
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের কথা মাথায় রেখে নতুন অর্থবছরের প্রথমার্ধের জন্য আগের মতই আঁটসাঁট মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক, তাতে নীতি সুদহার অপরিবর্তিত রেখে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা আরো কমিয়ে আনা হয়েছে।
২০২৫ সালের জুলাই-ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ের এ মুদ্রানীতিতে রেপো হার ১০ শতাংশই থাকছে। মূল্যস্ফীতি যতদিন ৭ শতাংশের নিচে না নামবে, ততদিন নীতি সুদহার কমবে না বলে গভর্নর আহসান এইচ মনসুর জানিয়েছেন।
রেপোর মাধ্যমে ব্যাংকগুলো এক দিনের জন্য টাকা ধার নেয়। একে বলা হয় ব্যাংকিং খাতের নীতি উপাদান (পলিসি টুলস)। এর সুদ হারকে বলা হয় নীতি সুদ হার (পলিসি রেট)। এর মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজারে তারল্য ও বিনিয়োগ নিয়ন্ত্রণ করে।
রেপোর সুদ বাড়লে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলোর তহবিল পাওয়ার খরচ আরও বাড়ে। তাতে ব্যাংক থেকে ব্যবসায়ীদের ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রেও সুদহার বেড়ে যায়।
এই হার অপারিবর্তিত রাখার মানে হল, বাজারে মুদ্রাপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণে রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আপাতত সুদহারের লাগাম শিথিল করছে না।
রাজধানীর মতিঝিলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সদর দপ্তরে বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে নিজের ‘আমলের’ দ্বিতীয় মুদ্রানীতি ঘোষণা করেন গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। মুদ্রানীতি পড়ে শোনান বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর হাবিবুর রহমান।
নতুন মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭ দশমিক ২০ শতাংশ। আগের মুদ্রানীতিতে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯ দশমিক ৮০ শতাংশ।
সরকারি খাতে ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২০ দশমিক ৪০ শতাংশ, যা আগের মুদ্রানীতিতে ছিল ১৭ দশমিক ৫০ শতাংশ। আর গত বছরের ডিসেম্বর শেষে ছিল ১৪ দশমিক ২ শতাংশ।
গভর্নর বলেন, “এ মুহুর্তে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান চ্যালেঞ্জ হচ্ছে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা। আশা করা যাচ্ছে সামনে মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনা যাবে। আগের থেকে মূল্যস্ফীতি কমেছে।”
নতুন মুদ্রানীতিতে স্ট্যান্ডিং ল্যান্ডিং ফ্যাসিলিটি (এসএলএফ) ১১ দশমিক ৫০ শতাংশ ও স্ট্যান্ডিং ডিপোজিট ফ্যাসিলিটি (এসডিএফ) ৮ শতাংশ রাখা হয়েছে।
মুদ্রানীতিতে বলা হয়েছে, ডলার বিনিময় হারকে স্থিতিশীল রাখতে এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ পুনর্গঠনে বাজারে হস্তক্ষেপ অব্যাহত রাখবে বাংলাদেশ ব্যাংক।
গভর্নর বলেন, "চালের দাম কেন বাড়ছে, এই মৌসুমে, এটা কিন্তু এক্সপেকটেড না। সরকার ৪ লাখ টন চাল আমদানির প্রক্রিয়ায় আছে। আমিও সরকারকে বলেছি আরো কিছু আমদানি বাড়িয়ে বাজারকে স্থিতিশীল রাখার জন্য। প্রয়োজন হলে ১৪ লাখ টন আমদানি করা হবে।"
তবে চালের দাম বেশি হওয়ায় কৃষকরা উপকৃত হচ্ছেন, তারা খুশি হচ্ছেন–এমন কথাও আহসান মনসুর বলেন।
তিনি বলেন, "এক্সপোর্টের কাঁচামাল রপ্তানি কিন্তু কমেনি। আগামী ২-৩ বছর যদি বেসরকারি বিনিয়োগ নাও হয়, তবুও আমাদের রপ্তানি বাড়বে। কারণ গার্মেন্টসগুলো তাদের ক্যাপাসিটির ম্যাক্সিমাম লেভেলে এখনো পৌছায়নি। বিনিয়োগ বৃদ্ধি করা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাজ নয়। লোনেবল ফান্ড বেশি হলেই বিনিয়োগ বাড়বে।"
ব্যালেন্স অব পেমেন্টে উদ্বৃত্ত থাকার কথা তুলে ধরে গভর্নর বলেন, ব্যাংক খাত থেকে ডলার কেনার কারণে প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা বাজারে ঢুকেছে। ফলে শেয়ারবাজারও ঘুরে দাঁড়াচ্ছে।
"ডিপোজিট যদি না বাড়ে, তাহলে প্রাইভেট সেক্টরে ক্রেডিট গ্রোথ হবে কীভাবে? নেট ফরেন অ্যাসেট বাড়তে শুরু করেছে। এটা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাজারে টাকার লিকুইডিটিও বাড়বে।”
বিবার্তা/এসএস
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]