অঅ-অ+
কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্প এখন ডেঙ্গু রোগের হটস্পট হয়ে উঠেছে। শুধু মাত্র ২৪ ঘণ্টা ব্যবধানে কক্সবাজারে নতুন করে ৬১৯ জন রোহিঙ্গা ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন।
কক্সবাজার সিভিল সার্জন কার্যালয়ের পরিসংখ্যাবিদ পংকজ পালের দেয়া এক তথ্য বিবরণীতে এমন বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।
প্রাপ্ত তথ্য বিবরণী মতে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সোমবার (১৭ জুলাই) পর্যন্ত কক্সবাজার জেলায় মোট ২ হাজার ৮৪১ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন। কিন্তু রবিবার (১৬ জুলাই) পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ২ হাজার ১৭৩ জন। ফলে ২৪ ঘণ্টায় জেলায় নতুন করে যে ৬৬৮ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে তার মধ্যে রোহিঙ্গা ৬১৯ জন এবং স্থানীয় বাংলাদেশি ৪৯ জন।
তথ্য বিবরণীতে দেখা যায়, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সোমবার (১৭ জুলাই) পর্যন্ত উখিয়া ও টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্প কেন্দ্রিক ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ২ হাজার ৬৭৬ জন। যেখানে রোহিঙ্গা ২ হাজার ৫২১ জন ও ১৫৫ জন স্থানীয় বাংলাদেশি। রবিবার (১৬ জুলাই) পর্যন্ত মোট আক্রান্ত ছিল ২ হাজার ২৩ জন। যেখানে রোহিঙ্গা ছিল ১ হাজার ৯০৫ জন এবং ১১৮ জন ছিল স্থানীয় বাংলাদেশি। এ পরিসংখ্যা মতে, গত ২৪ ঘণ্টায় রোহিঙ্গা ক্যাম্প কেন্দ্রিক নতুন করে ৬১৬ জন রোহিঙ্গা এবং ৩৭ জন স্থানীয় বাংলাদেশি আক্রান্ত হয়েছেন।
এর বাইরে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সোমবার (১৭ জুলাই) পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ১৬৫ জন। যেখানে ১০১ জন স্থানীয় বাংলাদেশি এবং ৬৪ জন রোহিঙ্গা। রবিবার (১৬ জুলাই) মোট আক্রান্ত ছিল ১৫০ জন। যেখানে ৮৯ জন স্থানীয় বাংলাদেশি এবং ৬১ জন রোহিঙ্গা। সদর হাসপাতালে ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ১২ জন স্থানীয় বাংলাদেশি ও ৩ জন রোহিঙ্গা ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন।
কক্সবাজার সিভিল সার্জন কার্যালয়ের পরিসংখ্যাবিদ পংকজ পাল জানিয়েছেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ৫টি এলাকা ডেঙ্গুর জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এর মধ্যে এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ ৩ নম্বর ক্যাম্পে ৬২০ জন, ১৭ নম্বর ক্যাম্পে ১৭১ জন, ৪ নম্বর ক্যাম্পে ১৬৭ জন, ১ নম্বর ডাব্লিউ ক্যাম্পে ১১৫ জন এবং ২৪ নম্বর ক্যাম্পে ২৪ জন ডেঙ্গু রোগী পাওয়া গেছে। এছাড়া ঝুঁকি বিবেচনায় কক্সবাজার পৌরসভায় ৩২ জন, চকরিয়ায় ২৭ জন, উখিয়ায় ২৬ জন, টেকনাফে ২৩ জন, কক্সবাজার সদরে ২০ জন এবং মহেশখালীতে ১৩ জন রোগী পাওয়া গেছে।
তিনি জানিয়েছেন, গত ২৪ ঘণ্টায় ১৫ জনকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। যেখানে সোমবার পর্যন্ত ভর্তি আছে ২৫ জন। এর বাইরে উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ৫ জন ভর্তি রয়েছে। সর্বশেষ গত ২৩ জুন একজনের মৃত্যু সহ ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে এই ৬ মাসে। এরা সকলেই রোহিঙ্গা। আক্রান্ত বিবেচনায় ৬৫ শতাংশ পুরুষ ও ৩৫ শতাংশ নারী। এতে ০-৫ বছরের মধ্যে ৭ শতাংশ, ৬-১৮ বছরের মধ্যে ১৭ শতাংশ, ১৯-৪০ বছরের মধ্যে ৬৩ শতাংশ, ৪১-৬০ বছরের মধ্যে ১২ শতাংশ ও ৬০ বছরের ঊর্ধ্বে ১ শতাংশ মানুষ পাওয়া গেছে।
কক্সবাজারস্থ শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসনের কমিশনারের কার্যালয়ের স্বাস্থ্য কোঅর্ডিনেটর ডা. আবু তোহা জানান, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অধিক সংখ্যা ডেঙ্গু আক্রান্ত শনাক্ত হলেও এটা উদ্বেগজনক বলা যাবে না। সচেতনতার কারণে আক্রান্তদের দ্রæত শনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছে। এখানে চিকিৎসা নিয়ে ঘরে ফিরছেন ৯৯ শতাংশ। মাত্র ৪ জন রোগী নানা কারণে মারা গেছেন।
তিনি জানান, ক্যাম্পে এখন অধিক সচেতন কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। ক্যাম্পে অবস্থিত বিভিন্ন ড্রেনেজ সিস্টেমে ব্লিচিং পাউডার নিয়মিত ছিটানো এবং এ বিষয়ে তদারকি জন্য ওয়াস সেক্টরের সাথে সমন্বয় সাধন করা হয়েছে। ক্যাম্পে হেলথ সেক্টরের সাথে নিয়মিত সভা হচ্ছে। প্রতিটি ক্যাম্পের ব্লকের নেতা (মাঝি) এবং উপ-নেতা (সাব মাঝি) দের সাথে সভা করে জমানো পানি যাতে অপসারণ করা হচ্ছে। ডেঙ্গু নির্ণয়ের জন্য পর্যাপ্ত কীট সরবরাহ সহ নানা উদ্যোগ বাস্তবায়ন হচ্ছে। ফলে ডেঙ্গু কমানো সম্ভব বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজারের সিভিল সার্জন ডা. বিপাশ খীসা জানান, সম্ভাব্য ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবেলায় কক্সবাজারের সকল প্রকার প্রস্তুতি রয়েছে। ইতিমধ্যে চিকিৎসার জন্য ১০ জন চিকিৎসকের নিয়ে টেলিমেডিসিন সেবা চালু হয়েছে। প্রস্তুত রয়েছে সদর হাসপাতাল সহ স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলো।
উল্লেখ্য, ২০২২ সালে কক্সবাজারে মোট ১৯ হাজার ২৩১ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছিল। যার মধ্যে ১৫ হাজার ৬৩৬ জন রোহিঙ্গা ও ৩ হাজার ৫৮৫ জন স্থানীয়। এই এক বছরে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে ৩৯ জনের মৃত্যু হয়েছিল। যার মধ্যে রোহিঙ্গা ২৬ জন ও স্থানীয় ১৩ জন।
বিবার্তা/ফরহাদ/সউদ
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]
