নাগরিক সেবা বঞ্চিত দৌলতপুরের চরাঞ্চলের মানুষ
নেই শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও যোগাযোগ ব্যবস্থা
প্রকাশ : ১২ এপ্রিল ২০২৫, ১১:৩৬
নাগরিক সেবা বঞ্চিত দৌলতপুরের চরাঞ্চলের মানুষ
কুষ্টিয়া প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের চরাঞ্চলের সাধারণ মানুষ প্রায় সব ধরনের নাগরিক সেবা থেকে বঞ্চিত রয়েছে। শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবায় রয়েছে বেহাল দশা। মাথার ঘাম পায়ে ফেলে তাদের উৎপাদন করা কৃষিপণ্যের ন্যায্য দাম পান না সময়মতো। যোগাযোগ ব্যবস্থারও জীর্ণ দশা। সবমিলিয়ে একজন নাগরিক হিসেবে প্রাপ্ত মৌলিক সেবা তাদের জন্য মরীচিকা বললেই চলে। তারপরও চরাঞ্চলে বসবাসরত সাধারণ মানুষ যুগযুগ ধরে বসবাস করে আসছেন জীবন জীবিকার তাগিদে।


চরাঞ্চল ঘুরে দেখা গেছে, দৌলতপুর উপজেলা সদর থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন চিলমারী ও রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের পদ্মার ওপারের চরাঞ্চল। এখানকার জীর্ণ ও খানা খন্দকে ভরা নাজুক সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা চরবাসীর জন্য দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।


সংস্কারবিহীন এসব কাঁচা সড়কের পাশাপাশি কালভার্ট বা ব্রিজের অভাবে কৃষকরা তাদের উৎপাদিত কৃষিপণ্য ব্যবসায়ী বা আড়ৎদারদের কাছে সময়মতো সরবরাহ করতে না পারায় ন্যায্য দাম থেকে থাকেন বঞ্চিত ।


পদ্মা নদী বেষ্টিত চরাঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে রয়েছে ফসলি জমি। বর্ষ মৌসুমে বা বন্যার সময় এখানকার মানুষ থাকেন পানিবন্দি অবস্থায়। পানি নেমে গেলে জেগে ওঠা পদ্মার চরের উর্বর জমিতে ধান, পাট, শাক-সবজিসহ বিভিন্ন ধরনের ফসলের সমারোহ ঘটে। কৃষিনির্ভর এ অঞ্চল আর্থিক খাতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখলেও যোগাযোগ ব্যবস্থার অভাবে কৃষকরা তাদের উৎপাদিত কৃষি পণ্য বিপণন নিয়ে থাকেন বিপাকে। দুর্গম চিলমারীর চরের কৃষক আনোয়ার হোসেন জানান, আমাদের সবজি অনেক ভালো হয়, কিন্তু সময়মতো বাজারে নিতে পারি না। একটু বৃষ্টিতে রাস্তায় কাদা ও গর্তে পানি জমে থাকে। তাই ব্যাপারীরা কম দামে কিনে নিয়ে যায়, প্রয়োজনের তাগিদে তাদের কাছে কমদামেই বিক্রি করতে হয়, এতে আমাদের কিছু করার থাকে না।


শুধু কৃষিখাতই নয় অব্যবস্থাপনা রয়েছে এখানকার শিক্ষাখাতও। খানকার শত শত শিক্ষার্থী প্রতিদিন কাদামাটি ও ধুলোবালির রাস্তা পাড়ি দিয়ে যায় স্কুলে। কেউ কেউ মাঝপথে বৃষ্টিতে ভিজে বা কাদায় আটকিয়ে স্কুলে যেতে না পেরে বাড়ি ফিরে। প্রখর রোদ আবার বৃষ্টির পানিতে ভিজে অসুস্থ হয়ে পড়লেও মিলেনা সুচিকিৎসা।


চিলমারী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ইকবাল হোসেন জানান, বর্ষাকালে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি অর্ধেকে নেমে আসে। মেয়েদের ক্ষেত্রে পরিস্থিতি আরও নাজুক। পরিবার থেকে অনেকেই স্কুলে পাঠানো বন্ধ করে দেয়। আবার অসুস্থ রোগী নিয়ে হাসপাতালে যাওয়া হয়ে পড়ে দুষ্কর। চিলমারী বা রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের দুর্গম চরাঞ্চল থেকে দৌলতপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যেতে রীতিমতো যুদ্ধে অবতীর্ণ হতে হয়।


খানা-খন্দকে বা গর্তে ভরা রাস্তায় যেতে এখনও অনেকটা নির্ভর হতে গরু বা মহিষের গাড়িতে। সময় লেগে যায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা। গর্ভবতী বা আশংকাজনক রোগীকে চিকিৎসার অভাবে মাঝপথেই সন্তান প্রসব বা মৃত্যুর মুখোমুখি হতে হয়। জরুরি সেবায় অ্যাম্বুলেন্সতো কল্পনাতীত। এমন নাজুক অবস্থার পরিবর্তন হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন চরাঞ্চলের খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ।


তারা জানান, ভাগজোত ও সুকার ঘাট এলাকার রাস্তাগুলি পাকা ও ব্রিজ-কালভার্টগুলো দ্রুত সংস্কার করতে হবে, যাতে করে কৃষক, শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত সাধারণ মানুষ সময়মতো ও সঠিকভাবে তাদের প্রাপ্য মৌলিক সেবাগুলি পেতে পারে।


সব ধরনের মৌলিক সেবাবঞ্চিত অসহায় মানুষের বিষয়ে চিলমারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী আব্দু মান্নান জানান, আমরা একাধিকবার প্রকল্পের প্রস্তাব জমা দিয়েছি। কিছু কাজ শুরু হলেও বাজেট সংকটে বন্ধ হয়ে যায়। টেকসই পরিকল্পনা ছাড়া এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান সম্ভব নয়।


এ বিষয়ে দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আব্দুল হাই সিদ্দিকী জানান, ভাগজোত বাজার থেকে শুকার ঘাট পর্যন্ত পাকা রাস্তা সহ ভাগজোত মোড়ের নিচে পদ্মা নদীতে ব্রিজ নির্মাণের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। শুধু একনেকে পাস হলে রাস্তার কাজটি শুরু হবে এবং অচিরেই চিলমারী ইউনিয়নের মানুষ সুসংবাদ পাবেন।


তাছাড়া রামকৃষ্ণপুর ও চিলমারী ইউনিয়নবাসীর তাদের কষ্টে অর্জিত উর্বর মাটির ফলানো ফসলের ন্যায্য মূল্য থেকে শুরু করে দৌলতপুর সদরের সাথে যোগাযোগের স্বক্ষমতা অর্জন করবে এবং দুটি ইউনিয়ন মডেল ইউনিয়ন হিসেবে পরিচিত পাবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।


অবহেলিত চরবাসী মনে করেন, কথায় নয়, চাই কাজের বাস্তবায়ন। পাশাপাশি চরাঞ্চলকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করা, যাতে করে এসব প্রান্তিক জনগোষ্ঠী উন্নয়নের মূলধারায় যুক্ত হতে পারে, পেতে পারে তাদের প্রাপ্য মৌলিক সেবা।


বিবার্তা/শরীফুল/এমবি

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com