ঢাবি ভর্তি পরীক্ষায় জিপিএ ৫ ধারীদের ভরাডুবি কেন?
প্রকাশ : ২৪ জুন ২০২৩, ১৮:৩৮
ঢাবি ভর্তি পরীক্ষায় জিপিএ ৫ ধারীদের ভরাডুবি কেন?
মো. ছাব্বিরুল ইসলাম
প্রিন্ট অ-অ+

এইচএসসি পরীক্ষার পর দেশের বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর স্বপ্ন থাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া। এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীরাই চান্স পাওয়ার ক্ষেত্রে অধিক যোগ্য বলে ধারণা করা হয়। কিন্তু জিপিএ-৫ প্রাপ্তদের বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হতে পারেননি না ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায়।


সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার বিভিন্ন ইউনিটের ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। উদ্বিগ্ন হওয়ার বিষয় হচ্ছে ২০২২ সালে অনুষ্ঠিত এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশ এই প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় কৃতকার্যই হননি। ফলে জিপিএ-৫ প্রাপ্ত এসব শিক্ষার্থীদের অকৃতকার্যের ঘটনায় উঠেছে নানা প্রশ্ন। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, পাঠ্যবই ভালো করে না পড়ে অতিমাত্রায় কোচিং নির্ভরতা এর জন্য দায়ী।


বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্য বলছে, ২০২৩ সালে অনুষ্ঠিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার ক ইউনিটে পাসের হার ছিল ৯.৪৩%। এই ইউনিটে ১ হাজার ৮৫১টি আসনের বিপরীতে ভর্তি পরীক্ষায় পাস করেছেন ১১ হাজার ১০৯ জন। তাদের মধ্যে ১০ হাজার ৫৫৭ জন বিজ্ঞান বিভাগের, ৫৪২ জন মানবিক ও ১০ জন ব্যবসায় শিক্ষার। ক ইউনিটে মোট পরীক্ষার্থী ছিল এক লাখ ১৭ হাজার ৭৬৩ জন। তাদের মধ্যে এক লাখ ১৪ হাজার ৫০ জন বিজ্ঞান বিভাগের, ৩ হাজার ৩৮০ জন মানবিক ও ৩৩৩ জন ব্যবসায় শিক্ষার।


এবার চারুকলা ইউনিটে পাসের হার ছিল ৪.৪৯%। এই ইউনিটের ১৩০টি আসনের বিপরীতে পরীক্ষার্থী ছিল চার হাজার ৭২৬ জন। কিন্তু তাদের মধ্যে থেকে পরীক্ষায় কৃতকার্য হয়ে ভর্তির যোগ্যতা অর্জনকারী শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২১২ জন!


ব্যবসায় শিক্ষা ইউনিটে পাসের হার ১১.৮৪% এবং এই ইউনিটে মোট পাস করেছে ৪৫২৬ জন। পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন ৪১ হাজার ৩৬৮ জন শিক্ষার্থী।



কলা ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত খ-ইউনিটে উত্তীর্ণ হয়েছেন ১১ হাজার ১৬৯ জন। পাসের হার ৯.৬৯%। এই ইউনিটে মোট ২ হাজার ৯৩৪টি আসন রয়েছে। এখানে ভর্তিচ্ছু আবেদনকারীর সংখ্যা ছিল ১ লাখ ২২ হাজার ৮৮২ জন।


তথ্য পর্যালোচনা করে জানা যায়, ২০২২ সালে অনুষ্ঠিত এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় বিপুল সংখ্যক জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের পক্ষে সম্ভব হয়নি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ইউনিটগুলোয় পাস করা। এবার ঢাবিতে ৪ ইউনিটে মোট পাস করেছে ২৭ হাজার ১৬ জন। অথচ ২০২২ সালে অনুষ্ঠিত এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় জিপিএ ৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীর ছিল ১ লাখ ৭৬ হাজার ২৮২।


এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় সর্বোচ্চ ভালো রেজাল্ট করেও কেন শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় এতো বেশি পরিমাণে অনুত্তীর্ণ হচ্ছে, সেই প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আব্দুস সামাদ বিবার্তাকে জানান, আমার মতে এর জন্য দায়ী না বুঝে পড়াশোনা করা, শিট নির্ভর পড়াশোনা এবং কোচিং নির্ভরতা। আরেকটি বিষয় হচ্ছে পরীক্ষার জন্য সময় কম থাকা। এইচএসসিতে তো মোটামুটি সবার কথা ভেবে প্রশ্ন করা হয় এবং সময় দেওয়া হয়, যার উদ্দেশ্য সবাইকে পাস করান। আর আমাদের কাজ হচ্ছে যোগ্যদের বাছাই করা, যার কারণে দেখা যায় যে, অনেকেই টেকে না। তবে এক্ষেত্রে বিষয়টা পাস কিংবা ফেলের নয়, আসল ব্যাপারটা হলো যোগ্যদের বাছাই করা। আর এতে অনেকে সুযোগ পায়, অনেকে পায় না। যারা বুঝে পড়াশোনা করে তারাই মূলত ভালো করে।


কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আব্দুল বাছির বিবার্তাকে জানান, শিক্ষার্থীরা আসলে বইমুখী না। কোচিং বাণিজ্যের কারণে তাদের অনেক বেশি ক্ষতি হচ্ছে। আমরা সবসময় চেষ্টা করি একটা প্রতিযোগিতামূলক প্রশ্ন করার- যেহেতু আমাদের আসন কম। যারা বুঝে পড়ে এবং বইমুখী পড়াশোনা করে তারাই মূলত পাস করেছে। শিক্ষার্থীরা বইমুখী হলে আমার বিশ্বাস আরো বেশি সংখ্যক শিক্ষার্থী পাস করত।


বিবার্তা/ছাব্বির/রোমেল/জবা

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com