ইজারায় দুই কোটি টাকা, অথচ ঘাটে নেই টয়লেট-ছাউনি!
প্রকাশ : ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ২১:৪০
ইজারায় দুই কোটি টাকা, অথচ ঘাটে নেই টয়লেট-ছাউনি!
চট্টগ্রাম প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর জুলধা ১১ নম্বর মাতব্বর ঘাটে যাত্রী পারাপারে জনপ্রতি ভাড়া ২০ টাকা নির্ধারণ করেছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)। গত ১৪ এপ্রিল, পহেলা বৈশাখ থেকে কার্যকর হওয়া এ সিদ্ধান্তে বিপাকে পড়েছেন ঘাট-নির্ভর কয়েক হাজার যাত্রী। গত বছর এই রুটে ভাড়া ছিল ১৫ টাকা। এবার ৫ টাকা বৃদ্ধিতে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত যাত্রীদের মাঝে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।


চসিকের রাজস্ব বিভাগের এস্টেট শাখা ভাড়া বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়েছে নতুন ইজারার শর্ত অনুসারে। অথচ ঘাটে নেই পর্যাপ্ত ছাউনি, টয়লেট কিংবা বর্ষার জন্য নিরাপদ সরঞ্জাম। ফলে অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন—ভাড়া বাড়লো, কিন্তু যাত্রীসেবা কই?


যাত্রীদের কণ্ঠে প্রতিবাদ


প্রতিদিন এই ঘাট ব্যবহার করেন গার্মেন্টকর্মী মিনু আক্তার। তিনি বলেন, 'সকাল-সন্ধ্যা দুইবার যাতায়াত করতে হয়। ৫ টাকা করে বাড়তি খরচে মাস শেষে বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। ঘাটে কোনো সুবিধা নেই, অথচ ভাড়া বাড়ানো হলো।'


দিনমজুর মো. ইয়াছিন বলেন, 'দিনে তিনবার পার হই। এখন ভাড়া ২০ টাকা হলে মাসে খরচই বাড়বে ১৫০-২০০ টাকা। আমাদের মতো মানুষের জন্য এটা অনেক।'


অফিসগামী যুবক একরাম বলেন, 'ভাড়া বাড়লেও বেতন বাড়েনি। সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। সরকার কিংবা চসিক কারোই যেন মাথাব্যথা নেই।'


দূরত্ব বনাম খরচ: তুলনায় মাতব্বর ঘাট


কর্ণফুলী উপজেলার বাসিন্দা নুরুল আবছার বলেন, 'অভিয়মিত্র কিংবা ব্রিজঘাটে কম দূরত্বের জন্য ১৫ টাকা ভাড়া যৌক্তিক হলেও মাতব্বর ঘাট থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত নদীপথ দীর্ঘ ও প্রশস্ত। খরচ তুলনামূলক বেশি, ফলে সেখানে ২০ টাকা ভাড়া যুক্তিসঙ্গত হতে পারে। তবে যাত্রীসেবা নিশ্চিত করতেই হবে।'


তিনি আরও যোগ করেন, 'লাইফবোটের নিরাপত্তা, ছাউনি, পাবলিক টয়লেট এসব থাকলে কেউ ভাড়ায় আপত্তি করত না।'


ইজারার যুক্তি ও চসিকের অবস্থান


জুলধা লাইফবোট মাঝিদের সমিতির সদস্য সালেহ আহমেদ ওরফে লালু সওদাগর বলেন, 'আগে ঘাটে খাস কালেকশন হতো। এবার চসিক ইজারা দিয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে।'


ইজারাদারের পক্ষে মো. ফারুক বলেন, 'জ্বালানি তেল, যন্ত্রাংশ এবং শ্রমিক মজুরি বেড়েছে। সেই সঙ্গে ইজারার পরিমাণও অনেক বেশি। সবকিছু বিবেচনায় ২০ টাকা ভাড়া যৌক্তিক। তবে যাত্রীদের দাবি পেলে আমরা চসিককে স্মারকলিপি দেব পুনর্বিবেচনার জন্য।'


জানা গেছে, এবারে মাতব্বর ঘাটটি ভ্যাটসহ প্রায় ২ কোটি ২ লাখ টাকায় ইজারা দেওয়া হয়েছে, যেখানে গত বছর ছিল অনেক কম। ইজারাদার নেজাম উদ্দিন এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।


প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া


কর্ণফুলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাসুমা জান্নাত বর্তমানে প্রশিক্ষণে রয়েছেন বলে জানিয়েছেন ফোনে।


চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা এসএম সরওয়ার কামাল বলেন, 'ইজারার শর্ত অনুযায়ী জনপ্রতি ভাড়া ২০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে যাত্রীদের পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ পেলে আমরা বিষয়টি মেয়রের সঙ্গে আলোচনা করে পুনর্বিবেচনা করবো।'


মাতব্বর ঘাটের ভাড়া বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত চসিকের নীতিগত দিক থেকে যৌক্তিক হলেও মাঠপর্যায়ে জনগণের ওপর বাড়তি চাপ তৈরি করছে। সরকারের যেকোনো সেবার ক্ষেত্রে জনগণের অংশগ্রহণ, সুবিধা ও প্রভাব বিবেচনা করা জরুরি। ভাড়া বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে যাত্রীসেবাও যদি উন্নত করা না হয়, তাহলে সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ ও অবিশ্বাস আরও বাড়বে।


বিবার্তা/জাহেদ/এসএস

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com