কবি বলেছিলেন, ‘মুখ ঢেকে যায় বিজ্ঞাপনে’। সত্যিই তাই। চট্টগ্রাম কর্ণফুলী উপজেলা বিজ্ঞাপনের ব্যানার ও বিলবোর্ডে পুরো মুখ ঢেকে গেছে। কর্ণফুলীর আরাকান মহাসড়ক জুড়ে শোভা পাচ্ছে অবৈধ বিলবোর্ডে বাহারি বিজ্ঞাপন।
এতে একদিকে কর্ণফুলী উপজেলা যেমন রাজস্ব হারাচ্ছে, তেমনি সৌন্দর্য হারাচ্ছে শহর। অন্যদিকে স্ব স্ব ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানগণ উদ্যোগ গ্রহণ করে রাজস্ব আদায় করতে পারতেন। কিন্তু উপজেলা প্রশাসন কিংবা উপজেলার চেয়ারম্যানদের এ বিষয়ে কার্যকর কোন পদক্ষেপ নেই।
স্থানীয়দের অভিযোগ, বিজ্ঞাপন এজেন্সিগুলো কোন অনুমতি ছাড়াই উপজেলার মহাসড়ক জুড়ে এসব বিলবোর্ডে বিজ্ঞাপন প্রচার করছে। এর মধ্যে বৈধ বিলবোর্ডের সংখ্যা কয়টি তা জানা না গেলেও অবৈধ বিলবোর্ডের সংখ্যা রয়েছে অর্ধশতকের উপরে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, কিছু রাজনৈতিক বিলবোর্ড, সুজুকি, বিএসআরএম, প্রিমিয়ার সিমেন্ট, কেওয়াই স্টিল, সজিব কর্পোরেশন এর মেক্স স্টপ ফায়ার, এস আলম সিমেন্ট, ডায়মন্ট সিমেন্ট, ইএসআরএম, কেএসআরএম এর সৌজন্যে কিছু ট্রাফিক পুলিশের ব্যানার ও বিলবোর্ড রয়েছে শহরময়।
সওজ এর জায়গায় এসব বিলবোর্ড বসানো হলেও এর নিয়ন্ত্রক অসাধু কিছু কর্মকর্তা আর প্রভাবশালী কতিপয় নেতা। কেননা, বিলবোর্ডের ভাড়া হতে যে টাকা আসে, তার একটি অংশ ওইসব নেতা আর কর্মকর্তাদের পকেটে যায় বলে সবাই নীরব। এমন অভিযোগ তুলে স্থানীয়রা বলছেন, অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে এসব অবৈধ বিলবোর্ড ব্যবসা বৈধভাবে চলছে। না হয় বছরের পর বছর মাথার উপরে এসব বিলবোর্ড ঝুলে থাকত না। প্রশাসনের অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে যেন ‘দশ চক্রে ভগবান ভূত’।
সরেজমিনে আরও দেখা গেছে, প্রতিটি সড়কের ডিভাইডার, মোড়, বাসার ছাদ, দেয়াল ও গাছসহ বিভিন্ন স্থানে ছোটবড় বিলবোর্ড বসানো হয়েছে। এর কোনটি স্টিলের ঝালাই করা বড় বোর্ড আবার কোনোটি কাঠ দিয়ে তৈরি। এসবের বেশির ভাগই অনুমতি ছাড়াই স্থাপন করা হয়েছে বলে সওজ সূত্রে জানা যায়।
যদিও লাখ লাখ টাকার এসব অবৈধ বিলবোর্ড উচ্ছেদে কোন কার্যকর ব্যবস্থা নেই। কর্ণফুলীর স্থানীয় এক বাসিন্দারা বলেন, ‘এভাবে ফেস্টুন ও বিলবোর্ড লাগিয়ে উপজেলার সৌন্দর্য নষ্ট করা ঠিক নয়। অনেক বিলবোর্ড বিদ্যুতের খুঁটির উপর ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।’
নির্ভরযোগ্য একটি সূত্রে জানা গেছে, প্রতিটি বিলবোর্ডে বিজ্ঞাপণের ভাড়া বাবদ বছরে ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা গুণতে হয়। সে হিসেবে শাহ আমানত তৃতীয় সেতুর দক্ষিণ পাড় হতে শিকলবাহা ক্রসিং হয়ে ফকিরনিরহাট রাস্তার মাথা পর্যন্ত বিলবোর্ডের বিজ্ঞাপণের ভাড়া বাবদ বছরে প্রায় ২ কোটি টাকার কাছাকাছি দাঁড়ায়।
এক্ষেত্রে প্রচলিত আইন হলো, যেকোনো ধরনের সরকারি-বেসরকারি জায়গায় বিলবোর্ড বা বিজ্ঞাপন বোর্ড অথবা সাইনবোর্ড স্থাপন করতে হলে নির্ধারিত ফি দিয়ে কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিতে হয়।
এরপর স্থাপিত বিলবোর্ড বা বিজ্ঞাপন বোর্ডের বিপরীতে প্রতি বছর সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে নির্ধারিত হারে ভাড়া-ভ্যাট-ট্যাক্স দিতে হয়। কিন্তু বাস্তবে এ আইন মানছে না তারা। মানলে প্রতি বর্গফুট বিলবোর্ডে ৬০ টাকা করে ও ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর আদায় করলে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন ও উপজেলা পরিষদ বিপুল পরিমাণ রাজস্ব পেতে পারে। কিন্তু কর্ণফুলী উপজেলা প্রশাসন ও ইউনিয়ন চেয়ারম্যানদের কাউকে এ বিষয়ে উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি।
শিকলবাহার ইউপি চেয়ারম্যান মো. জাহাঙ্গীর আলম বিবার্তাকে বলেন, ‘বিলবোর্ডের বিষয়ে উপজেলার আইন শৃঙ্খলা মিটিংয়ে একাধিকবার আলোচনা করেছি। বর্তমান ইউএনও ছাড়া পূর্বে সব ইউএনও মহোদয়কে জানানো হয়েছে। কিন্তু গত ৭ বছরেও কোন কার্যকর পদক্ষেপ নিতে দেখিনি। এবার সামনের আইন শৃঙ্খলা মিটিংয়ে আবারো বিষয়টি তুলবো।’
কর্ণফুলী উপজেলার এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট পিযুষ কুমার চৌধুরী বিবার্তাকে বলেন, ‘বিলবোর্ড সংশ্লিষ্ট আইন কানুন নীতিমালা দেখতে হবে। পাশাপাশি মাসিক আইনশৃঙ্খলা সভায় বিষয়টি উপস্থাপন করে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এ প্রসঙ্গে কর্ণফুলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাসুমা জান্নাত বিবার্তাকে বলেন, ‘আমি যোগদান করেছি মাত্র কয়েকদিন। বিষয়টি যেহেতু এখন জানলাম খতিয়ে দেখা হবে।'
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ ফারুক চৌধুরী বিদেশে থাকায় তার মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
তবে দোহাজারী সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সুমন সিংহ বিবার্তাকে বলেন, ‘মহাসড়কে যে সব অবৈধ বিলবোর্ড সাঁটানো হয়েছে সেসব বিষয়ে সংশ্লিষ্ট এলাকার উপজেলা নির্বাহী অফিসার রাজস্ব আদায়ে ব্যবস্থা নিতে পারেন।’
বিবার্তা/রোমেল/সউদ
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]