
যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য উচ্চ শুল্ক বাড়ার আশঙ্কায় বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানিকারকদের ওপর নতুন করে মূল্য কমানোর চাপ সৃষ্টি করছে ইউরোপের ক্রেতারা। এ ছাড়া মার্কিন ক্রেতারাও নতুন অর্ডার দেওয়া কমিয়ে দিয়েছে। ফলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) দিকে বেশি ঝুঁকে পড়ছেন বাংলাদেশের রপ্তানিকারকরা। এটি ইউরোপের ক্রেতাদের দর কষাকষির সুযোগ তৈরি করে দিচ্ছে।
শিল্প সংশ্লিষ্টদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক অর্ডারের পরিমাণ আগের চেয়ে প্রায় ৫০ শতাংশ কমে গেছে। ফলে ঘাটতি পূরণে রপ্তানিকারকরা ইউরোপীয় বাজারের দিকে ঝুঁকলেও, সেখানে দাম কমানোর প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।
জায়ান্ট গ্রুপের পরিচালক এস.এম. মাজেদুর রহিম গণমাধ্যমকে বলেন, মার্কিন বাজারে অর্ডার কমে যাওয়ায় আমরা ইউরোপের দিকে ঝুঁকছি। কিন্তু ইউরোপীয় ক্রেতারা এই পরিস্থিতিকে সুযোগ হিসেবে দেখছে এবং মূল্য কমানোর চেষ্টা করছে। যুক্তরাষ্ট্র ৩১ জুলাই থেকে বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যে ৩৫ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করতে যাচ্ছে, যার ফলে মোট শুল্ক ৫০ দশমিক ৫ শতাংশে উন্নীত হবে।
ন্যাশনাল বোর্ড অফ রেভিনিউ (এনবিআর) এর তথ্য অনুযায়ী, গত অর্থবছরে ২,৩৭৭টি বাংলাদেশি সংস্থা যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করেছে। এর মধ্যে ৮০১টি সংস্থা তাদের মোট রপ্তানির ৫০ শতাংশের বেশি যুক্তরাষ্ট্রের উপর নির্ভরশীল, যা তাদের বিশেষভাবে ঝুঁকিতে ফেলেছে। সম্মিলিতভাবে, এই সংস্থাগুলো গত অর্থবছরে বিশ্বব্যাপী ৬ দশমিক ৬২ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে, যার মধ্যে ৫দশমিক ০৫ বিলিয়ন ডলার বা বাংলাদেশের মোট রপ্তানির ৫৮ শতাংশ ছিল যুক্তরাষ্ট্রে। বাংলাদেশ প্রতি বছর প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলার মূল্যের পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করে, যার মধ্যে রয়েছে পোশাক, চামড়া, প্লাস্টিক এবং কৃষি পণ্য।
ফতুল্লা অ্যাপারেলসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফজলে শামীম এহসান জানান, তার একজন ডাচ ক্রেতা, যিনি আগে প্রতি ইউনিট পোশাক ৩ ডলারে কিনতেন, এখন ট্রাম্প-যুগের শুল্ক নীতির কথা উল্লেখ করে ২৫-৩০ সেন্ট কম দামের প্রস্তাব দিয়েছেন। তিনি এই মূল্যে অর্ডার নিতে পারেননি, যার মোট মূল্য ছিল ৭৫০,০০০ ডলার। এই অর্ডার হাতছাড়া হওয়ায় কারখানা চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইউরোপীয় পোশাক ব্র্যান্ডের একজন কান্ট্রি ম্যানেজার বলেছেন, যদি শুল্কের বিষয়টি বাংলাদেশের পক্ষে সমাধান না হয়, তবে এটি বাংলাদেশে তাদের ব্যবসার সুযোগ কমিয়ে দিতে পারে। মার্কিন বাজার তাদের মোট বিক্রয়ের ১০ শতাংশেরও কম হলেও, বাংলাদেশের থেকে তাদের জন্য পণ্য উৎপাদন আর লাভজনক হবে না এবং তাদের বিকল্প উৎসের কথা ভাবতে হতে পারে। সাধারণত, একটি বিক্রেতা তৈরি করতে কমপক্ষে তিন বছর সময় লাগে।
বাংলাদেশের বৃহত্তম বহুজাতিক বায়িং হাউস পিডিএস গ্রুপের ব্যবসা উন্নয়ন প্রধানও নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, তাদের কিছু ইইউ গ্রাহক এখন নতুন অর্ডারে মূল্য কমানোর দাবি করছেন। ইইউ ক্রেতারা বৈশ্বিক বাজার পরিস্থিতি এবং বাংলাদেশি পোশাক শিল্পের বিদ্যমান সক্ষমতা সম্পর্কে অবগত হয়ে পরিস্থিতির সুযোগ নিচ্ছেন। বায়িং হাউসের কর্মকর্তারা আরও উল্লেখ করেছেন যে ভারত এবং দক্ষিণ কোরিয়ার মতো কিছু উদীয়মান অ-ঐতিহ্যবাহী বাজার থেকেও অর্ডার কমছে। এর কারণগুলির মধ্যে ভারতের অ-শুল্ক বাধা এবং দক্ষিণ কোরিয়ার স্থানীয় রাজনৈতিক ও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ অন্তর্ভুক্ত।
বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বাবু বলেন, যদি অতিরিক্ত ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়, তবে বাংলাদেশি রপ্তানিকারকরা ছাড় দিতে রাজি না হলে মার্কিন ক্রেতারা বিকল্প উৎস গন্তব্যে চলে যেতে পারে। তবে উদ্যোক্তারা যুক্তি দেন যে ৩৫ শতাংশ ছাড় দেওয়া ব্যবসা টিকিয়ে রাখা অত্যন্ত কঠিন করে তুলবে। যদি ভিয়েতনাম, ভারত এবং পাকিস্তানের মতো দেশগুলির তুলনায় বাংলাদেশ উচ্চ শুল্ক হারের মুখোমুখি হয়, তবে এটি আমাদের রপ্তানি খাতের জন্য ভালো হবে না।
বিবার্তা/এসএস
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]