাধারণ সরকারি পরিচয়পত্র, যেমন আধার বা নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব পরিচয়পত্র গ্রহণ না করার বিষয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
ভারতের সুপ্রিম কোর্ট অবশ্য বিশেষ সংশোধনী প্রক্রিয়া চালিয়ে যেতে অনুমতি দিয়েছে, তবে শর্ত দিয়েছে— যাতে প্রকৃত ভোটাররা বাদ না পড়েন এবং ইতোমধ্যে বাদ যাওয়া প্রায় ৬৫ লাখ ভোটারকে আপিলের সুযোগ দেওয়া হয়।
সব অভিযোগের জবাবে নির্বাচন কমিশন বলেছে, তাদের প্রক্রিয়া স্বচ্ছ এবং স্বাধীন ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করার জন্যই এসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। কমিশন রাহুল গান্ধীকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বলেছে, তিনি যেন স্বাক্ষর করা হলফনামায় এসব অভিযোগের প্রমাণ পেশ করেন।
বিবার্তা/এমবি
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]