
যন্ত্রপাতি বিকল, চিকিৎসক-সংকট ও পর্যাপ্ত জনবল না থাকায় সীমান্তবর্তী কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেরস্বাস্থ্যসেবা নাজুক অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। প্রায় ৭ লক্ষ মানুষের বৃহৎ উপজেলায় একমাত্র ৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি চলছে চরম অব্যবস্থাপনার মধ্যদিয়ে।
উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নের ৫৩টি কমিউনিটি ক্লিনিক ও ৭টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রের প্রায় একই চিত্র। অধিকাংশ কমিউনিটি ক্লিনিকে অনুপস্থিত থাকে স্বাস্থ্যকর্মীরা, নেই প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র ও স্বাস্থ্যসেবা। বিশেষ করে মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন চিলমারী ও রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের প্রায় অর্ধলক্ষ মানুষ নির্ভর করে গ্রাম্য চিকিৎসক ও ওষুধ ব্যবসায়ীদের ওপর। বর্ষায় নৌকায় আর শুষ্ক মৌসুমে বালুচর পাড়ি দিয়ে হাসপাতালে পৌঁছাতে গিয়ে প্রাণহানির ঘটনাও ঘটে অহরহ বলে অভিযোগরয়েছে।
দৌলতপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্র জানায়, একমাত্র এক্সরে মেশিনটি এক যুগ ধরে বিকল। ৩৫জন চিকিৎসক পদের বিপরীতেকর্মরত মাত্র ৭ জন, এর মধ্যে নেই কোনো গাইনি বিশেষজ্ঞ। ফলে সিজারিয়ানসহ জটিল প্রসবের রোগীদের পাঠাতে হয় অন্য হাসপাতালে।
২০২২ সালে ৬ বছর পর চালু হওয়া অপারেশন থিয়েটারও আবার বন্ধ হয়ে গেছে। চলতি বছরের মে মাস থেকে সে সেবাও বন্ধ। এমন সংকটে চিকিৎসা নিতে আসা উপজেলার সাধারণ মানুষ বাধ্য হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন অনুমোদিত ও অনুমোদনহীন বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে, যেখানে স্বাস্থ্যসেবা মিলছে টাকার বিনিময়ে। দিনে গড়ে ৫০০ থেকে ৬০০ জন রোগী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসেন, আর ৫০ শয্যার স্থলে ভর্তি থাকেন সর্বদা ৮০ থেকে ১২০ জন রোগী বা তারও বেশী। সেবা দিচ্ছেন মাত্র ৩ জন চিকিৎসক ও ৮ জন মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট।
চিলমারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী আব্দুল মান্নান বলেন, তার ইউনিয়নে কমিউনিটি ক্লিনিকে ওষুধ পাওয়া যায় না।জমি দিলেও আজও স্বাস্থ্যকেন্দ্র নির্মাণ করিনি। বারবার জানানো সত্ত্বেও কার্যকর পদক্ষেপ নেই।
সেবা নিতে আসা রোগীদের অভিযোগ, বাইরে থেকে খরচ করে এক্সরে করতে হচ্ছে। চিকিৎসক সংকটে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়েচিকিৎসা নিতে হয়, যা দুঃসহ ও কষ্টদায়ক।
নানা সংকটের বিষয়ে দৌরতপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. তৌহিদুল হাসান তুহিন বলেন, সংকটগুলো আমরা বারবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি, কিন্তু এখনো কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। তবে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা চিকিৎসা না পেয়ে কেউ বিমুখ হয়ে ফিরে যায় না। যথাসাধ্য রোগীদের সেবা দেয়ার চেষ্টা করা হয়।
এ বিষয়ে দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আব্দুল হাই সিদ্দিকী বলেন, মাসিক সমন্বয় সভায় স্বাস্থ্য খাতের সমস্যা ওসমাধান নিয়ে আলোচনা করা হবে।
কুষ্টিয়া জেলা সিভিল সার্জন শেখ মোহাম্মদ কামাল হোসেন বলেন, এত বড় উপজেলায় ৫০ শয্যার হাসপাতাল যথেষ্ট নয়। ১০০ শয্যার হাসপাতাল প্রয়োজন। একমাত্র দৌলতপুরেই এক্সরে মেশিন নেই। এ বিষয়টিও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
বৃহৎ জনগোষ্ঠির মৌলিক চাহিদার অন্যতম প্রাপ্ত সেবা চিকিৎসাসেবা থেকে কেউ যেন বঞ্চিত না সে বিষয়টি দেখাজরুরি এমনটি মনে করেন সংশ্লিষ্ট ও ভূক্তভোগী জনসাধারণ।
বিবার্তা/শরীফুল/এমবি
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]