সাম্প্রদায়িকতার বিষদাঁত না উপড়ে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে কাটছাঁট!
প্রকাশ : ০৪ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০০
সাম্প্রদায়িকতার বিষদাঁত না উপড়ে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে কাটছাঁট!
সামিনা বিপাশা
প্রিন্ট অ-অ+

এসো, এসো, এসো হে বৈশাখ।
তাপসনিশ্বাসবায়ে মুমূর্ষুরে দাও উড়ায়ে,
বৎসরের আবর্জনা দূর হয়ে যাক॥


চলছে বাংলা নববর্ষ-১৪৩১ সালকে বরণের প্রস্তুতি। কদিন বাদেই পহেলা বৈশাখ। বঙ্গাব্দের প্রথম দিন, তথা বাংলা নববর্ষ। রবিঠাকুরের উল্লিখিত পঙক্তিকে সামনে রেখে বৈশাখের ১ তারিখ সূর্যোদয়ের সাথে সাথে শুরু হয় নতুন বছরকে বরণ করে নেওয়ার উৎসবমুখর বর্ণিল সব আয়োজন, সেই সাথে নতুন প্রত্যয়ে সামনের পথযাত্রা।



কিন্তু বিগত কয়েক বছর ধরেই বর্ষবরণের উৎসবের ঘাড়ে চেপে বসছে নির্দেশনার নানান পাহাড়, নিষেধাজ্ঞার বাহানা। বিষয়টি এমন দাঁড়িয়েছে- অপ্রীতিকর ঘটনার ভয়ে প্রীতিকেই নষ্ট করার অপচেষ্টা। আবহমানকালের বাঙালি নারীরা জুজুর ভয় দেখিয়ে সন্তানকে খাবার গলাধঃকরণ করিয়ে দৈহিক বৃদ্ধি নিশ্চিত করেন, তাতে আত্মিক বৃদ্ধি পড়ে থাকে তলানিতেই। ঠিক সেইরকম দিন দিন জুজুর ভয়ে বাংলা নববর্ষ বরণকে উদযাপন করা হচ্ছে শৃঙ্খলের শেকল পরিয়ে। অথচ পহেলা বৈশাখ সত্যিকারার্থে আপামর বাঙালির একটিমাত্র মহোৎসব।



পহেলা বৈশাখে নিরাপত্তার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়েই বিশিষ্টজনেরা বলছেন, আয়োজনকে যদি সংক্ষিপ্ত করাই প্রয়োজন হয়, নানা বিধি-নিষেধ ও নির্দেশনার বেড়াজালে বেধে দেওয়াই হয়- তাহলে কেন রাষ্ট্রীয়ভাবে এই আয়োজন? প্রশ্ন উঠছে, কেন সকল জাতীয় দিবস এবং ধর্মীয় অনুষ্ঠান আয়োজনে সময়ের বাধ্যবাধকতা না থাকলেও শুধুমাত্র বাঙালির প্রাণের উৎসব বাংলা নববর্ষ আয়োজনকে সীমিত করে দেওয়া হচ্ছে প্রতি বছর? কেন স্বাধীন বাংলাদেশে বাঙালি সংস্কৃতি-বিরোধী শক্তিকে সমূলে উৎপাটিত না করে, জাতিকেই সংকীর্ণমনা করে গড়ে তোলা হচ্ছে?


গত ২৭ মার্চ বাংলা নববর্ষ-১৪৩১ উদযাপন উপলক্ষে ১৩ দফা নির্দেশনা দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। দেশব্যাপী বর্ষবরণ অনুষ্ঠান, বৈশাখী মেলা, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানসমূহে জেলা প্রশাসন, জেলা পুলিশ ও আয়োজকবৃন্দ সমন্বয় করে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে সেখানে। এছাড়াও, বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে আতশবাজি ও ভুভুজেলা নিষিদ্ধসহ রমনা পার্ক, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, হাতিরঝিল ও রবীন্দ্র সরোবরসহ দেশে যে সকল অনুষ্ঠান হবে তা সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে শেষ করারসহ ১৩টি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় উৎসবমুখর পরিবেশে ও যথাযথ আড়ম্বরের সাথে বাংলা নববর্ষ উদযাপন করার নির্দেশনা দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)। অর্থাৎ, সারা দেশব্যাপী পহেলা বৈশাখ উদযাপনের জন্য চলছে তোড়জোড় প্রস্তুতি।


কবি জীবনানন্দ দাশের 'তিমির হননের গান' কবিতার পঙক্তি থেকে নির্ধারণ করা হয়েছে নববর্ষে মঙ্গল শোভাযাত্রার এবারের প্রতিপাদ্য ‘আমরা তো তিমির বিনাশী’। এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে প্রতিবারের মতো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ আয়োজন করছে মঙ্গল শোভাযাত্রার। যেটিকে ঘিরে ক্যাম্পাসে শুরু হবে পহেলা বৈশাখ ও বর্ষবরণ অনুষ্ঠান। এছাড়াও সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে রাজধানীর রমনার বটমূলে গান, কবিতা ও নানা আয়োজনে নববর্ষকে বরণ করে নেয় ছায়ানট, গান-কবিতায় মুখর হয়ে ওঠে পুরো প্রাঙ্গণ। সেই সাথে, সুদীর্ঘকালের ঐতিহ্যমণ্ডিত এই উৎসব ঘিরে থাকে বৈশাখী মেলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, গ্রামীণ খেলাধুলাসহ আরো সব লোকশিল্পের আয়োজন।


এদিকে, নববর্ষ উদযাপন নিয়ে বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও। সকাল ৯টায় চারুকলা অনুষদের মঙ্গল শোভাযাত্রা দিয়ে শুরু হবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্ষবরণের অনুষ্ঠান। গত বছরের মতো এবারও বর্ষবরণের আয়োজন বিকেল ৫টার মধ্যে শেষ করতে হবে। এছাড়াও, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রবেশ ও বের হওয়া, মুখোশ পরা, ব্যাগ বহনসহ বিভিন্ন বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।


বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, বাংলাদেশের সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট এর সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ বিবার্তাকে বলেন, পহেলা বৈশাখ বাঙালির সার্বজনীন উৎসব, বাংলাদেশের গ্রামেগঞ্জে শহরে বন্দরে জাতি ধর্ম বর্ণ নারী পুরুষ নির্বিশেষে সকলে এই উৎসবে অংশগ্রহণ করেন এবং শত শত বছর ধরে গ্রামবাংলার প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে শুরু করে সর্বত্র এই উৎসব আয়োজিত হয়ে আসছে। আজকে স্বাধীন বাংলাদেশে বাঙালির এই প্রাণের উৎসবটি ব্যাপকভাবে যাতে সর্বত্র পালিত হতে পারে, সেটাই হওয়া উচিত সরকারের লক্ষ্য।


তিনি আরো বলেন, এই যে সূর্যোদয়ের সাথে সাথে এই উৎসবের সূচনা হয়, এটি গভীর রাত পর্যন্ত বাংলাদেশের গ্রামেগঞ্জে সর্বত্র চলে। আমরা দেখতে পাই দুপুরবেলা বা বিকেলবেলা গ্রামের নারীরা খাওয়াদাওয়ার পর বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে বৈশাখী মেলায় যায়, সেখানে গ্রামীণ মেলা, গ্রামীণ সাংস্কৃতিক উৎসবে অংশগ্রহণ করে। বৈশাখী মেলাকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের কুটির শিল্প এবং লোকশিল্পীরা বাঙালি সংস্কৃতির আয়োজনের সাথে যুক্ত হয়ে যায়। সেখানে যদি সময় নির্ধারণ করে দেওয়া হয়, তাহলে প্রকৃত অর্থে এই আয়োজন, উৎসব, বৈশাখী মেলা আর হবে না। আস্তে আস্তে এসব আয়োজন বাংলার মাটি থেকে মুছে যাবে। এখন বলা হচ্ছে ৬টার পর অনুষ্ঠান বন্ধ করে দিতে হবে, এরপর বলা হবে ৪টার পর বন্ধ করে দিতে হবে, এরপর হয়তো বলা হবে দুপুরের পর অনুষ্ঠান বন্ধ। একসময় বলা হবে বৈশাখী মেলারই আর দরকার নাই। এভাবে আমরা কোন পথে এগুচ্ছি? কীসের ভয়ে কাদের ভয়ে এগুচ্ছি?


গোলাম কুদ্দুছ বলেন, যদি কারো ভয়ে এগুতে থাকি, তাহলে সেই শক্তিকে চ্যালেঞ্জ করে এই উৎসবটি যাতে ব্যাপকভাবে আয়োজিত হতে পারে সেই নিরাপত্তা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। কারো হুমকিতে অনুষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া রাষ্ট্রের দায়িত্ব নয়, এর মধ্য দিয়ে হুমকিদাতারই জয় হয়।
সরকার একদিকে এই উৎসব আয়োজনের জন্য প্রত্যেক উপজেলায় অর্থ বরাদ্দ করছে আরেকদিকে সন্ধ্যার আগে উৎসব শেষ করার কথা বলছে, এটা সাংঘর্ষিক সিদ্ধান্ত। আমাদের জাতীয় অনুষ্ঠান এবং ধর্মীয় সকল অনুষ্ঠানে কোন বাধ আছে? নেই তো। তাহলে যেটি আমাদের সবচাইতে বড় উৎসব, অসাম্প্রদায়িক উৎসব, সকলের উৎসব সেটিকে কেন সীমিত করা? যার কারণে আমরা সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছি- এই সিদ্ধান্ত অবিলম্বে প্রত্যাহার করা হোক। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট বিকাল ৪টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত অনুষ্ঠান করার প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। আশা করি, সরকার আমাদের এই অনুষ্ঠান আয়োজনে সহায়তা করবে।


গত শতকের আশির দশকে সামরিক শাসনের অর্গল ভাঙার আহ্বানে পহেলা বৈশাখে চারুকলা থেকে শোভাযাত্রা বের হয়েছিল; সেটিই পরে মঙ্গল শোভাযাত্রায় রূপ নেয়। ২০১৬ সালে ইউনেস্কোর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের স্বীকৃতিও পায় এ আয়োজন। এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রা সজ্জিত থাকছে— টেপা পুতুল, হাতি, গন্ধগোকুল, চাকার একটি ডেকোরেটিভ ডিজাইন—এই চার স্ট্রাকচার এবারের শোভাযাত্রায় মোটিফ। অধ্যাপক নিসার হোসেন বলেন, ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা থেকে বরাবরই তরুণরা একটি বার্তা দেয়। সেই বার্তাটি হলো আমরা তিমির বিনাশী, আমরা অন্ধকারের বিপক্ষে, আলোর পক্ষে। এছাড়া কুসংস্কার, পশ্চাৎপদটা, উগ্রতা থেকে মুক্তির আহ্বান থাকে।


তিমিরবিনাশী এই আয়োজন কেন নির্দেশনা ও বিধিনিষেধের ঘেরাটোপে আটকে পড়ছে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেন বিবার্তাকে বলেন, সোশ্যাল মিডিয়াতে যে কথাগুলো বলা হয়, মসজিদ মাদ্রাসায় যেভাবে পহেলা বৈশাখের বিপক্ষে কথা বলা হয়, যেভাবে হুমকি দেওয়া হয়, তাতে এরকম নির্দেশনা বা নিরাপত্তা ছাড়া আমরা কি এটা করতে পারবো? এখানে কিছু করার নেই, পরিস্থিতিতে পড়ে... তাও তো বর্তমান সরকার আছে বলে আমরা করতে পারছি। এই সরকার না থাকলে সেটাও করতে পারতাম না। মূল অনুষ্ঠানটা সকালে হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল অনুষ্ঠান সকালের দিকে হয়ে যায়।


তিনি আরও বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে না, বাইরে একটা ঘটনা ঘটেছিল। কতগুলো মৌলবাদী ধরনের ছেলে তারা একটা মেয়েকে আক্রমণ করে, বাংলা একাডেমির উল্টোদিকে। সেখানে একটা ছেলে প্রটেস্ট করে এবং মার খায়। ওখানে অনেক লোক ছিল, তারা দাঁড়িয়ে দেখেছে, কেউ এগিয়ে যায়নি। এই যে দুটা-তিনটা মাদ্রাসার ছেলে মিলে পিটিয়ে চলে গেল, কেউ কিছু বলল না- সেখানে কোন ভরসায় আমরা বলবো যে বাংলাদেশের মানুষ সাবলম্বী? ওই অর্থে তাদের কোনো সাপোর্ট লাগবে না- সেটা কি আমরা বলতে পারবো? সুতরাং, পুলিশের উপরই ভরসা করে থাকতে হবে, আর তো কোনো উপায় নেই।



বর্ষবরণের মূল উৎসবটি হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও রমনা বটমূলের অনুষ্ঠান ঘিরেই। ২২ বছর আগে ২০০১ সালের ১৪ এপ্রিল রমনায় ছায়ানটের অনুষ্ঠানে বোমা হামলায় প্রাণ হারান নয়জন। আহত হন অনেকে। এ ঘটনায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা হয়। ওই দুই মামলার মধ্যে হত্যা মামলার বিচার শেষ হয়েছে। ঝুলে রয়েছে বিস্ফোরক মামলার বিচারকাজ। এছাড়াও, আট বছর আগে পহেলা বৈশাখে রাজধানীতে নারী লাঞ্ছনার ঘটনা ঘটে।



অধ্যাপক নিসার হোসেন বিবার্তাকে আরো বলেন, পঞ্চাশটা মাদ্রাসার ছেলে লাঠি নিয়ে এসে দাঁড়ালে একজনও উঠে দাঁড়াবে না, সব মিলিয়ে মানুষের মধ্যে পরিস্থিতি ভালো না। অসাম্প্রদায়িক কথাটা মুখে বলতে যত সহজ বাস্তব পরিস্থিতি তো সেরকম না! আমরা পুলিশের পাহারার মধ্যে থেকে বলছি অসাম্প্রদায়িক, মৌলবাদীদের বিরুদ্ধে স্লোগান দিচ্ছি- কিন্তু বাইরে গিয়ে দেখেন না কী অবস্থা হয়? মানুষ নিজে থেকে যতদিন পর্যন্ত এই দায়িত্ব না নিবে ততদিন পর্যন্ত কিছু হবে না, এটা গোটা জাতির একটা ক্রাইসিস টাইম। মৌলবাদীরা যেভাবে সংগঠিত, প্রগতিশীলরা সেভাবে সংগঠিত না। মৌলবাদের বিরুদ্ধে প্রগতিশীলরা সেভাবে সোচ্চার না, কেমন গা ছাড়া ভাব। এখন আমরা যেটাতে জোর দিয়েছি মানুষ যেন কাছাকাছি আসতে পারে, বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে উপভোগ করতে পারে, সেজন্য পুলিশের সহযোগিতা চেয়েছি এবং পুলিশ রাজি হয়েছে। কিন্তু সন্ধ্যার পর কী হবে সে দায়িত্ব কে নিবে, সেরকম দু'একটা ঘটনা ঘটত, মানুষ এক্সাম্পল দেখাত, তাহলে আমরা জোর দিয়ে বলতে পারতাম, এবং আমরা জানি আমরা জোর দিয়ে বললে পুলিশ রাজি হবে, কিন্তু আমরা সে সাহসটা পাই না।


তবে ভিন্নমত পোষণ করে গ্লোবাল টেলিভিশনের প্রধান সম্পাদক সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা বিবার্তাকে বলেন, এগুলো বর্তমান সরকারের রাজনৈতিক পরাজয় এবং রাজনৈতিক আপস। মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর সাথে আপস করতে গিয়ে আজকে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দানকারী একটি সরকার ক্ষমতায় অথচ তারা অসাম্প্রদায়িক অনুষ্ঠানগুলোকে ক্রমেই কাঁটছাঁট করছে মৌলবাদীদের তোষণ করার জন্য। এটা আর কিছু নয়। আওয়ামী লীগ যে তার লক্ষ্য ও আদর্শ থেকে সরে এসেছে এবং প্রতিষ্ঠানগুলোকে ক্রমেই মৌলবাদীদের আখড়ায় পরিণত করেছে তার প্রমাণ হলো এটা। দিন যত যাবে অনুষ্ঠানগুলো আরও ছোট হবে এবং একসময় বিনাশ করে ফেলা হবে। 'আমরা তো তিমিরবিনাশী' প্রতিপাদ্য প্রসঙ্গে সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা বলেন, আমরা নিজেরাই বিনাশী হয়ে যাচ্ছি।


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ছাত্রলীগের সভাপতি সৈকত বিবার্তাকে বলেন, পহেলা বৈশাখ বাংলার উৎসব, বাঙালির উৎসব। ষোলো কোটি বাঙালির উৎসব। এই উৎসব ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সবার। আমাদের এই বাঙালিয়ানা উৎসবকে পায়ে শেকল পরানো প্রচেষ্টা নিয়ে আমরা এগোতে চাই না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমরা এটাই চাই, সংস্কৃতির ক্ষেত্রে আমাদের উপর কোনো বেড়ি বা শেকল যেন না আসে। তবে বাংলা নববর্ষের এই অনুষ্ঠানটার বিরুদ্ধে আসলে মৌলবাদীরা, জঙ্গিরা কেমন সোচ্চার হয়ে উঠেছে। ওরা এই উৎসবকে ভালো ভাবে নিতে পারে না। নিরাপত্তার বিষয়ে তিনি বলেন, একদিক থেকে নিরাপত্তার বিষয়ে সাধুবাদ জানাই। আরেকদিক থেকে খারাপ লাগে আমি কেন আমার বাঙালিয়ানার উৎসবে স্বাধীনভাবে চলতে পারবো না?


জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ)- এর সভাপতি হাসানুল হক ইনু বিবার্তাকে বলেন, অনুষ্ঠান নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করা সমাজের রাষ্ট্রের দায়িত্ব, পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর সাম্প্রদায়িক শক্তি মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে, তার ফলে বহু জায়গায় বহু সংঘাতপূর্ণ ঘটনা ঘটেছে। রাষ্ট্রের দায়িত্ব সবার নিরাপত্তা বিধান করা- সেদিক থেকে সন্ধ্যার পর বাইরের অনুষ্ঠান না হোক, ভেতরের অনুষ্ঠান তো চলতেই পারে। তবে বাংলাদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির বিরুদ্ধে ধর্মকে দাঁড় করানোর যে অপচেষ্টা চলছে তার ফলে সংঘাতের পরিবেশ হচ্ছে মাঝে মাঝে, সেই সংঘাতের পরিবেশটা দুঃখজনক। রাষ্ট্র বরং যারা ধর্মকে সংস্কৃতির বিরুদ্ধে দাঁড় করায় তাদের উপর কঠোর হলে এইরকম বিধি নিষেধের বেড়াজাল থেকে পহেলা বৈশাখ বেরিয়ে আসতে সক্ষম হবে।


বাঙালির একমাত্র ও সার্বজনীন অসাম্প্রদায়িক উৎসবটি এখন সাম্প্রদায়িকতার বিষাক্ত ফণায় নুয়ে পড়ে মুমূর্ষু জরা আর গ্লানি নিয়ে শুরু করছে নতুন বছর, ম্লান হচ্ছে, রবিঠাকুরের সেই পঙক্তি,


মুছে যাক গ্লানি, ঘুচে যাক জরা,
অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা,
এসো হে বৈশাখ।


তবে কি গত বছরের অমঙ্গল দূর করে শুভ চিন্তার প্রত্যাশা নিয়ে নতুন আনন্দের আহ্বানে শুরু হবে বাংলা নববর্ষ-১৪৩১?


বিবার্তা/এসবি/রোমেল/মাসুম

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com