
সুদানে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের একটি ঘাঁটিতে প্রাণঘাতী হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেছেন, ছয় বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীর মর্মান্তিক মৃত্যুর পরও বৈশ্বিক শান্তি ও বহুপাক্ষিক সহযোগিতার প্রতি বাংলাদেশের অঙ্গীকার অটুট থাকবে।
রোববার (১৪ ডিসেম্বর) রিয়াদে জাতিসংঘ সভ্যতাসমূহের জোট (ইউএনএওসি)-এর ১১তম গ্লোবাল ফোরামে বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি এ কথা বলেন। খবর বাসসের
তিনি আরও বলেন, বৈশ্বিক শান্তির প্রতি আমাদের অঙ্গীকারের ধারাবাহিকতায় আমরা গতকালের ওই কাপুরুষোচিত হামলার তীব্র নিন্দা জানাই। সুদানের কাদুগলিতে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের লজিস্টিকস ঘাঁটিতে সংঘটিত হামলায় ছয়জন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী নিহত হন এবং আরও কয়েকজন আহত হন, যা আমাদের গভীরভাবে শোকাহত করেছে।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, এ ঘটনা এমন এক বাস্তবতাকে সামনে নিয়ে আসে, যেখানে বিশ্বজুড়ে সংঘাত ও মানবিক সংকট আরও গভীর হচ্ছে; একই সঙ্গে বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ছে বিদেশিবিদ্বেষ, অসহিষ্ণুতা, বর্ণবাদ ও ইসলামোফোবিয়া।
ডিজিটাল যুগে বিভাজন আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ভুয়া তথ্য, ঘৃণাত্মক বক্তব্য ও ‘ডিপফেক’ প্রযুক্তি শান্তি ও অভিন্ন মানবিক মূল্যবোধের জন্য গুরুতর হুমকি হয়ে উঠেছে।
জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে অন্যতম শীর্ষ সেনা প্রেরণকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের ভূমিকার কথা তুলে ধরে তৌহিদ হোসেন বলেন, আন্তঃসাংস্কৃতিক ও আন্তঃধর্মীয় সংলাপ, সহনশীলতা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধে বাংলাদেশ দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে।
তিনি বলেন, ‘শান্তির সংস্কৃতি’ বিষয়ে বাংলাদেশের বার্ষিক জাতিসংঘ প্রস্তাব শান্তি বিষয়ে আমাদের বিশ্বাসকে প্রতিফলিত করে, যেখানে শান্তি কেবল সংঘাতের অনুপস্থিতি নয়, বরং ন্যায়বিচার, সহমর্মিতা ও মানবিক মর্যাদার ওপর প্রতিষ্ঠিত।
মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত ১২ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের মানবিক অঙ্গীকারের কথাও পুনর্ব্যক্ত করেন তিনি। গণহত্যার শিকার রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা ও মর্যাদার সঙ্গে নিজ দেশে প্রত্যাবর্তনের সুযোগ নিশ্চিত করার ওপর জোর দেন উপদেষ্টা।
বৈশ্বিক উদ্যোগ জোরদারের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, তরুণদের ক্ষমতায়ন, প্রজন্মান্তরে সংলাপ, অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষায় বিনিয়োগ এবং শিল্প, ক্রীড়া ও দায়িত্বশীল গণমাধ্যমের মাধ্যমে সাংস্কৃতিক বিনিময় সম্প্রসারণের মাধ্যমে সহমর্মিতা ও আস্থা গড়ে তুলতে হবে।
জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মানুষের ন্যায়বিচার ও জবাবদিহি নিশ্চিত করার পাশাপাশি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মসহ সব ধরনের ঘৃণাত্মক উসকানি প্রত্যাখ্যানের আহ্বান জানান তিনি।
তিনি বলেন, এসব বিষয় বিবেচনায় রেখে আমাদের ঐক্যের মূল্যবোধ জোরদার করতে হবে, বোঝাপড়ার পথ আলোকিত করতে হবে, বৈচিত্র্যের সৌন্দর্য উদ্যাপন করতে হবে এবং আমাদের অভিন্ন মানবিকতা সমুন্নত রাখতে হবে।
উল্লেখ্য, ‘ইউএনএওসি: মানবতার জন্য দুই দশকের সংলাপ- বহুমুখী বিশ্বে পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও বোঝাপড়ার নতুন যুগের অগ্রগতি’ প্রতিপাদ্য নিয়ে রোববার সৌদি আরবের রিয়াদে শুরু হয়েছে দুদিনব্যাপী ইউএনএওসি’র ১১তম গ্লোবাল ফোরাম।
এই ফোরামে রাজনৈতিক নেতা, আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক সংস্থা, ধর্মীয় নেতা, বেসরকারি খাত, নাগরিক সমাজ, শিক্ষাবিদ, তরুণ, শিল্পী, ক্রীড়া ও গণমাধ্যম প্রতিনিধিরা অংশ নেন। ইউএনএওসি’র ২০তম বার্ষিকী উপলক্ষে এটি আয়োজন করা হয় এবং সংস্থাটির ভবিষ্যৎ কর্মপথ নির্ধারণের লক্ষ্য নিয়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
বিবার্তা/এসএস
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]