'রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিট চালু হবে চলতি বছর'
প্রকাশ : ১৬ জুন ২০২৫, ০০:০২
'রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিট চালু হবে চলতি বছর'
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

চলতি বছরের মধ্যে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিট চালু হতে পারে বলে আশা প্রকাশ করেছেন ঢাকায় রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ডার খোজিন।


১৫ জুন, রবিবার রুশ দূতাবাসে রাশিয়া দিবসের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “এই বছরের শেষে কেন্দ্রের প্রথম ইউনিট চালু হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।”


অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান।


রুশ রাষ্ট্রদূত বলেন, “৮০ বছর আগে প্রথম পারমাণবিক শিল্প প্রতিষ্ঠা করেছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন। এটা দেশের বৈজ্ঞানিক অগ্রগতি ও মজবুত সার্বভৌমত্বের প্রতীকে পরিণত হয়েছে এবং গোটা জাতির অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিরাট ভূমিকা রেখেছে।


“এই সময়ে এসে রাশিয়া ও বাংলাদেশের মেধাবী প্রকৌশলী, নকশাকার এবং কারিগরি বিশেষজ্ঞরা রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ শেষ করতে কঠোর পরিশ্রম করছেন। এই বছরের শেষে কেন্দ্রের প্রথম ইউনিট চালু হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।”


অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান।


রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান রোসাটম রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজ করছে। ২০১৩ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাশিয়া সফরে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের বিষয়টি চূড়ান্ত করে দুই দেশের সরকার।


প্রকল্প বাস্তবায়নে ২০১৫ সালের ২৫ ডিসেম্বর রোসাটমের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান এতমস্ত্রয় এক্সপোর্টের সঙ্গে চুক্তি করে বাংলাদেশের পরমাণু শক্তি কমিশন। তখনকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন ২০১৭ সালের অক্টোবরে।


সে বছর নভেম্বরে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রথম ইউনিটের চুল্লি ও পানি শীতলকারী ডোমের কংক্রিট ঢালাই কাজ শুরু হয়। পরের বছর জুলাইয়ে শুরু হয় দ্বিতীয় চুল্লির নির্মাণ কাজ।


কাজ শুরুর ৬৮ মাসের মধ্যে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের মূল স্থাপনা নির্মাণ সম্পন্ন হওয়ার কথা ছিল।


সে অনুযায়ী, ২০২৩ সালের মাঝামাঝি সময়ে ১২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার প্রথম ইউনিটের বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে দেওয়ার সম্ভাবনার কথা বলা হয় সরকারের তরফে। আর পরের বছর সমান ক্ষমতার দ্বিতীয় ইউনিট চালু হওয়ার কথা বলা হয়েছিল।


প্রকল্পের কাজ এগিয়ে চলার মধ্যেই ২০২০ সালের প্রথম দিকে কোভিড-১৯ মহামারী শুরু হলে কয়েক মাসের জন্য কাজের অগ্রগতি থেমে যায়। প্রায় এক বছরের অচলাবস্থার পর ২০২১ সালে আবার কাজে স্বাভাবিক গতি ফেরে।


এরপর ২০২২ সালে রাশিয়া-ইউক্রেইন যুদ্ধ শুরু হলে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন রকমের নিষেধাজ্ঞার কারণেও রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ নানাভাবে বাধাগ্রস্ত হয়।


এক পর্যায়ে ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে কাজটি শেষ করার সময় ঠিক করা হয়। সে সময়ে প্রথম ইউনিটটিও চালু করার কথা বলা হয়েছিল।


কিন্তু গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে প্রকল্প পরিদর্শনে গিয়ে তৎকালীন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান ঘোষণা করেছিলেন, ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে প্রথম ইউনিট এবং ২০২৬ সালে দ্বিতীয় ইউনিট চালু হবে।


এর মধ্যে ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর প্রকল্পটির কার্যক্রম বিভিন্নভাবে বাধাগ্রস্ত হয়। এ সময় সঞ্চালন লাইন নির্মাণে যুক্ত ভারতীয় নাগরিকরা নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে চলে যায়। যদিও তারা পরে আবার কাজে যোগ দিয়েছেন।


এসব বাধা পেরিয়ে বাংলাদেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিটের আলো চলতি বছরের শেষ নাগাদ জ্বলে উঠতে পারে, এমন আশার কথা শোনালেন রুশ রাষ্ট্রদূত।


রাশিয়া ও বাংলাদেশের সম্পর্ক দৃঢ় ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে সামনে এগোচ্ছে বলে ওই অনুষ্ঠানে মন্তব্য করেছেন জ্বালানি উপদেষ্টা। জ্বালানি ও কৃষি খাতে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা আরও জোরদারেরও ইচ্ছা প্রকাশ করেন তিনি।


বাংলাদেশের সরকারি পর্যায়ের ব্যক্তিদের পাশাপাশি কূটনীতিক কোর, গণমাধ্যম, ব্যবসায়ী, শিক্ষক-গবেষক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব এবং রুশ নাগরিকদের নিয়ে ছিল সে আয়োজন।


রাশিয়ার ঐতিহ্যবাহী লোক সঙ্গীত পরিবেশনার সঙ্গে দেশটির ইতিহাস তুলে ধরা প্রদর্শনীও ছিল আয়োজনে।
বিবার্তা/এসএস

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com