ক্রেতা-বিক্রেতার হাঁক-ডাকে মুখর ৩শ’ বছরের পুরোনো গুড়ের হাট
প্রকাশ : ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:২৫
ক্রেতা-বিক্রেতার হাঁক-ডাকে মুখর ৩শ’ বছরের পুরোনো গুড়ের হাট
আসিম সাঈদ, চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

জমে উঠেছে চুয়াডাঙ্গা সরোজগঞ্জের খেজুর গুড়ের হাট। ৩শ বছরের পুরাতন ঐতিহ্যবাহী এই হাটটি দেশের সবচেয়ে বড় গুড়ের হাট। সপ্তাহের শুক্রবার ও সোমবার সকাল থেকেই ক্রেতা-বিক্রেতাদের হাঁক-ডাকে মুখর হয়ে ওঠে হাটটি।


খাটি, নির্ভেজাল ও গুণগত মান ভালো হওয়ায় শীত মৌসুমে প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে শত শত, আড়তদার ও ব্যাপারী গুড় কিনতে আসেন চুয়াডাঙ্গার ঐতিহ্যবাহী সরোজগঞ্জ হাটে। তবে গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার এই হাটে গুড়ের চাহিদা বেশি। কিন্তু পর্যাপ্ত সরবরাহ না থাকায় বাইরের জেলা থেকে ব্যাপারীরা এসে পর্যাপ্ত গুড় না পেয়ে হাট থেকে ফিরে যাচ্ছেন।


জেলা কৃষি বিভাগ বলছে, চুয়াডাঙ্গায় খেজুর গাছের সংখ্যা কম থাকায় গুড় উৎপাদন কমে গেছে। গুড়ের চাহিদা পূরণ করার জন্য খেজুর গাছের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।


গাছিরা বলছেন, খেজুর গাছের বয়স হয়ে যাওয়া তা থেকে রস পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে গাছে কেটে ফেলছেন তারা। তাই গাছের সংখ্যা যেমন কমে যাচ্ছে। ঠিক তেমনি উৎপাদনের সঙ্গে খেজুর গুড়ের সরবরাহ কমে যাচ্ছে।


এই হাটের গুড় রাজধানী ঢাকা, পার্শ্ববর্তী মেহেরপুর, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ এবং পাবনা, বরিশাল, ময়মনসিংহ, মাগুরা, রাজবাড়ি, পঞ্চগড়, সিলেট, খুলনা, রংপুর, রাজশাহীসহ বিভিন্ন জেলায় এই গুড় সরবরাহ করা হয়। একইসাথে আশপাশের কয়েকটি জেলার বিক্রেতারও এই হাটে গুড় বিক্রি করতে আসেন। এই হাটে গুড় বেচাকেনা করে কৃষক ও হাট মালিকরাও লাভবান হয়।


পাবনা জেলা থেকে হাটে আসা ক্রেতা রকিবুল ইসলাম বলেন, সরোজগঞ্জের এই হাটের গুড় মানসম্মত হওয়ায় চাহিদা বেশি। তাই এই গুড়ের হাটে এসে প্রতিবছর কয়েক ট্রাক গুড় কিনে নিয়ে যাই। রাজশাহী থেকে আসা রেজাউল করিম বলেন, এই হাটের গুড়ের চাহিদা ব্যাপক। কিন্তু তুলনামূলক সরবরাহ কম। তাই এবার পর্যাপ্ত গুড় পায়নি।


সিলেটে গুড় ব্যবসায়ী মিল্লাত হোসেন বলেন, এবার গুড়ের দাম বেশি কিন্তু সেই তুলনায় সরবরাহ কম। তবে গুড়ে ভেজাল নেই। কিন্তু এবার ইচ্ছেমতো গুড় কিনতে পারছি না। এছাড়া এ হাটে আমরা নিরাপত্তা পায়।


জিল্লু নামের এক ব্যবসায়ী বলেন, গুড়ের দাম বেড়েছে। এখন প্রতি ভাঁড় (গুড় রাখার পাত্র) গুড় ৯০০-২৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ হাটের ঝোলা গুড়-নলেন পাটালি সারা দেশে বিখ্যাত। চুয়াডাঙ্গার রবজেল জানান, গত বছর ২৫টি গাছ প্রস্তুত ছিল তার। এবার মাত্র ১২টি গাছ প্রস্তুত হয়েছে। এই গাছ থেকে যেটুকু রস পাওয়া যাচ্ছে তা দিয়েই গুড় তৈরি করা হচ্ছে। দামও এবার ভালো।


স্থানীয় গুড় ব্যবসায়ীরা বলেন, এই হাটের গুড় সিলেট, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, পাবনা ও ঢাকাসহ সারাদেশে যায়। বাপ-দাদার মুখে শুনে আসছি এটা ৩০০ বছরের পুরোনো দেশের সর্ব বৃহৎ হাট।


সরোজগঞ্জ গুড় হাট পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত নিলুয়ার রহমান বলেন, সপ্তাহে দু’দিন এ হাট বসে। বাইরে থেকে যে ব্যাপারীরা আসেন আমরা তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করি। এ হাটের সুনাম সারাদেশে। প্রতি হাটে এখানে এক থেকে দেড় কোটি টাকার গুড় কেনা-বেচা হয়।


হাট সূত্রে জানা গেছে, সরোজগঞ্জের গুড়ের হাটেমানভেদে গুড় বিক্রি হয় ২০০- ২৫০ টাকা কেজি দরে। প্রতি সপ্তাহের দুইটি হাটে অন্তত ২০ থেকে ৩০ লাখ টাকার গুড় বেচাকেনা হয়। প্রতিবছর এই হাট থেকে বেচাকেনার মোট পরিমাণ দাঁড়ায় ৫০ কোটি টাকা।


এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিভাস চন্দ্র সাহা বলেন, এ বছর জানা গেছে হাটে গুড়ের চাহিদা বেশি কিন্তু সরবরাহ কম। জেলার কৃষি বিভাগের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা গুড়ের চাহিদা পূরণে কৃষকদের নিয়মিত পরামর্শ দিচ্ছেন।


চুয়াডাঙ্গা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এবার চুয়াডাঙ্গা সদরে ৯৮ হাজার ৫০০টি গাছ। আলমডাঙ্গায় ৪৫ হাজার ৫১০টি গাছ, দামুড়হুদায় নয় হাজার ২০০টি গাছ, জীবননগরে ৩৭ হাজার ৪৫০টি গাছ। মোট এবার খেজুর গাছের সংখ্যা দুই লাখ ৭১ হাজার ৯৬০টি গাছ প্রস্তুত করা হচ্ছে।


এতে এবার গুড়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে দুই হাজার ৫০০ মেট্রিক টন। এই লক্ষ্যমাত্রা গুড়ের বিক্রির পরিমাণ ধরা হয়েছে ৩৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা। প্রতিবার এই গাছ প্রস্তুতে কর্মসংস্থান হয় প্রায় ৩০ হাজার কৃষকের।


বিবার্তা/আসিম/মাসুম

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com