টেকনাফে অপহরণ ও মানবপাচার চক্রের মূলহোতাসহ গ্রেফতার ৬
প্রকাশ : ০৯ আগস্ট ২০২৩, ১৮:০০
টেকনাফে অপহরণ ও মানবপাচার চক্রের মূলহোতাসহ গ্রেফতার ৬
কক্সবাজার প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

কক্সবাজারের টেকনাফ থানাধীন পুরান পল্লান পাড়া, লেংগুরবিল ও লম্বরি এলাকায় অভিযান চালিয়ে টেকনাফ কেন্দ্রিক অপহরণ ও মানব পাচার চক্রের মূলহোতা মুহিত কামাল ও সাইফুলসহ ৬ জন অপহরণকারীকে গ্রেফতার করেছে র‍্যাব-১৫।


গ্রেফতারকৃতরা হলেন, টেকনাফ সদর ইউনিয়নের নতুন পল্লানপাড়ার মৃত সিরাজুল ইসলামের ছেলে মুহিত কামাল (৩৪), দক্ষিণ লম্বরীর হাফেজুর রহমানের ছেলে সাইফুল ইসলাম (৩৮), রামু উপজেলার দাড়িয়ারদীঘি এলাকার মৃত নুরুল হকের মো. আব্বাস মিয়া প্রকাশ জাহাঙ্গীর (৪০), একই এলাকার থৈয়ংগা কাটার আব্দুল আলমের সৈয়দুল আমিন (২৮), উখিয়া কুতুপালং ৩ নম্বর ক্যাম্পের, ব্লক-বি/২৭, বর্তমানে-নতুন পল্লানপাড়ার আব্দুস সালামের ছেলে তাহের হোসেন (২৫), একই ইউনিয়নের নতুন পল্লানপাড়ার কাদির হোসেনের ছেলে রোহিঙ্গা হাবিবুল্লাহ প্রকাশ লালু (৩০)।


কক্সবাজার র‍্যাব-১৫ এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও সিনিয়র সহকারী পরিচালক (ল’ এন্ড মিডিয়া) মো. আবু সালাম চৌধুরী গণমাধ্যমকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।


টেকনাফের একটি অপহরণ চক্র দীর্ঘদিন ধরে কক্সবাজারের বিভিন্ন জায়গা থেকে এনজিও এবং কনস্ট্রাকশন সাইটে কাজ দেয়ার কথা বলে নিরীহ লোকদেরকে টেকনাফে নিয়ে এসে জিম্মি করে। পরবর্তীতে মিয়ানমারের বিভিন্ন নাম্বারে রেজিস্ট্রেশনকৃত ইমু নাম্বার থেকে কল দিয়ে ভিকটিমের পরিবারের নিকট মুক্তিপণ দাবি করে থাকে। গত ২৩ জুলাই র‍্যাব-১৫ কক্সবাজার একটি অভিযোগের ভিত্তিতে জানতে পারে যে, ২০ জুলাই তৌহিদ নামে এক স্থানীয় যুবক ঈদগাঁও থানাধীন পোকখালি গ্রামের হামিদ হোসেন এবং নিজামুদ্দিনকে রাজমিস্ত্রির কাজ দেওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে নিয়ে আসে। পরবর্তীতে মিয়ানমারের রেজিস্ট্রেশনকৃত সিমে ইমু নাম্বার থেকে দেড় লাখ টাকা করে মোট ৩ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে।


এ ঘটনায় ২৩ জুলাই একটি অপহরণ মামলা হয় এবং পুলিশ তৌহিদকে গ্রেফতার করে। পরবর্তীতে তৌহিদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে র‍্যাবের আভিযানিক দল মূল চক্রকে আটকের লক্ষ্যে কার্যক্রম শুরু করে।


এরই ধারাবাহিকতায় গত ৭ আগস্ট দুপুরে র‍্যাব-১৫ এর একটি চৌকস আভিযানিক দল তথ্য প্রযুক্তি সহায়তায় অপহরণ চক্রের চকরিয়া-রামু-ঈদগাঁও এলাকার এজেন্ট সাইদুল আমিন এবং আব্বাসকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। ধৃত আব্বাসকে নিবিড় জিজ্ঞাসাবাদে প্রেক্ষিতে তার দেয়া তথ্যানুযায়ী এই চক্রের মূলহোতা মুহিত কামাল ও সাইফুল ইসলামসহ আরো দুইজনকে গ্রেফতার করা হয়। উপস্থিত স্বাক্ষীদের সম্মুখে গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিদের হেফাজত হতে সর্বমোট ৩টি স্মার্ট ফোন, ৩টি বাটন মোবাইল ফোন, ১৩টি সীম কার্ড এবং নগদ ২৬,০০০/- (ছাব্বিশ হাজার) টাকা উদ্ধার করা হয়।


জিজ্ঞাসাবাদে অপহরণকারীরা জানায় যে, কক্সবাজারের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ভিকটিমদের কাজ দেয়ার কথা বলে টেকনাফে এনে তারা প্রথমে দুর্গম পাহাড়ে অবস্থিত গুদামঘরে বন্দি করে রাখে। ভিকটিমের সংখ্যা ২০-২৫ জন হলে তাদেরকে মাছধরা বোটে করে সেন্টমার্টিন এ নিয়ে যায় এবং সেখান থেকে মিয়ানমারের অপহরণ চক্রের সদস্যরা মাছ ধরার বোটে করে তাদের মিয়ানমারে নিয়ে যায়। সেখান থেকে মিয়ানমারের নাম্বারে রেজিস্ট্রেশনকৃত ইমু নাম্বার দিয়ে কল দিয়ে ভিকটিমের পরিবারের নিকট মুক্তিপণ দাবি করে। স্থানীয় বিকাশ নাম্বারে মুক্তিপণের টাকা প্রেরণ করা হলে তারা ভিকটিমকে মাছ ধরার বোটে করে আবার টেকনাফে নিয়ে এসে ছেড়ে দেয়।


জিজ্ঞাসাবাদে তারা আরো জানায় যে, টেকনাফের নতুন পল্লানপাড়া, লম্বরি এবং লেংগুর বিল গ্রামের প্রত্যেক পরিবার এই অপহরণ চক্রের সাথে নানাভাবে জড়িত। এই অপহরণ চক্রের মূল হোতারা গ্রামের লোকদেরকে প্রত্যেক মাসে ৪-৫ হাজার টাকা করে প্রদান করে।


মূলহোতারা গ্রামের প্রবেশ মুখে ২৪ ঘন্টা চেকার নিয়োগ করে রাখে। প্রশাসনের কোন গাড়ি বা কোন সদস্যকে দেখলে চেকাররা সাথে সাথে মোবাইল এ্যাপের মাধ্যমে গ্রুপে জানিয়ে দেয়, ফলে তারা সতর্ক হয়ে যায় এবং প্রয়োজনবোধে পালিয়ে যায়। গ্রেফতারকৃত অপহরণ চক্রের বিরুদ্ধে কক্সবাজারের টেকনাফ থানায় ৫টি, উখিয়া থানায় ১টি এবং ঈদগাঁও থানায় ১টি মোট ৭টি মামলা রয়েছে।


তিনি আরো জানান, উদ্ধারকৃত আলামতসহ গ্রেফতার অপহরণকারীদের বিরুদ্ধে পূর্বের মামলা মোতাবেক প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কক্সবাজার জেলার ঈদগাঁও থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।


বিবার্তা/ফরহাদ/লিমন

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com