শিরোনাম
সউদিকরণের নামে এসব কী হচ্ছে
প্রকাশ : ২৫ ডিসেম্বর ২০১৭, ১৯:৪৫
সউদিকরণের নামে এসব কী হচ্ছে
ড. মোহাম্মাদ বাসনাভি
প্রিন্ট অ-অ+

সউদি আরবে বেকারত্বের হার ১২.৮ শতাংশ, যার মানে বেকারের সংখ্যা আট লাখ। এই বিপূল বেকারত্ব দূর করতে সউদি আরবে অনেক চাকরিকে সউদিকরণ (অর্থাৎ শুধু সউদিরাই ওই চাকরি করতে পারবে) করা হয়েছে।


এদিকে সউদি আরবের জাতীয় পরিসংখ্যান কর্তৃপক্ষের ২০১৬ সালের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে প্রবাসী শ্রমিকের সংখ্যা এক কোটি ১০ লাখে পৌঁছেছে। একদিকে এতো বিপুল বেকারত্ব অন্যদিকে এতো প্রবাসী শ্রমিক - ব্যাপারটা অদ্ভুতই বটে! অন্যদকে শ্রম মন্ত্রণালয় আবার চালু করেছে নিতাক্বাত কর্মসূচি। এর অর্থ হলো, কোনো কম্পানিকে তার মোট জনবলের একটা নির্দিষ্ট সংখ্যা সউদি নাগরিক দিয়েই পূরণ করতে হবে। যেসব কম্পানি এটা মান্য করবে, সরকার তাদের বিভিন্ন সুবিধা দেবে।


কিন্তু সময় যতোই গড়াতে লাগলো, ততোই দেখা যেতে থাকলো, কম্পানিগুলো নিতাক্বাত কর্মসূচিকে চমৎকারভাবে পাশ কাটানো শিখে গেছে। তারা করলো কী, কম্পানিতে কিছু সউদিকে ''চাকরি'' দিল। তাদের বেতন কম, কাজ আরো কম, মানে মাসশেষে বেতন নেয়া ছাড়া অফিসে তাদের কোনো কাজই নেই। এককথায় তাদের চাকরিটাই একটা ভুয়া চাকরি। এ চাকরিতে তাদের কোনো কাজ করতে করতে হয় না, এমনকি অফিসেও আসতে হয় না।


বিশ্বব্যাংক তাই নিতাক্বাত কর্মসূচির তীব্র সমালোচনা করে বলেছে, এ কর্মসূচি কম্পানিগুলোর জন্য কর্মী বাছাইয়ের কোনো সুযোগ রাখেনি, বরং সউদিদের জন্য ভুয়া চাকরির সুযোগ এনে দিয়েছে। কেবল সউদিকরণের শর্ত পূরণ করতেই বিভিন্ন কম্পানি এসব ভুয়া নিয়োগ দিতে বাধ্য হয়। বিশ্বব্যাঙ্ক তাদের এক প্রতিবেদনে বলেছে, সত্যিকার চাকরি পেয়েছে মাত্র ১০% সউদি। অন্যকথায়, বেসরকারি খাতের দু' লাখ চাকরির মধ্যে মাত্র হাজার বিশেক আসল চাকরি পাচ্ছে সউদিরা। বাকিগুলো ভুয়া চাকরি।


সাবেক শ্রমমন্ত্রী মুফাররিজ আল-হাক্ববানির ভাষায় বলতে হয়, ''অনেক সেক্টরে সউদিকরণে আমরা ব্যর্থ হয়েছি - একথা স্বীকার করতেই হবে।'' কেন এ ব্যর্থতা জানাতে গিয়ে তিনি সরকারি বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে ওসব খাতের অংশীদারিত্ব ও সহযোগিতার অভাবকেই দায়ী করেন। যেমন, শ্রম মন্ত্রণালয় ১০ বছর আগেই ট্যাক্সিক্যাব খাতকে সউদিকরণের সিদ্ধান্ত দিয়েছিল, কিন্তু আজ অবধি খাতটি সম্পূর্ণ সউদিকরণ হয়নি। সেটা হলে এখানেই ৬০ হাজার সউদির কর্মসংস্থান হতো।


স্বাস্থ্য খাতে সউদিকরণের কথাই ধরা যাক। সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী খালিদ আল-ফালিহই বলে গেছেন যে, এ খাতটি সউদিকরণে লম্বা সময় লাগবে। দেখা গেছে, সরকারি স্বাস্থ্য খাতে সউদিকরণ যখন ৬০ শতাংশে উন্নীত হয়েছে, বেসরকারি খাতে তার হার মাত্র আট শতাংশ। সউদি ডাক্তারদের ২৯ শতাংশ কাজ করেন বেসরকারি স্বাস্থ্য খাতে।


সউদিকরণের এ দুর্দশার কারণটি নিহিত রয়েছে কিছু-কিছু কম্পানির মনোবৃত্তিতে, যা ভুয়া সউদিকরণের দিকে গড়িয়েছে। আমাদের অবশ্যই এ প্রবণতাকে প্রতিরোধ করতে হবে। সেজন্য প্রথমেই যা করতে হবে তা হলো এ কথা স্বীকার অরে নেয়া যে, আমাদের একটি সমস্যা আছে এবং সেটি সমাধানে চাই কঠোর ব্যবস্থা।


নিয়োগকারীরা বলেন, সউদি তরুণ-তরুণীরা অলস, তারা কাজ করতে চায় না। কম বেতনের চাকরিতে সামাজিক মর্যাদা রক্ষা হয় না, তাই এসব চাকরি করার চাইতে তারা ঘরে বসে থাকাই ভালো মনে করে।


বোঝাই যাচ্ছে, সউদিকরণ করে, বিভিন্ন কম্পানিকে সউদিদের নিয়োগ দিতে বাধ্য করে বেকার সমস্যার সমাধান করা যাবে না। এ ক্ষেত্রে আমাদের প্রথম যে কাজটি করতে হবে তা হলো, কাজ নিয়ে সউদি তরুণ-তরুণীদের মনে যে বদ্ধমূল ধারণাটি রয়েছে তা ভেঙ্গে দেয়া। তাদের মধ্যে পেশাগত দক্ষতা সৃষ্টি ও বৃদ্ধিতে উপযুক্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা। তখন এসব প্রশিক্ষিত, দক্ষ ও অভিজ্ঞ কর্মীকে নিয়োগ দিতে যে কোনো কম্পানিই আগ্রহ দেখাবে। এবং কেবল তখনই আমরা উন্নত দেশগুলোর সমকক্ষ অর্থনৈতিক অগ্রগতি অর্জনে সমর্থ হবো।


আমাদের এ মুহূর্তের কর্তব্য হলো, ভুয়া সউদিকরণ সর্বব্যাপী হওয়ার এবং নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার আগেই এর মূলোৎপাটন করা। আমরা যদি একে এখনই শেষ করে ফেলতে না পারি তাহলে এটি এক সময় আমাদের সামনে অনতিক্রম্য বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। সৃষ্টি করতে পারে এমন একটি প্রজন্ম, যারা চাকরি খুঁজতে বা করতে আগ্রহী নয়, বরং কোনো কাজ না করেই বেতন পেতে চায়। আজকের এ সমস্যার একটি সৃজনশীল সমাধানই আমাদের দরকার।


সউদি গেজেট থেকে অনুবাদ : হুমায়ুন সাদেক চৌধুরী


বিবার্তা/হুমায়ুন/কাফী

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com